জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করে কোনো দল রাজনীতি করতে পারবে না : সালাহউদ্দিন

| শুক্রবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করে কোনো রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে রাজনীতি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, বিএনপি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে না বলে যে সন্দহ অনেকের মনে রয়েছে, তাও অমূলক। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছে, প্রতিশ্রুতি যে বাস্তবায়ন হবে, তার গ্যারান্টি কী? প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্যেই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার সমগ্র পলিটিক্যাল পার্টিগুলো, শুধু ফ্যাসিবাদ বাদে, সরকার, জনগণসবাই মাসের পর মাস পরিশ্রম করতে করতে এখন এক বছর পার হয়ে গেছে এই ডকুমেন্টটা প্রণয়ন করতে; সেটা সমগ্র জাতি দেখেছে। আমরা আমাদের প্রস্তাব দিয়েছি, প্রত্যেক পার্টি প্রস্তাব দিয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের দিস্তায় দিস্তায় কাগজ আমরা পেয়েছি, আমরাও দিয়েছি, এগুলো ফ্রেম হচ্ছে, একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে ফাইনালি সেটা এমবেড হচ্ছে.. সেটা সমগ্র জাতি দেখবে। খবর বিডিনিউজের।

সই হওয়ার পর জুলাই সনদ জাতির সামনে একটি দলিল হিসেবে থাকবে মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, এই ডকুমেন্টটা আর্কাইভে থাকবে, এই ডকুমেন্টটা বাস্তবায়ন না করে কোনো পলিটিক্যাল পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতি করতে পারবে? আমি বিশ্বাস করি না। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অনেকে বলে যে আপনারা বাস্তবায়ন করবেন না। আমি বলি যে, বিএনপি যে সরকার গঠন করবে, এটা কেউ শপথ করে বলেছে? আমাদেরকে কেন দায়ী করেন? আমি বলব, যারা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন সামনে, শব্দটা ওইভাবে হওয়া উচিত, তারা সবাই মোরালি অবলিগেটেড থাকবে এটা বাস্তবায়নের জন্য এই সনদের মধ্য দিয়ে।

সনদের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে দলটির এই নেতা বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলতে পারি, আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি এই সরকার গঠিত হওয়ার আরো এক দেড় বছর আগে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো আমরা গ্রহণ করছি, তার অধিকাংশইআমি সেন্ট পারসেন্ট বলব না, এই ৩১ দফার অন্তর্ভুক্ত। কিছু কিছু নতুন প্রস্তাব আছে, কিন্তু ৩১ দফাতে আরো কিছু সংস্কার প্রস্তাব আছে যেগুলো আমাদেরকে করতে হবে যদি জনগণ আমাদেরকে ম্যান্ডেট দেয়।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, আমি সংস্কার প্রস্তাব দেখেছিলাম ৮২৬টা, তার মধ্যে মাত্র ৫১টা বাদে বাকি সব সংস্কার প্রস্তাব আমরা একমত হয়েছি, ১১৫টা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আমরা ভিন্নমত অথবা মন্তব্যসহ একমত হয়েছি। এর বাইরে হচ্ছে, ১৯টা সংবিধান সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কেউ না চাইলেও এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট হিসেবে, কারণ আমরা এই ৩১ দফার সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিএটা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটা নতুন গণতান্ত্রিক শক্তিশালী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।

নাগরিক কোয়ালিশন এর উদ্যোগে সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রত্যাশা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই গোল টেবিল আলোচনা হয়।

জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপিই তুলেছিল জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ধাপে ধাপে বাড়িয়ে তা ৩৩ শতাংশ করা হবে। আমাদের প্রস্তাব নারী আসনটা এইবার (৫০ থেকে বাড়িয়ে) একশ আসনে উন্নীত করা। এখন গ্র্যাজুয়ালি না গেলে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামত নিতে হবে, তাদেরকেও একসাথে নিতে হবে এবং আমাদের সমাজে, মানে রাষ্ট্রে নারী সমাজের অগ্রগতির বিষয়টাও আমাদেরকে নজরে রাখতে হবে।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, সংবিধান সংশোধনের যে প্রসঙ্গটা, (কয়েকটি দল দাবি করছে) এখনই বাস্তবায়ন হতে হবে। সেটার কোনো পদ্ধতি আছে কিনা আমার জানা নাই। কিন্তু সংবিধানের সংশোধন বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য সেই কমিটমেন্টটা যাতে আমরা দৃঢ় করতে পারি সেজন্য কোনো পদ্ধতি থাকতে পারে। তিনি বলেন, আজকেই যদি সেই ১৯টা বা ২০টা বিষয়, যেগুলো সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত, সে বিষয়ে কার্যকর হয়ে গেছে বলে যদি ধরে নেওয়া হয়, সেরকম কোনো ডকুমেন্ট হয়, সেই ডকুমেন্টটা নিয়ে যদি তারপর দিন যে কোনো নাগরিক কোর্টে যায়, সিটিজেন যদি জিজ্ঞেস করে বাংলাদেশের সংবিধান কয়টা? তখন কোর্ট বলবে যে সংবিধান সংশোধনে কে করল? কোন ফোরাম করল? কার এই এখতিয়ার আছে? তাহলে আমরা কোন সংবিধান নিয়ে বর্তমানে বিচারকার্য করছি? আমাদের এই বিদ্যমান সংবিধান কি বাতিল করা হয়েছে বা স্থগিত করা হয়েছে? হয়নি। সুতরাং কন্ট্রাডিক্টরি কোনো বিষয়ে যাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জামায়াতে ইসলামীর শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাসনাত আবদুল্লাহসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনা সভায় অংশ নেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণপূর্তের আরও ২ জন বাধ্যতামূলক অবসরে
পরবর্তী নিবন্ধবিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা