জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ভুয়া বিলে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১২ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরিপত্র সৃজন (বিল) এবং তা খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নগরীর আন্দরকিল্লার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মোহাম্মদ ফুরকানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মোহাম্মদ ফুরকান চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুঁইছড়ি গ্রামের মৃত মাস্টার মাহমুদুর রহমানের ছেলে। অন্য তিন আসামি হলেন, ঢাকার মিরপুরের মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোপালগঞ্জের বাসিন্দা মুন্সী ফররুখ হোসাইন মিন্টু, তার ভাই মুন্সি সাজ্জাদ হোসেন ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক স্টাফ রংপুরের বাসিন্দা মুকিত মন্ডল। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম১ এর সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক একই কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আসামিরা দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একটি ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। মামলা তদন্তে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মামলার এজহারে বলা হয়, ২০১৩১৪ অর্থ বছরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জন্য এমআরআই ইক্যুইপমেন্ট (আইসিউ ভেন্টিলেটর, আইসিউ বেড ও কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর উইথ আইভিপি এবং ক্যাপনোগ্রাফি) ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৬টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ নির্বাচিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মেসার্স আহমেদ এন্টারপ্রাইজ ৮টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর, ৮টি আইসিইউ বেড এবং ১টি কার্ডিয়াক পেশেন্ট মনিটর বাবদ মোট ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে।

সরবরাহকৃত এসব যন্ত্রপাতিতে ত্রুটি থাকার কারণে তখন তা গ্রহণ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একই সাথে অর্থও পরিশোধ করেনি। এজাহারে বলা হয়, মালামাল ত্রুটি ও টেন্ডার প্রক্রিয়ার অনিয়ম নিয়ে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দুদক একটি মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্তকাজ সমাপ্ত করে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটি যন্ত্রপাতিসমূহ হাসপাতালে রেখে চলে যায়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিলের অর্থ বরাদ্দ প্রদান করলেও ব্যয় মঞ্জুরী প্রদান করা হয়নি। ব্যয় মঞ্জুরীপত্র প্রদান না করায় জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি ব্যয় মঞ্জুরীপত্র চেয়ে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি দেন। তারপরও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ব্যয় মঞ্জুরীপত্র প্রদান করা হয়নি। ইতোমধ্যে একই বছরের ২৬ জুন মুন্সি ফররুখের ভাই মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন তার হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল নম্বর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত চিফ একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার, সেগুনবাগিচা বরাবর প্রেরিত একটি ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ ফুরকানের মোবাইল নম্বরে পাঠান। মোহাম্মদ ফুরকান ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্রটি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ ফজলে রাব্বির মোবাইলে ফরোয়ার্ড করে দেন। এছাড়া ২০২২ সালের ২৮ জুন আহমেদ এন্টারপ্রাইজের অফিস সহকারী মুকিত মন্ডল জেনারেল হাসপাতালে আসেন। মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মুন্সী ফররুখ, তার ভাই সাজ্জাদ, অফিস সহকারী মুকিত মন্ডল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফুরকান পরস্পর যোগসাজেশে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরী সৃজন করে ডা. শেখ ফজলে রাব্বির একক স্বাক্ষরে ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার একটি বিল প্রস্তুত করেন। বিলটি পাশ করার জন্য একই দিনে চট্টগ্রামের বিভাগী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস বরাবর পাঠানো হয়। বিলটি অনুস্বাক্ষর (হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষর বিহীন/বিল প্রস্তুতকারীর স্বাক্ষরবিহীন) বিহীন ছিল। তবে বিলের অফিস কপি ও বিল রেজিস্ট্রারে তার স্বাক্ষর রয়েছে। হিসাবরক্ষণ অফিসে বিল ছাড়করণের সময়ও তিনি হিসাবরক্ষণ অফিসে অবস্থান করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক বিলটি যাচাইবাছাইকালে অর্থ বরাদ্দ পত্রের পৃষ্ঠাঙ্কন না থাকা, বরাদ্দ পত্রটি যথাযথ প্রক্রিয়ায় না আসা অর্থাৎ পত্রটি চট্টগ্রামের হিসাবরক্ষণ অফিস বরাবর না হয়ে হিসাবরক্ষণ অফিস, সেগুনবাগিচা বরাবর হওয়াসহ সার্বিক পর্যালোচনায় জিও ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি এবং বিলটি বাতিলপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়। যার ফলে উক্ত ৫ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক উত্তোলন করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। আহমেদ এন্টারপ্রাইজের মালিক ফররুখের নির্দেশে তার ভাই সাজ্জাদ হোসেন ও অফিস সহায়ক মুকিত মন্ডল পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া ব্যয় মঞ্জুরীপত্র সৃজন করেন। অথচ উক্ত পত্রটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিল করার কথা নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ১৯০ ইউনিয়নে কার্যক্রমে স্থবিরতা
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয়করণের দাবিতে আনসার সদস্যদের বিক্ষোভ