পৃথিবীতে আজ মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি, ইহুদীদের সংখ্যা মাত্র ১ কোটি ২০ লক্ষ অথচ আজ ২০০ কোটি মুসলমানরা ইহুদীদের কাছে অসহায়। ইহুদী নামক এ অসভ্য জাতিটি জন্ম থেকেই যাযাবরের মতো জীবন যাপন করে আসছে অথচ তারা আজ পৃথিবীর শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়েছে। কোন কালেই তারা মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো কাজ করেনি অথচ তাদের সাথে রয়েছে মধ্য প্রাচ্যের অধিকাংশ মুসলিম শাসকদের মিত্রতা ও ঘনিষ্ঠতা। তাদের কারণেই বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দুরবস্থা। মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ জালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না। (আল কুরআন, ৫:৫১)
ইহুদী, খৃষ্টানরা কখনো মুসলমানদের কল্যাণকামী ছিলনা: ইহুদীরা রক্ত পিপাসু। তাদের নারকীয় বর্বরতা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তাদের পৈশাচিক নির্যাতনে ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমি আজ রক্তাক্ত। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে তাদের কুপ্রবৃত্তি ও অনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সতর্ক করেছেন। তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহর সতর্কবানী ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার কারণেই মুসলমানরা আজ নির্যাতিত, নিষ্পেষিত নিগৃহীত লাঞ্চিত বঞ্চিত ও পদদলিত। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “ইহুদী ও খৃষ্টানরা কখনো আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবেনা যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করবেন। আপনি বলুন আল্লাহর হিদায়তই প্রকৃত হিদায়ত। (আল কুরআন, ২:১২০)
নবীজির শান–মান ও সুমহান মর্যাদা গোপন করা ছিল ইহুদীদের চরিত্র: ইহুদীরা ইসলামের সত্যতা, নুরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্ব ও গুণাবলী সম্পর্কে ভালোভাবেই অবগত ছিল কিন্তু তারা তাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব হারানোর ভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুয়ত ও রিসালতের সত্যতাকে গোপন করত: এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত তাফসীরকার আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ🙂 বর্ণনা করেন, ইহুদীরা তাদের তাওরাত কিতাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুয়ত ও রিসালাতের সাক্ষ্য বিষয়ক বর্ণনা সমূহ গোপন করতো, যেন তাদের নেতৃত্ব ছুটে না যায়। তাদের ভয় হতো যদি তারা রাসূলুল্লাহর শান মান প্রকাশ করে লোকেরা রাসূলুল্লাহর অনুসারী হয়ে যাবে এবং তাদেরকে বয়কট করবে। (ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আজিম, খন্ড:১, পৃ: ৪৮৩)
এ জাতির সত্য গোপনকারী আলিমগণ ইহুদী আলিমদের সাদৃশ্য: আলিম সমাজ দ্বীনের ধারক বাহক। কুরআন ও সুন্নাহর শাশ্বত বিধানকে সমুন্নত রাখার প্রত্যয়ে ইসলামের স্বার্থে দ্বীনের কল্যাণে যারা সত্যকে সত্য বলবে মিথ্যাকে মিথ্যা বলবে সত্যকে যারা কখনো গোপন করেনা, দুনিয়াবি লোভে ও স্বার্থে যারা সত্যকে গোপন করেনা সর্বাবস্থায় সত্যের উপর অটল অবিচল থাকে তারাই সত্যিকার আলেমেদ্বীন। সভ্যতা সংস্কৃতি ও বিজাতীয় রীতি নীতির যারা অনুকরণ করবে তারা পথ ভ্রষ্ট সম্প্রদায়, হযরত সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ এ জাতীয় ইসলাম বিকৃতিকারী বিপথগামী আলেমদের ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী বুজুর্গ মনীষীগণ বলেছেন যেসব আলেম বিনষ্ট হয়েছে ইহুদী আলেমদের সাথে তাদের সাদৃশ্য রয়েছে। যে সব আবিদ বিনষ্ট হয়েছে তাদের সাথে খ্রিস্টান আবিদদের সাদৃশ্য রয়েছে। (বুখারী হাদীস: ৬৮৮৯)
মুসলিম উম্মাহর এমন নাজুক সন্ধিক্ষণে আলেম নামে এমন এক শ্রেণির জালিমদেরকে দেখা যায় যারা নির্লজ্জভাবে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলের দালালীতে লিপ্ত। এদের পরিচয় এরা আলিমে “সু”দুনিয়ালোভী আলেম। এরা সুযোগ সন্ধানী যখন যেমন, তখন তেমন। সত্য কথা বলা থেকে নীরবতা পালনকারী বোবা শয়তান।
ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ঈমানী দায়িত্ব: ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমিতে রয়েছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের সদস্য রাষ্ট্র ফিলিস্তিন। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের বুকের উপর জবর দখল করে বসে আছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল। সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইল সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জবরদস্তি করে প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিন ভূখন্ডে আগ্রাসন চালিয়ে দেশটি অবৈধভাবে তার সীমারেখা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। শুধু তা নয়, ইসরাইলী ইহুদীরা বিগত ৭ অক্টোবর থেকে অদ্যবধি ফিলিস্তিনে বর্বরোচিত গণহত্যা চালাচ্ছে। বিগত ১৮ মাসে ৬০ হাজারের অধিক শিশু নারী বৃদ্ধকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, কয়েক লক্ষ আহত ও পুঙ্গত্ব বরণ করে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনি মুসলমানরা নিজেদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত। ফিলিস্তিনের বৃহত্তম শহর গাজা ভূখন্ড বর্তমানে প্রায় মানব শূন্য, হাজার হাজার ঘরবাড়ী দোকান পাঠ দালান কোটা বিধ্বস্ত। মহান আল্লাহর অসংখ্য অফুরন্ত নিয়ামতের ভান্ডার নান্দনিক অপূর্ব গাজা শহরের প্রতিটি জনপদ আজ রক্তাক্ত বিপর্যস্ত। খোদা প্রদত্ত নিয়ামতরাজির প্রাচুর্য রয়েছে এ পূণ্যময় শহরে। বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমানের ঈমান ও ইসলামের গৌরবময় নিদর্শন আল কুদস ভালোবাসার প্রতীক, বায়তুল মুকাদ্দাস আজ ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত। এ শহরে রয়েছে বিশ্বে রপ্তানীযোগ্য অসংখ্য প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য, জায়তুনের তেল ছোটো আঞ্জির, খুরনুর, মুনাক্কা বিভিন্ন বৈচিত্রময় বস্ত্র, কাপড়ের সমাহার সাবান সেব পনির আনার আনারস সুই শ্বেত ও মর্মর পাথর ইত্যাদি নানা প্রজাতির রপ্তানি পণ্য মুসলিম শাষনামল থেকেই ফিলিস্তিনকে বিশ্বের মাঝে অনন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত করেছিল। আজ মুসলিম উম্মাহ ইসরাঈলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনের মুজলুম মুসলমানদের সমর্থনে ঐক্য ও সংহতির আন্দোলন জোরদার হচ্ছে, ইসরাইলী গণহত্যার প্রতিবাদে প্রতিনিয়ত তীব্র নিন্দা ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানো আজ সময়ের অনিবার্য দাবী।
হাদীসের আলোকে অন্যায়ের প্রতিরোধ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো অন্যায় কর্ম হতে দেখবে সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা (শক্তি প্রয়োগ করে) পরিবর্তন করে দেয়। যদি সে তা করতে অক্ষম হয়, তবে সে মুখ দ্বারা তার প্রতিবাদ করবে, যদি সে তাও করতে সক্ষম না হয় তবে অন্তর দ্বারা ঘৃনা করবে এটা ঈমানের দুর্বলতম স্তর। (মুসলিম)
ইহুদীরা নয়, “ফিলিস্তিনিরাই তাদের ভূখন্ডের প্রকৃত মালিক”
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাষনামলেই ৬৩৬ ও ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে স্বাভাবিক ভাবে ফিলিস্তিন ভূখন্ড মুসলিম শাষনের অধীনে আসে। এখানকার বাসিন্দারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ফিলিস্তিন গোটা বিশ্বের মুসলমানদের ঈমানী চেতনার বাতিঘর। জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম (আ.)’র আবাসভূমি, মুসলমানদের প্রথম কিবলা, ইমামুল আম্বিয়া সৈয়্যদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মি’রাজ গমনের স্মৃতি বিজড়িত পুণ্যময় স্থান। অসংখ্য নবী রাসূলগণের ঘাঁটি। এ সেই পবিত্র ভূমি যেখানে হযরত মরিয়ম (আ.) এর গর্ভে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন, তাঁর কুদরতের নিদর্শন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে। তাগুতি শক্তি আমেরিকা, ইসরাইল ও ভারত একজোট হয়ে মুসলিম নির্মুল অভিযানে নেমেছে ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের আছে ৫০ লাখ সৈন্য, আছে ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধ বিমান, স্যাটেলাইট, গোয়েন্দা বাহিনী, আধুনিক প্রযূক্তি। এমনকি পারমাণবিক শক্তি। জাতিসংঘ, ওআইসি, আরবলীগ, বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা গুলো নিরব নির্বিকার। ফিলিস্তিনবাসীর সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। ইহুদীবাদের জারজ সন্তানরা আনন্দ উল্লাসে ফিলিস্তিনকে মুসলিম শূন্য করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।
নবীজির ভবিষ্যৎবাণী ইহুদী জাতির পতন অনিবার্য: আজকের দুনিয়ায় ইহুদিরা বেপরওয়াভাবে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। হাদীসের আলোকে তাদের অপকর্মের করুণ পরিণত অনিবার্য। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন কিয়ামত সংঘটিত হবেনা। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে ইহুদীদের যুদ্ধ হবেনা, মুসলমানরা ইহুদীদেরকে হত্যা করবে এমনকি কোন ইহুদী পাথর বা গাছের আড়ালে পলায়ন করলে গাছ বলে দিবে এইতো আমার পিছনে ইহুদী লুকিয়ে আছে তুমি এসো তাকে হত্যা কর। তবে গারকদ নামক বৃক্ষটি তা বলবেনা। কেননা তা ইহুদীদের বৃক্ষ। (মুসলিম, হাদীস: ২৯২২)
আসুন! মুসলিম উম্মাহর এই নাজুক সন্ধিক্ষণে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের সমর্থনে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলি। মজলুম মুসলমানদের রক্ষার্থে সর্বাত্নক সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন। আল্লাহ সহায় হোন।
লেখক : মাদরাসা–এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), বন্দর, চট্টগ্রাম, খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।
মুহাম্মদ আবুল কালাম কাদেরী
আমির ভান্ডার, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কেউ যদি জোহরের ফরজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাত আদায় করতে না পারেন তার করণীয় কী? এ সম্পর্কে জানালে উপকৃত হব।
প্রশ্নের উত্তর: জোহরের চার রাকাত ফরজের পূর্বে চার রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ কেউ যদি পড়তে না পারেন তিনি ফরজ নামায আদায়ের পর চার রাকাত সুন্নাত আদায় করে নিবেন। গ্রহণযোগ্য মতানুসারে ফরজ আদায়ের পরের দুই রাকাত সুন্নাত আদায় করার পর পূর্বের চার রাকাত সুন্নাত আদায় করা বাঞ্চনীয়। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো তখনও জোহরের সময় অবশিষ্ট থাকতে হবে। (ফতোওয়ায়ে রজভীয়া, ৫ম খন্ড, পৃ: ১৪৮)
জুমার পূর্বের সুন্নাত বাদ পড়ে গেলে ফরজ আদায়ের পর পূর্বের সুন্নাত পড়ে নিবে উত্তম হলো পরের সুন্নাত আদায়ের পর পূর্বের সুন্নাত পড়ে নেয়া। (ফতহুল কদীর, বাহারে শরীয়ত, ৪র্থ খন্ড, পৃ: ২৪)