ধর্ষণ মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার পাশাপাশি আসামির জামিন না দেওয়ার প্রস্তাব রেখে আইনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে তুলে ধরেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। গতকাল রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ বিষয়টি তুলে ধরেন। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হেনস্তা ও মাগুরায় শিশু ধর্ষণসহ বিভিন্ন স্থানে নারী প্রতি সহিংসতা ও বিদ্বেষের ঘটনায় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। এমন প্রেক্ষাপটে আইন উপদেষ্টা বলেন, ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। স্টেকহোল্ডারদের সাথে কিছুটা পরামর্শ করে, তারপর ফাইনালাইজ করব। আমরা চেষ্টা করব কয়েকদিনের মধ্যে আইনগত পরিবর্তন আনার জন্য। খবর বিডিনিউজের।
ব্যাখ্যা তুলে ধরে আফিস নজরুল বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা ৩০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে তাকে পরিবর্তন করায় মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক দেরি হয়ে যেত। আমরা ইনশাআল্লাহ যে সংশোধনী আনব, সেখানে বলব যাকে দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তাকে সম্পন্ন করতে হবে, তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা যাবে না। তদন্তের সময় অর্ধেক করে ১৫ দিন করে দিচ্ছি। বিচারের জন্য আগে যে সময় ছিল তা অর্ধেক করে দিচ্ছি, ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলায় বিচার করতে হবে। ১৫ দিনের তদন্ত কাজ শেষ করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ধর্ষণের মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ না হলেও এ অজুহাতে কাউকে জামিন দেওয়া যাবে না। আগে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার না হলে জামিন দেওয়া যেত, এখন কোনো জামিন দেওয়া হবে না ধর্ষণের মামলায়।
মাগুরার শিশুটির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এ শিশুটির সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা আপনাদের অন্য সবার মতো আমাদেরও মর্মাহত করেছে, তীব্র নিন্দা জানাই। সরকার হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। অভিযুক্তদের সাথে সাথে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলাটায় তদন্ত, বিচারের বিন্দুমাত্র যেন কালক্ষেপণ না হয় আইন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের যত সংস্থা আছে সর্বোচ্চ মাত্রায় সজাগ থাকব।
আসিফ নজরুল বলেন, রাস্তাঘাটে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া ও তদারকিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ সেল এবং ধর্ষণের মামলার তদারকিতে আইন মন্ত্রণালয়ে আলাদা সেল থাকবে। ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দিনাজপুরের একটি আসামির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাইফুল ইসলাম আট বছর চার মাস জেলে থাকার পর জামিন হয়েছিল হাই কোর্ট থেকে। হাই কোর্ট স্বাধীন–স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা বলেছিলাম এ জামিনের বিরুদ্ধে আদালতে দাঁড়াতে। জামিন আদেশের পরদিনই আপিলে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগ সেটা বাতিল করেছে। অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে যখনই উচ্চ আদালতে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, ধর্ষণকারী হোক আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে আপিলেট ডিভিশনে যাই। আমাদের যা করার আমরা সম্পূর্ণভাবে করি।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স : ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশে সহিংসতা বা ধর্ষণের মতো যত ঘটনা ঘটছে, সেসব আইনের আওতায় আনা হবে। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। দেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। তিনি বলেন, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। আইন–শৃক্সখলা বাহিনীকে ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এ যাবত নারীদের বিরুদ্ধে যত সহিংসতা হয়েছে দ্রুত তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নারীরা ঘরে বাইরে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করবে। এতে যারা বাধা দেবে, সহিংসতা করলে তদের আইনের আওতায় আনা হবে। এতে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পুলিশ কর্মকর্তার ওপর মবের আক্রমণের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, আইনশৃক্সখলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ বরদাশ করা হবে না, কঠোর হস্তে দমন করা হবে। রমজানে আইন–শৃক্সখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর।