জায়গা সংকটে হচ্ছে না আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড

রতন বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ২৭ জুন, ২০২৩ at ৮:২২ পূর্বাহ্ণ

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই মশারির ভেতর থাকতে হয়। কারণ আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানোর পর ওই মশা যদি অন্য কাউকে কামড়ায়, তবে তিনিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেন। যার কারণে সাধারণ রোগীদের সাথে ডেঙ্গু আক্রান্তদের রেখে চিকিৎসা দেয়া সমীচিন নয়। এতে করে সাধারণ রোগীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। বিশেষ করে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মশারির ভেতর না থাকলে এই ঝুঁকিটা বেশি। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের আলাদাভাবে (আলাদা ওয়ার্ডে) চিকিৎসা দেয়া উচিত বলে মনে করেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তবে বেশ কয়টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু কর্ণার করে চিকিৎসা দেয়া হলেও এখনো পর্যন্ত আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড হয়নি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ডের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলছেন, অন্য সাধারণ রোগীদের আক্রান্তের ঝুঁকি কমাতে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়াটা উচিত। এই প্রয়োজনীয়তা আমরাও অনুভব করছি। কিন্তু আমাদের সীমাবদ্ধতা অনেক। এ মুহুর্তে আলাদা একটি ওয়ার্ড করার মতো জায়গা আমাদের নেই। তাই ইচ্ছে থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে আমরা আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড করতে পারছিনা। তবে যেসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, ওয়ার্ডগুলোর এক পাশে ডেঙ্গু কর্নার করে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের ৫টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে রয়েছেমেডিসিনের তিনটি (১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড) ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের দুটি ওয়ার্ড (৮ ও ৯)। এর মাঝে মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার করে (এক পাশে রাখার ব্যবস্থা) আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। শিশু ওয়ার্ডেও এক পাশে রেখে রোগীদের চিকিৎসার কথা বলছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

তবে এক পাশে হলেও একই ওয়ার্ডের ভেতর হওয়ায় সাধারণ রোগীরাও থাকছেন পাশাপাশি। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সার্বক্ষণিক মশারির ভেতর থাকার কথা বলা হলেও তারা মশারির ভেতর থাকতে চাননা। হাসপাতাল থেকেই মশারি সরবরাহ করা হয়ে থাকে ডেঙ্গু রোগীদের। কিন্তু গরমসহ নানা অজুহাতে ডেঙ্গু রোগীরা মশারি তুলে রাখেন এবং বেশির ভাগ সময় তারা মশারির বাইরে থাকেন বলে জানান চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত। তিনি বলেন, রোগীরা সচেতন নয়। যার কারণে বারবার বললেও তারা মশারির ভেতর থাকতে চাননা। এতে করে ডেঙ্গু আক্রান্তদের পাশাপাশি থাকা সাধারণ রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়ছেন। ঝুঁকির কথা স্বীকার করে চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুর সাত্তার আজাদীকে বলেন, ঝুঁকি তো অবশ্যই আছে। কারণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর অবশ্যই মশারির ভেতর থাকা উচিত। শুধু হাসপাতালে নয়, ঘরে থাকলেও। নয়তো ঘরের অন্য সদস্যরাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ানো কোনো মশা যাতে অন্য কাউকে কামড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে মেডিসিন বিভাগের প্রধান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা করে চিকিৎসা দিতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। কিন্তু সংকটের কারণে এখানে (হাসপাতালে) তো সে সুযোগ হচ্ছেনা। তাই ওয়ার্ডের ভেতর হলেও যতটুক সম্ভব ডেঙ্গু রোগীদের এক পাশে রেখে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী শেষ ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ১৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এ নিয়ে চলতি বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩০ জনে। আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।

এদিকে, চলতি বছর এ পর্যন্ত ১৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন চমেক হাসপাতালে। এর মাঝে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। শেষ ২৪ ঘন্টায়ও নতুন ৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। আর হাসপাতালের ৫টি ওয়ার্ডে গতকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২১ জন।

দিন দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও আলাদা ডেঙ্গু ওয়ার্ড স্থাপন করতে না পারার কারণ হিসেবে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় দীর্ঘদিন কোভিড ওয়ার্ডে কোনো রোগী ছিলনা। সে হিসেবে আমাদের কোভিড ওয়ার্ডটি এতদিন খালি ছিল। এক পর্যায়ে আমরা সেখানে (কোভিড ওয়ার্ডে) ডেঙ্গু রোগী ভর্তির জন্য চিন্তাভাবনা করছিলাম। কিন্তু কয়দিন ধরে পুনরায় কোভিড রোগীও ভর্তি হতে শুরু করেছে। এ জন্য আমাদের চিন্তা থাকলেও ডেঙ্গু রোগীদের সম্পূর্ণ আলাদা রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা আপাতত হচ্ছেনা। জায়গা সংকটের কারণেই আমরা তা করতে পারছিনা। তবে ওয়ার্ডগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন করে এক পাশে চিকিৎসা দেয়া এবং ডেঙ্গু রোগীদের মশারির ভেতর রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

উল্লেখ্য, গত বছর (২০২২ সালে) চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয় মধ্য আগস্টের পর। তবে এবার জুনের আগেই এর প্রকোপ শুরু হয়েছে। দিনদিন এ প্রকোপ বেড়েই চলেছে। প্রকোপ শুরু হতেই ডেঙ্গুতে পরপর মৃত্যুর ঘটনা এবার উদ্বেগও বাড়াচ্ছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ৯ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে তিন জনের মৃত্যু হয় জানুয়ারিতে। আর ছয়জনেরই মৃত্যু দশ দিনের ব্যবধানে। গত ১৪ জুন থেকে ২২ জুনের মধ্যে।

মৃতের তালিকায় শিশু থেকে শুরু করে কিশোর, তরুণ, মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ কেউ বাদ নেই। টানা কয়েকদিন ধরে পরপর মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য বিভাগকে। ডেঙ্গুতে পরপর এই মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। এভাবে নিয়মিত মৃত্যুর ঘটনা ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আভাস দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য সকলকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে দুই দিনে দুই খুন প্রেমের কারণে: দাবি পুলিশের
পরবর্তী নিবন্ধমুছা বাবুল স্যারের বাসায় প্রায়ই আসত