জীবনের অপার বিস্ময়

রাজু আহমেদ | সোমবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

এইতো সেদিনও যার বিরহে ভীষণ মন খারাপ হতো, এমনি এমনি চোখে জল গড়াতো কিংবা যার শূন্যতা ভাবতেই কলিজায় ব্যথা জাগতো সে, আজকাল মনেই পড়ে না। এটাই সময়ের শিক্ষা। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটির অস্তিত্ব একটা সময় সেই একই জীবন অস্বীকার করে। যে প্রতি ক্ষণে মনে থাকতো সেই মানুষটিকে সারা বছরেও একবার মন মনে করে না! যাকে ছাড়া বাঁচার চিন্তা কল্পনাও করাও যেতো না সে ছাড়াই মানুষজন আরও ভালোভাবে বেঁচে আছে। কাজেই জীবনে কেউ কারো জন্য অনিবার্য নয়।

যে যাকে গুরুত্ব দেয় তার সেটুকু গুরুত্বের মূল্য দেওয়া উচিত। কেউ ভালোবাসে মানে সে বিকল্পহীনএটা বোকারা ভাবতে পারে। মানুষ যখন অবমূল্যায়িত হতে শুরু করে সে সেখানে থাকে না। ভালোবাসা কম পেলেও চলে কিন্তু সম্মান কম থাকলে সেখানে থাকা যায় না। বিশ্বাস একবার ভেঙে গেলেও সেখানে থাকতে বাধ্য হওয়া লাগতে পারে কিন্তু সন্দেহ আর কখনোই দূর হয় না। জীবন এমনি! সে প্রত্যেক পদক্ষেপে শিক্ষা দেবে তবু মানুষ কিছুই শিখবে না। সে একই ভুল শতবার করবে। কাঁদবে, নির্ঘুম রাত কাটাবে। তবে অনেক মানুষের মধ্যেও জীবন কেটে যায়, আবার কাউকে ছাড়াও জীবন বয়ে যায়। বিচিত্রতাতেই জীবনের সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। যে যতটুকু আবিষ্কার করতে পারে তার সাথে জীবনের ঠিক ততটুকুর দেখা হয়!

জীবনে কেউ কারো নয়, আবার সবাই সবার। কেউ যদি নিজেকে মহামূল্যবান ভাবে তবে সে ছাড়া ভিন্ন কেউ তারে দাম দেয় না। জীবনকে যত সহজসরল করা যায়, জীবন তত উপভোগ্য হয়ে উঠে। জীবনে বহুবার ঠকতে হবে, বার বার ঠকানোর মানুষ হাজির হবেএ নিয়ম কবুল করেই চলতে হবে। আঘাত পেয়ে যাতে আবার ঘুরে দাঁড়ানো যায়সেই মনোবল বুকে রাখতে হবে। প্রত্যেকটা ভোর মানে নতুন অভিজ্ঞতা, প্রত্যেকটা সন্ধ্যা মানে সারাদিনের আত্মবিশ্লেষণ থাকলে জীবন পুষ্পকরথে সুন্দর হয়ে উঠবে।

যে থাকবে না তাকে রাখার বৃথা চেষ্টা করবে না। জীবনে অনাকাঙ্‌ক্িষত মানুষ আঁকড়ে থাকা মানে অসুখের সাথে বসবাস। অথচ মন তোমার থেকে শান্তি চায়। সঙ্গরঙ্গ ছাড়াও সে একাকীত্ব উপভোগ করতে পারে। আমরা অতীত মনে রাখতে পারি, বর্তমান উপলব্ধি করতে পারি কিন্তু ভবিষ্যত জানি না। তবে এটুকু ধারণা করতে পারি, অতীতের কৃতকর্মই ভবিষ্যতের ফলাফল! কাউকে ঠকাইনি, ধোঁকা দেইনি কিংবা বিশ্বাস ভাঙিনিএটুকুর নিশ্চয়তা থাকলে জনম দুঃখে জীবন যাবে না। প্রত্যেকটা দীর্ঘ রাতের পরেই আরেকটি সুন্দর সকাল থাকে। ধৈর্য দিয়ে জীবন জয় করা যায়।

যে পেয়েছে এবং যে পায়নিউভয়কেই শেষ পরিণতিকে আলিঙ্গন করতে হবে। স্থূল সুখ জীবনকে ভোগবাদিতার ভোগান্তিতে ডোবায়। মিশ্র অনুভূতির আলাদা মূল্যায়ন আছে। চরমভাবে আকাঙ্ক্ষিত কোন বস্তু বরং জীবনে না পাওয়াই উচিত। জীবন যা যা পেয়েছে সেসবের পূর্বমূল্য ধরে রাখতে পারেনি। কোনো কিছু পাওয়া তীব্র বাসনা অথচ না পাওয়াবাঁচার আনন্দ বাঁচিয়ে রাখে। আশা না থাকলে মানুষ জড়পদার্থে পরিণত হতো। জীবনের যোগবিয়োগে কোনকিছু পাওয়ার চেয়ে বরং না পাওয়াতে ভালো ফল দিয়েছে। অন্তত আশাভঙ্গের হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়নি। স্পর্শের অধিকার অর্জিত হলে অনেককিছুর মূল্য থাকে না। স্রষ্টাও সৃষ্টির দৃষ্টিসীমায় নন বলে আলাদা কদর আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাশেদ রফউ-এর অন্ত্যমিল
পরবর্তী নিবন্ধসাহিত্য, সংগ্রাম ও স্বপ্নের কবি