জিম্মি নাবিকরা যেন দ্রুত ফিরে আসে : নাবিক নূর উদ্দিনের স্ত্রী

কর্ণফুলী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১১ এপ্রিল, ২০২৪ at ১২:৩৩ অপরাহ্ণ

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ নাবিকেরা এলার্জি ও চর্মরোগে আক্রান্ত। তাঁদের ৭ দিন পর একবার গোসল করার সুযোগ দেওয়া হয়। পানিও খুব লবণাক্ত। চর্মরোগে আমাদের সবার শরীরের অবস্থা জরাজীর্ণ সাথে সবার মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ।

৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় এমন একটি ভয়েস মেসেজ দিয়ে স্ত্রীকে বার্তা জানালেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের জিম্মিদশায় থাকা কর্ণফুলীর মো. নূর উদ্দিন (৩২)। বার্তা পেয়ে নাবিক নূর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস (৩১) ও পরিবারের সদস্যরা সরকার ও জাহাজ মালিককে ঈদের আগেই সব নাবিককে মুক্ত করার আবেদন জানান।

জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘শুধু আমাদের পরিবার না। উৎকণ্ঠায় থাকা বাকি নাবিক পরিবারগুলোও চাইছে তাঁদের স্ব স্ব সন্তানেরা যেন ঈদের আগেই সোমালিয়ার জলদস্যু কবল থেকে দেশে ফিরে আসুক। না হয় তাঁদের জন্য ঈদের আনন্দ বলতে কিছুই থাকবে না।’

নাবিক পরিবারের অপর সদস্য হারুনুর রশিদ (৪১) বলেন, এ অবস্থায় দিন যতই যাচ্ছে জিম্মি নাবিকদের মানসিক অবস্থা ততই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের দ্রুত উদ্ধারে মালিকপক্ষ ও সরকার যেন তড়িৎ পদক্ষেপ নেয়।

জানা যায়, জাহাজে নূর উদ্দিনের পদবি জেনারেল স্টুয়ার্ড (জিএস)। তিনি কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের (৭ নম্বর ওয়ার্ড) লিচুতলা গ্রামের মতিন বাপের বাড়ির মৃত আমিন শরীফের ছেলে।

ছেলে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়ে থাকায় পাহাড়সম দুশ্চিন্তা ভর করেছে মা ইসলাম খাতুন (৬৫) সহ পুরো পরিবারের উপর। আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে নানা শঙ্কা।

নাবিক নূর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস আড়াই বছরের একমাত্র ছেলে সাদ বিন নূরকে বুক চাপড়িয়ে কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন। কান্নায় কোন কথায় বলতে পারছেন না।

মো. নূর উদ্দিন ফয়জুল বারি মাদ্রাসা মাদরাসা থেকে দাখিল ও পটিয়ার শাহ্ চান আলী মাদরাসা থেকে কামিল সম্পন্ন করেন। তাঁর জাহাজে চাকরির মেয়াদ ৮ বছর হলেও এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে যোগদান করেছেন মাত্র ৩ তিন মাস আগে। ৬ ভাই দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে।

পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আব্দুল্লাহ নামক জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর পান তাঁরা।

জানতে চাইলে জিম্মি হওয়া জাহাজ আব্দুল্লাহর প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি অনেক দূর হয়েছে। আমরা জাহাজ কতৃপক্ষ আশা করছি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে নাবিকদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে দেশে ফিরে আনতে পারব। সেই চেষ্টায় চলতেছে।’

জিম্মি নাবিকদের সূত্রে পাওয়া একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়, জাহাজ মালিক পক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের সাথে সম্ভবত সোমালিয়ার জলদস্যুর একটি সমঝোতা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে তাঁরা মুক্তি পাচ্ছেন।

জাহাজের ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ খানের পক্ষ থেকে নাবিকদের একটি সাইন অফ কপি প্রদান করা হয়েছে। সাইন অফ মানে জাহাজের কর্ম হতে অব্যাহতি নিয়ে দেশে ফেরা। যেটি কেএসআরএমের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং এর প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিমের নির্দেশে নাবিকের কাছে পৌঁছান ক্যাপ্টেন। এমনটাই সুত্রের দাবি।

এতে ক্যাপ্টেন নাবিকদের জানায়, যারা বাই এয়ারে দুবাই থেকে দেশে আসতে চান এবং যারা জাহাজে করে সোমালিয়া টু চট্টগ্রাম দেশে ফিরতে চান তাঁদের সম্মতি জানানোর। এতে ২৩ নাবিকের মধ্যে ১৮ জন বাই এয়ারে ও ৫ জন সাগর পথে চট্টগ্রাম আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন বলে সুত্র জানায়।

বেশির ভাগ নাবিকেরা বাই এয়ারে চলে আসতে যান। কেননা, কারো মানসিক অবস্থা কেমন ভালো নেই। জাহাজে করে মাস দুয়েক পরে দেশে ফিরতে আগ্রহ নেই বেশির ভাগ নাবিকের। কারণ সোমালিয়া থেকে জাহাজটি প্রথমে দুবাই যাবে। দূরত্ব মাত্র তিন দিন। সেক্ষেত্রে বাই এয়ারে সুবিধা।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। পরে বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ও গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় 
পরবর্তী নিবন্ধঅপরাজনীতি যেন চিরতরে দূর হয়, প্রার্থনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর