জুম্‌’আর খুতবা

কুরআন ও হাদীসের আলোকে মিরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাৎপর্য

অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি | শুক্রবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা!

মি’রাজ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার এক বিস্ময়কর মুজিযা, অসীমকে কল্পনা করা সৃষ্টির পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। পরম করুণাময় মহীয়ান স্রষ্টা প্রিয় হাবীবকে মি’রাজ রজনীতে সৃষ্টির রহস্য অভিহিত করেন। এ বরকতময় রাতে আল্লাহ্‌ পাক তাঁর প্রিয় হাবীবকে আসমানজমীন, আরশকুরসী, লওহকলম, বেহশতদোজখসহ অদৃশ্য জগতের সৃষ্টিরাজি অবলোকন করান। মি’রাজ হযরতের শ্রেষ্ঠত্বের এক অভ্রান্ত দলীল। রসূলুল্লাহকে মি’রাজ দানের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহ মানব জাতিকে গৌরবান্বিত করেছেন।

মি’রাজ অর্থ: ম’রাজ শব্দটি আরবি, এক বচন। বহুবচন ‘মা’আরিজ’ এর অর্থ সিঁড়ি, উর্ধ্বগমন, আরোহন, উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে উত্তরণ, শ্রেষ্ঠতম সম্মান লাভ ইত্যাদি। শব্দটি আইন, রা, জ্বীম ধাতু থেকে উৎপত্তি। শব্দটি আল ক্বোরআনে উল্লেখ রয়েছে, অর্থ ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহ্‌র নিকট ওঠে। (আল ক্বোরআন, সূরা মা’আরিফ, আয়াত)

আল কুরআনের আলোকে মিরাজুন্নবী: আল্লাহ্‌ জাল্লাজালালুহু’র ইচ্ছায় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উর্ধ্বলোকে গমনকেই মি’রাজ বলা হয়। মি’রাজ পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময়কর ঘটনা। এ ঘটনা বাস্তব ও সত্য, স্বয়ং আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্র ক্বোরআনে এ ঘটনার বিবরণ দান করেছেন। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “পরম পবিত্র মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: )

হাদীসের শরীফের আলোকে মি’রাজ: হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, আমার সম্মুখে বুরাক উপস্থিত করা হলো, তা শ্বেত বর্ণের জন্তু। গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর অপেক্ষা ছোট। তার দৃষ্টি যতদূর যেতো সেখানে পা রাখতো। আমি বুরাকে আরোহন করে বায়তুল মোকাদ্দাস এসে পৌঁছি। অন্যান্য নবীগণ সেখানে নিজেদের সওয়ারি (বাহন) বাঁধতেন। আমি সেখানে আমার বাহনকে বাঁধলাম। অত:পর আমি বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাআত নামায আদায় করলাম। অত:পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে পড়ি, তখন জিবরাঈল (আলায়হিস সালাম) আমার নিকট একটি মদের পাত্র ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আসেন, আমি দুধের পেয়ালা গ্রহণ করলাম। জিবরাঈল আলায়হিস সালাম বললেন, আপনি ফিতরাত তথা স্বভাবধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেছেন। অত:পর জিবরাঈল (আলায়হিস সালাম) আমাকে নিয়ে উর্ধ্বজগতে যাত্রা শুরু করলেন, জিবরাঈল (আলায়হিস সালাম) আসমানের দরজা খুললেন, জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কে? বললেন, আমি জিবরাঈল, আবার জিজ্ঞেস করা হলো, আপনার সাথে কে রয়েছেন, তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, তাঁকে কী ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। অতঃপর আসমানের দরজা খুলে দেয়া হলো। (সহীহ মুসলিম শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা১৪৫)

ইসরা ও মি’রাজ: আরবী ভাষায় রাত্রিকালে ভ্রমণকে “ইসরা” বলা হয়। মক্কা শরীফ মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণকে ইসরা বলে। যা ক্বোরাআন দ্বারা প্রমাণিত, এর অস্বীকারকারী কাফির। মসজিদে আকসা থেকে আসমান সমূহ ও লামকানের ভ্রমণকে মি’রাজ বলা হয়। যা মশহুর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এর অস্বীকারকারী বিদআতী ও ফাসিক। (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী, মাদারিজুন নবুওয়াত, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা:-২৮৭)

হযরত খাজা নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমণকে ইসরা, বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে আসমান সমূহের ভ্রমণকে মি’রাজ এবং আসমান থেকে কা’বা কাউসাইন পর্যন্ত ভ্রমণকে ‘ইরাজ’ বলা হয়। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। (খাজা নিজাম উদ্দীন ফাওয়ায়িদুল ফুয়াদ, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা:-৩৫৮)

মি’রাজের যাত্রা: হযরত ইবনে হাজর রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত উম্মেহানীর গৃহে আরাম করছিলেন, সেখানে থেকে মি’রাজের যাত্রা হয়েছিল। (সীরতে হালভী, পৃষ্ঠা৪০৫)

মি’রাজ কখন কোন মাসে কোন তারিখে সংঘটিত হয়: সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ফাতহুল বারী” র মি’রাজ অধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী হযরত উম্মুল মু’মেনীন খাদীজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহার ওফাতের পর মি’রাজ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্‌র নবুওয়তের প্রকাশ বর্ষে তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর কোন এক মাসে সংঘটিত হয়েছে, মাসের ব্যাপারে রবিউল আউয়াল অথবা রবিউস সানী, রজব, অথবা রমজান বা শাওয়াল মাসে হয়েছে মর্মে পাঁচটি মত পাওয়া যায়। প্রসিদ্ধ মতানুসারে রজব মাসের সাতাশ তারিখ রাতে হয়েছে। (শরহে মাওয়াহিব, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩০৭)

প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দীস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এ প্রসঙ্গে বর্ণনা করেন, “জেনে রাখুন, আরব দেশের জনগণের ঘরে ঘরে প্রসিদ্ধ ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র মি’রাজ হয়েছিল রজবের সাতাশ তারিখে। রজবের মৌসুম আরববাসীদের মাঝে সুপ্রসিদ্ধ। (মাসাবাতা বিসসুন্নাহ, পৃষ্ঠা১৩৯)

প্রখ্যাত তাফসীরকার আল্লামা ইসমাঈল হক্কী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন, শবে মি’রাজ হলো ২৭ রজব সোমবার দিবাগত রজনীতে এ রজনীতে। মুসলমানদের আমল জারি আছে। (ইসমাইল হক্কী তাফসীরই রূহুল বয়ান, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা১০৫)

মি’রাজ রজনীতে বুরাক ছিল জান্নাতী বাহন: বুরাক আরবি শব্দ, বারকুন শব্দ থেকে উদ্ধৃত, যার অর্থ বিদ্যুৎ। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আলোর গতি প্রতি সেকেন্ড এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। বুরাকের গতি এর চেয়েও অকল্পনীয় দ্রুত। বুরাক প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, এটি ছিল খচ্চর হতে ছোট, গাধা থেকে বড়। সাদা রং এর লম্বা আকৃতি সম্পন্ন, এর গতি ছিল বিদ্যুৎসম। এর গতি সীমার অবস্থা এমন ছিলো যে, দৃষ্টি সীমায় নিজের কদম রাখতো উঁচুতে উঠার সময় তার হাত ছোট এবং পা লম্বা হয়ে যেতো। আর নীচে নামার সময় হাত লম্বা ও পা ছোট হয়ে যেতো। যার কারণে উভয় ক্ষেত্রে তার পিট সমান থাকতো এতে আরোহীর কোন ধরণের কষ্ট হতো না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৮৭) বুরাক রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসের উদ্দ্যেশে রওয়ানা হলো।

জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে মি’রাজ: রাসূলুল্লাহ্‌র মি’রাজ স্বপ্নযোগে ছিল না, নবীজির মি’রাজ ছিল সশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। মি’রাজ যদি স্বাপ্নিক হতো, অবিশ্বাস বা বিস্ময়ের কোন কারণ ছিল না। আয়াতে করীমায় ‘আবদ’ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর আত্মা ও দেহের সমন্বিত সত্ত্বাকে বুঝানো হয়েছে। পবিত্র ক্বোরআন ও মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত। মি’রাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় স্বচক্ষে আল্লাহকে দেখেছেন। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “তাঁর দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং তাঁর দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যূত হয়নি। (সূরা: নাজম, আয়াত:১৭১৮)

সশরীরে মি’রাজ একবার: নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চৌত্রিশ বার মি’রাজের বর্ণনা পাওয়া যায়, একবার সশরীরে। শায়খে আকবর রাহমাতুল্লাহি আলাহি বর্ণনা করেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর মি’রাজ হয়েছিল চৌত্রিশ বার, একবার সশরীরে। বাকীগুলো রূহানীভাবে হয়েছিল। (আল্লামা বুরহান উদ্দীন হালভী, সীরাতে হালভীয়া, পৃষ্ঠা৪০৪, তাফসীরে জালালাইন পাদটীকা, পৃষ্ঠা২২৮)

হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রভুকে দু’বার দেখেছেন, একবার স্বচক্ষে, আরেকবার স্বীয় অন্তরে। (ইমাম যুরকানী, মাওয়াহিব লাদুনিয়া, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা৩৭)

বর্ণিত হাদীস শরীফ থেকেও নবীজি কর্তৃক আল্লাহর দিদার ও দর্শন সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা কি আশ্চর্যবোধ করছো? হযরত ইবরাহীম আলায়হিস সালাম এর জন্য কথোপকথন ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্য প্রত্যক্ষ দর্শন। (শরহে মুসলিম ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা১৯৬)

হাদীস শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি আমার মহিমাময় আল্লাহ তা‘আলাকে সুন্দরতম (কুদরতে) আকৃতিতে দেখেছি। তিনি আমার দু’কাঁধের মাঝখানে স্বীয় কুদরতের হাত রাখলেন, আমি তাঁর কুদরতি হাতের শীতলতা আমার বক্ষস্থলে অনুভব করলাম। অত:পর আমি আসমান ও যমীনের সব বিষয়ে অবগত হয়েছি। (মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা৬৮, আনোয়ারুল বয়ান, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা৪৩৭)

মি’রাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম রজবের সাতাশ তারিখ রাত্রির শেষার্ধে তাঁর দুধবোন উম্মেহানি বিনতে আবি তালিবের গৃহে বিশ্রাম করছিলেন। এমন সময়ে হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস সালাম বুরাক সহকারে আল্লাহর আমন্ত্রণ নিয়ে প্রিয় রসূলের খিদমতে হাজির হলেন, আল্লাহর নির্দেশে মাহবুবকে জাগ্রত করলেন। আল্লাহর পয়গাম মাহবুবকে পেশ করলেন। প্রিয় নবীর বক্ষ মুবারক বিদারণ করলেন, যম যম কূপের পানি দ্বারা তা ধৌত করলেন। রহমত বরকত ফুয়ুজাত ও নূরে এলাহী দ্বারা বক্ষ মুবারক পরিপূর্ণ ও মহিমান্বিত করলেন। কাউসারের পানি দ্বারা গোসল দিলেন জান্নাতী পোশাকে প্রিয় রাসূলকে সুসজ্জিত করলেন এবং বুরাক হাজির করলেন। হযরত জিব্রাইল আলায়হিস সালাম বুরাকের লাগাম ধরলেন আর হযরত ইসরাফিল আলায়হিস সালাম পেছনে দাঁড়ালেন। রাহমাতুল্লিল আলামীন বুরাকের উপর উপবিষ্ট ও ফেরেস্তা কর্তৃক চতুর্দিকে পরিবেষ্টিত, ফেরেস্তাদের জুলুস সহকারে প্রিয় রাসূলের অভিযাত্রা। এ নূরানী জুলুসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সৈয়্যদুল আম্বিয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন। মুহূর্তে বায়তুল মুকাদ্দাসে আগমন করে আল্লাহর প্রেরিত পূর্ববর্তী অসংখ্য নবীরসূল ও ফেরেস্তারা প্রিয় রসূলকে অভিবাদন ও সম্ভাষণ জানানোর জন্য অপেক্ষমান। রাহমাতুল্লিল আলামীন এর ইমামতিতে নামায আদায়ের জন্য প্রত্যেকে ব্যাকুল প্রস্তুতি সম্পন্ন, কাতারবন্দি হয়ে ইমামুল আম্বিয়ার অপেক্ষায়। সকলের মনোবাসনা পূর্ণ হলো, লক্ষ লক্ষ নবী রাসূল ও ফেরেশতা ও নামাযে শরিক হয়ে ইমামুল আম্বিয়ার পেছনে নামায আদায় করে মুক্তাদি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলেন। ইমামুল আম্বিয়া সৈয়্যদুল আম্বিয়ার যথার্থ শান মান ও সুমহান মর্যাদার বহি:প্রকাশ ঘটলো। নামায শেষে উর্ধ্ব জগতের ভ্রমণ প্রস্তুতি শুরু হলো। দ্রুতগতি সম্পন্ন বুরাক মুহূর্তেই প্রথম আসমানে পৌছালো। আদিপিতা হযরত আদম আলায়হিস সালাম তাঁর সন্তান ইমামুল আম্বিয়াকে অভিনন্দিত করলেন। দ্বিতীয় আসমানে হযরত ইয়াহিয়া আলায়হিস সালাম, তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ আলায়হিস সালাম, চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রিস আলায়হিস সালাম, পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন আলায়হিস সালাম, ষষ্ঠ আসমানে হযরত মুসা আলায়হিস সালাম, সপ্তম আসমানে হযরত ইব্রাহিম আলায়হিস সালাম এরা সবাই রাহমাতল্লিল আলামীন এর দিদারলাভে ধন্য হলেন, প্রিয় রাসূল আসমানী জগতের আশ্চর্যজনক নিদর্শনাদি পরিদর্শন করলেন, সেখানে হতে মুহূর্তেই চূড়ান্ত গন্তব্যস্থান সিদ্‌রাতুল মুন্তাহায় পৌঁছলেন, যেখান থেকে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার কোন নৈকট্যধন্য ফেরেশতারও সুযোগ নেই। জিব্রাইল আমীন অপারগতা প্রকাশ করলেন, বললেন ওখানে থেকে সম্মুখপানে অগ্রসর হওয়া আপনারই শান। আমি যদি তার কিঞ্চিত অগ্রসর হই আল্লাহর তজল্লীতে ভস্ম হয়ে যাব। এখানে রাসূলুল্লাহর নূরানীয়তের বহি:প্রকাশ ও বাস্তব প্রতিফলন। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মি’রাজের তাৎপর্য বুঝার তাওফিক দান করুন।

লেখক : মাদরাসাএ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), বন্দর, চট্টগ্রাম; খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।

 

আবদুল মুত্তালিব

দোহাজারী, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: কুরআন ও হাদীসের আলোকে রজব মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানালে কৃতার্থ হব।

উত্তর: রজব মাসের ফজীলত পবিত্র কুরআন ও অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত বরকতময় মাস হিসেবে স্বীকৃত। পবিত্র মিরাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র মাস হিসেবে ফজিলত মন্ডিত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলার বিধানে গণনার মাস সমূহ বারটি আসমান সমূহ ও জমিন সৃষ্টির দিন থেকে, তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত মাস। (সূরা: তাওবা, আয়াত৩৪)

সহীহ বুখারী শরীফে আয়াতের ব্যাখ্যায় বারো মাসে বৎসর। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক যিলক্বদ, যিলহজ্ব, মুহররম আর চতুর্থটি হলো রজব। যা জমাদিউস সানি ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। (বুখারী শরীফ, খন্ড:, পৃ:৬৭২)

রজব মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে, হযরত ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআটি পড়তেন, “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রজবাওঁ ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমদ্বানা।” হে আল্লাহ, আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাস বরকতমন্ডিত করুন। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন। (সুনান, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅছিয়ে গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভাণ্ডারী
পরবর্তী নিবন্ধশিল্পের বিপ্লবী প্রবাহ