জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন অব্যাহত থাকবে : ফারুক ই আজম

| মঙ্গলবার , ২২ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জুলাইয়ে আহত ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং তাদের ভাতা প্রদান নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। উপদেষ্টা জানান, চাকরিতে জুলাই যোদ্ধাদের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট কোটা না থাকলেও তারা যে যেভাবে পুনর্বাসিত হতে চান যেমন চাকরি তার যোগ্যতা অনুযায়ী অথবা ব্যবসা তার সামর্থ্য অনুযায়ী এর সবকিছুতেই সরকার সহায়তা করবে। উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসন এবং সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে ছাত্রজনতার এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তদানীন্তন ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং একই বছরের ৮ আগস্ট বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। ছাত্রজনতার এই অভ্যুত্থান সরকারিভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নামে অভিহিত হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ এবং যাবতীয় বিষয়াদির প্রশাসনিক দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করা হয়। খবর বাসসের। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চূড়ান্তকরণ, আহতদের চিকিৎসা ব্যয় এবং তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসন প্রদানের উদ্দেশ্যে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের নিমিত্ত ২৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠন করা হয়। উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুর্নবাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ৮৩৪ জন এবং ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে আরও ১০ জন সর্বমোট ৮৪৪ জন শহীদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আহত হওয়ার ধরন অনুসারে জুলাই যোদ্ধাগণকে তিনটি শ্রেণিভুক্ত করে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ৪৯৩ জন জুলাই যোদ্ধাকে ‘ক’ শ্রেণিতে, ৯০০৮ জনকে ‘খ’ শ্রেণিতে, ৪ এবং ৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে ১০৬৪২ জনকে ‘গ’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সমপ্রতি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ‘ক’ শ্রেণির ১১৪ জন, ‘খ’ শ্রেণির ২১৩ জন এবং ‘গ’ শ্রেণির ১৪৪২ জন সর্বমোট ১৭৬৯ জনের তালিকা পাওয়া গেছে যা যাচাইবাছাই শেষে শীঘ্রই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। অনুদান (শহীদ পরিবার) : বিধিমালা অনুযায়ী সরকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের আকারে এককালীন ৩০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করবে। ২০২৪২০২৫ অর্থ বছরে ৭৭২টি শহীদ পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে (স্বামী বা স্ত্রী, ঔরসজাত বা গর্ভজাত সন্তান/মাতা ও পিতা) উত্তরাধিকার আইন অনুসারে ১০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র মোট ৭৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৭২টি শহীদ পরিবারের মধ্যে পারিবারিক ও ওয়ারিশগত জটিলতা নিরসন করে সঞ্চয়পত্র প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শহীদ পরিবারের এককালীন অনুদানের অবশিষ্ট ২০ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র ২০২৫২০২৬ অর্থ বছরের জুলাই মাস থেকে প্রদান করা হবে। অনুদান (জুলাই যোদ্ধা) : বিধিমালা অনুযায়ী ‘ক’ শ্রেণির জুলাই যোদ্ধাগণ এককালীন নগদ ৫ লক্ষ টাকা অনুদান পাবে, যার ২ লক্ষ টাকা করে সর্বমোট ৯ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। ‘খ’ শ্রেণির জুলাই যোদ্ধাগণ এককালীন নগদ ৩ লক্ষ টাকা করে অনুদান পাবেন, যার ১ লক্ষ টাকা করে মোট ৯ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। ‘গ’ শ্রেণির জুলাই যোদ্ধাগণ এককালীন নগদ ১লক্ষ টাকা অনুদান পাবেন, যার ১ লক্ষ টাকা করে মোট ১০৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। এককালীন অনুদান আকারে সরকার এ পর্যন্ত ২শ ২ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা প্রদান করেছে। ‘ক’ শ্রেণীর অনুদানের অবশিষ্ট ৩ লক্ষ টাকা, খ শ্রেণীর অনুদানের অবশিষ্ট ২ লক্ষ টাকা ২০২৫২০২৬ অর্থ বছরের জুলাই মাসে প্রদান করা হবে। মাসিক ভাতা (শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধা) : বিধিমালা অনুযায়ী প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘ক’ শ্রেণীর জুলাই যোদ্ধাগণ ২০ হাজার টাকা করে, ‘খ’ শ্রেণীর জুলাই যোদ্ধাগণ ১৫ হাজার টাকা, ‘গ’ শ্রেণীর জুলাই যোদ্ধাগণ ১০ হাজার টাকা করে মাসিক ভাতা পাবেন। শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাগণের ভাতা বাবদ সরকার প্রতি মাসে ১৪ কোটি ৬৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করবে। আহতদের চিকিৎসা : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুসারে ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে অদ্যাবধি ৭৫ জুলাইযোদ্ধাকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং রাশিয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৪৬ জন জুলাই যোদ্ধা চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। আরও ৩২ জুলাই যোদ্ধা উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে বিদেশে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান আছে। উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার এ যাবত ৭৮ কোটি ৫২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকা ব্যয় করেছে। ২০২৪২০২৫ অর্থ বছরে আহত জুলাই যোদ্ধাদের বিদেশে চিকিৎসা, শহীদ পরিবারের অনুকূলে পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং আহতদের অনুকূলে এককালীন অনুদান বাবদ সর্বমোট ২৫৯,৬৮,০৪,২১২ (দুইশত ঊনষাট কোটি আটষটি লক্ষ চার হাজার দুইশত বারো) টাকা ব্যয় করা হয়েছে। পুনর্বাসন : বিধিমালা অনুযায়ী শহিদ পরিবারের সদস্য, আহত ব্যক্তির কর্মসংস্থানের জন্য সুযোগসুবিধা সৃষ্টি এবং তাঁদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ভিত্তিক উপার্জনমুখী কাজের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শহীদ পরিবার এবং আহত জুলাই যোদ্ধাদের ভাতা কার্যক্রম অনলাইনে প্রদান এবং সমৃদ্ধ তথ্য ভাণ্ডার তৈরির লক্ষ্যে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) তৈরির কার্যক্রম চলছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এ সময় জানান, যে সকল পরিবারের ভাতা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী সেগুলো সমাধান করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২০২৬ সালের হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু ২৭ জুলাই
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে ৪ আসামি গ্রেফতার