জাফর ইকবালরা ইভিএমে কেন সায় দিয়েছিলেন, খতিয়ে দেখবে দুদক

| মঙ্গলবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নিম্নমানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ (ইভিএম) কিনে অর্থ অপচয়ের অভিযোগ ওঠার পর মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত বিশেষজ্ঞরা কেন আগে এ মেশিনগুলোকে ভোটের জন্য যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটি খতিয়ে দেখার কথা বলছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ইভিএমের কর্মক্ষমতা দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাইবাছাইয়ের পর গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, দেশের প্রথিতযশা বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত ব্যক্তিগণ কোন ভিত্তিতে মেশিনগুলোকে যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিও কমিশনের দৃষ্টিগোচরে আনা আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

নিম্নমানের ইভিএম’ কিনে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয়ের অভিযোগে গত রোববার ‘এনফোর্সমেন্ট’ অভিযান চালায় দুদক। সেসময় সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেশিনগুলো নির্বাচন কমিশন প্রধান কার্যালয়, ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও বিএমটিএফে সংরক্ষিত আছে। অভিযানে ১ হাজার ৫৯৯টি মেশিনের কোনো হদিস না পাওয়ার কথা তুলে ধরে আক্তার হোসেন বলেন, মেশিনগুলো অযত্নঅবহেলায় পরে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ৬১৮টি মেশিনের মধ্যে দৈব চয়নের ভিত্তিতে কয়েকটি মেশিনের ‘অপারেশনাল ক্যাপাসিটি’ যাচাই করা হয়। এতে মেশিনগুলোতে ত্রুটি দেখা যায়, যা নিম্নমানের মেশিন কেনার ইঙ্গিত দেয়। দুদক টিমের সঙ্গে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও মেশিনগুলো ‘মানসম্মত নয়’ বলে মতামত দেন।

ফলে কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক জাফর ইকবাল ও অন্য বিশেষজ্ঞরা কেন আগে ইভিএমকে ভোটের জন্য যথাযথ মনে করেছিলেন, সেটিই এখন খতিয়ে দেখার কথা বলছে দুদক। দুদক কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, রোববারের অভিযানে সংগৃহীত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনার পর ‘এনফোর্সমেন্ট টিম’ পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলেও ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ওই বছরের মে মাসে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদসহ একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে ইভিএম দেখিয়ে ভোটগ্রহণে তা ব্যবহারের সম্মতি নেয় ইসি। ইভিএম মেশিনের কার্যক্রম দেখে ইসির সঙ্গে ২০২২ সালের ২৫ মে মতবিনিময়ের পর ভোটে মেশিনগুলো ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জাফর ইকবাল ও কায়কোবাদ। সেদিন জাফর ইকবাল বলেছিলেন, ইভিএম নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন পুরোটাই দেখেছি। তার ভেতরের খুঁটিনাটি, টেকনিক্যাল বিষয় যা আছে, তাও জেনে নিয়েছি। সবশেষ আমাদের জন্য রাখা মেশিনটি খুলে দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কনভিন্সড হয়েছি। অত্যন্ত চমৎকার মেশিন। ইভিএমের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলকেও যন্ত্রটি ব্যবহারের পক্ষে সায় দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।

আর বুয়েটের শিক্ষক কায়কোবাদ ইভিএমের প্রতি আস্থা রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এর প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড, একজন ইচ্ছে করলে সেখানে পরিবর্তন করতে পারবে না। কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে মেশিন লেভেলে আর কোনো কাজ নেই, আর ম্যানিপুলেশনের কোনো সুযোগ নেই। তাদের এই মতের ওপর আস্থা রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তখনকার সিইসি হাবিবুল আউয়াল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোদি
পরবর্তী নিবন্ধআজাদী সম্পাদকের সাথে সিইউজের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ