জালিয়াতি রোধে এবার স্ক্যান হবে রপ্তানি কন্টেনারের

চট্টগ্রাম কাস্টমস

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৭ মে, ২০২৪ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

রপ্তানি খাতকে উৎসাহিত করতে ও বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। রপ্তানি খাতের উপখাত ভেদে ১ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা পেতেন রপ্তানিকারকরা। কিন্তু কোনো ধরনের পণ্য রপ্তানি না করে ভুয়া কাগজ তৈরির মাধ্যমে প্রণোদনার কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার ঘটনা চট্টগ্রাম কাস্টমসের তদন্তে উঠে আসে। এছাড়া অনেক সময় খালি কন্টেনার কিংবা পণ্য কম রপ্তানি করে অর্থপাচারের ঘটনাও ঘটেছে।

এমন পরিস্থিতিতে জাল জালিয়াতি রোধ করতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি রপ্তানি পণ্যের কন্টেনার স্ক্যানার স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে উচ্চ প্রণোদনার সকল রপ্তানি পণ্য চালান স্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস। জানা গেছে, বর্তমানে সাতটি ফিক্সড কন্টেনার এবং দুটি মোবাইল স্ক্যানার রয়েছে। এছাড়া এসব স্ক্যানারের মধ্যে চারটি পুরনো ফিক্সড কন্টেনার স্ক্যানার প্রতিস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে স্ক্যানারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে।

রপ্তানি কন্টেনার স্ক্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা চাই চট্টগ্রাম কাস্টমস শতভাগ রপ্তানি কন্টেনার স্ক্যানের আওতা নিয়ে আসুক। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। গুটিকয়েক অসাধু মানুষের দায় তখন আর ঢালাওভাবে সবার ওপর আসবে না।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, রপ্তানি কন্টেনার স্ক্যান করার জন্য আমার মতে পর্যাপ্ত স্ক্যানার মেশিন স্থাপন জরুরি। কারণ আমাদের দিন দিন রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। আমরা শুনেছি দুটি স্ক্যানার দিয়ে আপাতত স্ক্যান করা হবে। চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, রপ্তানি কন্টেনার স্ক্যানারের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে একইসাথে রপ্তানির বিভিন্ন প্রক্রিয়াগুলো সহজীকরণ করা দরকার। কারণ মাঝে মাঝে কাস্টমস ছোটখাটো কিছু ত্রুটি ধরে রপ্তানি প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। এতে রপ্তানি আয় কমার পাশাপাশি সিএন্ডএফ এজেন্ট ও রপ্তানিকারক হয়রানির শিকার হচ্ছে।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রপ্তানি কন্টেনার স্ক্যানের নামে রপ্তানিকারকরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সেটি দেখতে হবে। এখন স্ক্যানারের সংকটের জন্য যদি আমরাদের রপ্তানি বিলম্ব হয়, তাহলে তো সমস্যা। কাস্টমস তার নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই সবকিছু করবে, তবে আমরা যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হই।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমরা রপ্তানি কন্টেনার স্ক্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের সেবাগ্রহীতাদের সাথে এই বিষয়ে সভা করেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে যেসব রপ্তানি পণ্যের উচ্চ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, সেগুলো শতভাগ স্ক্যানের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকসহ যেসব পণ্য রপ্তানি হবে সেগুলোও স্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় অঘোষিত ও বিস্ফোরকজাতীয় পণ্য আমদানির পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬