জামাল নজরুল ইসলাম (১৯৩৯–২০১৩)। বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও বিশ্বতত্ত্ববিদ। তিনি মহাবিশ্বের উদ্ভব ও পরিণতি বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। জামাল নজরুল ইসলাম ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে কলেজ থেকে সিনিয়র কেমব্রিজ ও হায়ার সিনিয়র কেমব্রিজ পাশ করেন। লরেন্স কলেজের পাঠ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএসসি অনার্স করেন। বিএসসি শেষে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কেমব্রিজে পড়তে যান। কেমব্রিজের প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান থেকে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এখান থেকেই ১৯৬০–এ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রায়োগিক গণিত ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে এসসিডি (ডক্টর অফ সায়েন্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ডে ডক্টরাল–উত্তর ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি কেমব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ থিওরেটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমিতে (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোনমি) কাজ করেন ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। এখানে তিনি আইনস্টাইনের তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতেন এবং এই সূত্রে স্টিভেন হকিংয়ের সঙ্গে পরিচয় গড়ে ওঠে।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং গড়ে তোলেন উচ্চতর বিজ্ঞান গবেষণাগার আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গাণিতিক ও ভৌতবিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র বা রিসার্স সেন্টার ফর ম্যাথম্যাটিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্স (আরসিএমপিএস)। অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে আইনস্টাইনের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে সৃষ্টির রহস্য বোঝার চেষ্টা করেছেন। এই গবেষণায় সাফল্যের নিদর্শন তার গ্রন্থাবলী যা তাকে দেশ বিদেশ পরিচিত করে তুলেছিল। বাংলাদেশ সরকার ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদকে ভূষিত করে। পদার্থবিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে তকে ‘রাজ্জাক–শামসুন আজীবন সম্মাননা পদক’ প্রদান করে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।