জীবন-জীবিকার সব নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে : ফখরুল

| শনিবার , ৬ মে, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষায় সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এখন এগুলোর (পরিবেশ দূষণ রোধ) উপরে কোনো গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে ঢাকা দেশের অন্যতম না, বোধ হয় সবচেয়ে দূষিত নগরীতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সরকারের কোনো লক্ষ্য নেই। এই বিষয়গুলোকে অ্যাড্রেস করার জন্য, জনগণের ভবিষ্যতকে সুন্দর করার জন্য, জনগণের অন্তত বেঁচে থাকার, জীবনজীবিকার পথগুলোকে সুগম করার জন্য সেখানে তাদের খুব বেশি একটা আগ্রহ নেই। কারণ তাদেরকে তো জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। তারা নির্বাচিত নয়, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। লক্ষ্য একটাই যে, আমাকে যে করেই হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। এই কারণে পরিবেশ রক্ষায় তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই।

গতকাল ঢাকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে বিএনপি আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন : বাংলাদেশ ও নদী’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যখন আমি বাংলাদেশের যেসব জায়গায় যাই, নদী আর বেশি দেখতে পাই না। দূরে যাওয়ার দরকার নেই, ঢাকার পাশেই বুড়িগঙ্গা, আগে কেমন ছিল, আর আজকে সেই বুড়িগঙ্গায় কী দেখছি, শীতালক্ষ্যায় কী দেখছি। আজকে আমাদের মানুষের অবহেলায়, সরকারের অব্যবস্থাপনায়, তাদের পরিকল্পনার অভাবে সেগুলোকে নিয়ে আমরা বেঁচে আছি, আমাদের জীবনজীবিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অবিবেচ্ছদ্য, সেগুলোকে আমরা নিজেরাই হত্যা করছি, ধ্বংস করে দিচ্ছি। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, সরকার উন্নয়নের ঢাকঢোল বাজায় সর্বক্ষণ। কিন্তু নদীকে রক্ষায়, নদীকে সঠিকভাবে পরিশুদ্ধ রাখার তাদের কোনো পরিকল্পনা এখনও পর্যন্ত চোখে পড়ে না। বুড়িগঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে যান, দেখবেন এতো দুর্গন্ধ। নদী দখলের বর্ণনা করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাভারধামরাইতে ছোট ছোট যে নদীগুলো ছিল, সেগুলো প্রায় মরে গেছে। আপনারা দেখেছেন যে, তুরাগ নদীর পাশে সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ও তাদের সমর্থনের ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন ক্লাব গড়ে উঠেছে। সেই ক্লাবগুলো একেবারেই নদীর উপরে নদী ভরাট করে গড়ে উঠেছে। পানি কমে যাচ্ছে, নদী দখল করা হচ্ছে। এটার বিষয়ে যা কিছু খবর নেবেন এই সরকারের সঙ্গে যারা জড়িত, তারাই এই কাজগুলো করছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থায় নেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এই প্ল্যানেট বড় রকমের হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা তো আদারব্যাপারী, জাহাজের খবর দরকার নাই। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমরা বেঁচে থাকব কি থাকব না, সুস্থসুন্দরভাবে আমরা এখানে বাঁচতে পারব কিনা সেটা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজকে বাংলাদেশের মানুষকে যদি টিকে থাকতে হয়, ভবিষ্যতকে যদি সুন্দর করতে হয়, ভবিষ্যতকে যদি সত্যিকার অর্থেই জনগণমুখী করতে হয়, তাহলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আজকে গণতন্ত্র নেই বলেই কোনো জবাবদিহিতা নেই।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন হাসনা জসীমউদ্‌দীন মওদুদ। চার পৃষ্ঠার প্রবন্ধে তিনি বাংলাদেশের নদনদীর পানিপ্রবাহ, ভারতের উজানে বাঁধ নির্মাণে ক্ষতিকারক দিক এবং প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের হুমকির মুখে পড়ার কথা তুলে ধরেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের নদীগুলো কী পরিমাণ গতি হারিয়েছে এবং কী পরিমাণ চরিত্রগতভাবে পরিবর্তন হয়েছে। একটা উদাহরণ প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা ফারাক্কা চুক্তি।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, তিস্তাসহ ৫৪ নদীর উপরিভাগে পানি প্রত্যাহার করে নিয়ে যাচ্ছে তারা (ভারত)। ফলে আমাদের নদীতে পানি কম আসছে, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানির মাধ্যমে যে পলি আমাদের দেশে আসতো, সেই পলি কমে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে।

সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের নদনদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এই থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। সরকারকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে, সরকারের মেরুদণ্ড সোজা থাকতে হবে। বলতে হবে আমার দেশের নদনদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা চাই।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নদী বিষয়ে শক্তিশালী অবস্থান নেওয়া উচিত, সে যত বড় শক্তিশালী হোক, যত ক্ষমতাশালী হোক, নদী দখলের ব্যাপারে, নদী দূষণের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘূর্ণিঝড়ের খবরে উপকূলে জানমাল রক্ষার প্রস্তুতি
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন ফখরুল : কাদের