জাপায় আবার গৃহবিবাদ

জিএম কাদের ও চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা রওশনের, আমলে নিচ্ছেন না চুন্নু

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দিয়ে নিজেই দলের হাল ধরার ঘোষণা দিয়েছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। গতকাল রোববার গুলশানে নিজের বাসায় দলের ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে এই ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের স্ত্রী।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, পার্টির ভালোর জন্য, পার্টির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমি নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলাম এবং পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত মামুনুর রশীদকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করলাম। তিনি সার্বিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পার্টির অন্যান্য পদে যারা আছেন তাদের বহাল রেখে পার্টির যেসব নেতাকে জিএম কাদেরের সিদ্ধান্তে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে এবং যাদের পার্টির কমিটির বাইরে রাখা হয়েছিল, তাদের আগের পদে পুনর্বহালের ঘোষণা দিয়ে রওশন বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পার্টির জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করবেন তিনি। এদিকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু তাকে এবং দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার যে ঘোষণা রওশন এরশাদ দিয়েছেন, তাকে আমলে না নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর দুদিন আগে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এই নাটকীয়তার জন্ম দিলেন রওশন। ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।

নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এই প্রেক্ষাপটে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে গতকাল রওশন এরশাদের মতবিনিময় সভা ডাকা হয়। আর সেই মতবিনিময় হয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই।

সভায় রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিতে এখন একটি ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে। দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বক্তব্য ও বিবৃতি এবং দ্বাদশ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের ভূমিকা পার্টিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৭টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করে ২৬টি আসনে সমঝোতা করা এবং আসন সমঝোতার পরেও জনসম্মুখে অস্বীকার করে দেশবাসী এবং পার্টির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পার্টিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ২৬টি আসনে সমঝোতার পর বাকি আসনের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে জনগণের বিরূপ সমলোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাদের কোনো খোঁজ খবর না নেওয়ার ফলে ভোটের মাঠে পার্টি চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ায় পার্টির নেতাকর্মীরা তার প্রতিবাদ করার অধিকার রাখেন। এই প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের সাথে কোনোরূপ আলোচনা কিংবা সান্ত্বনা না করে ক্রমাগত বহিষ্কার ও অব্যাহতির মাধ্যমে পার্টির অস্তিত্ব নষ্ট করা হয়েছে।

পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধের প্রসঙ্গ ধরে প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন বলেন, পার্টির অবস্থা সার্বিকভাবে বিবেচনা করে আমি গত ২২ জানুয়ারি পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে দলে ঐক্য ফিরিয়ে এনে সকল বহিষ্কার ও অব্যাহতির আদেশ বাতিল করে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা তা আমলে নেননি। এই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পল্লীবন্ধুর ৬৬৮ জন নেতাকর্মী পার্টি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় দলে বিরাট সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

রওশনের কাছ থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া কাজী মামুনুর রশিদ মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, পরবর্তী কাউন্সিল হওয়া পর্যন্ত আমি মহাসচিব হিসেবে থাকব। আমি চেষ্টা করব সংগঠনের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে। ফেব্রুয়ারিতে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাউন্সিল হবে।

অব্যাহতির ঘোষণা আমলে নিচ্ছেন না চুন্নু : জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রওশনের দেওয়া অব্যাহতির আদেশ তারা আমলে নিচ্ছেন না। এবারই প্রথম নয়, এটা তৃতীয়বার। এর আগেও দুইবার তিনি এই রকম বাদ দিয়ে নিজেই চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। পরবর্তীতে প্রত্যাহার করেছেন উনার ঘোষণা দেওয়া ঠিক না। কাজেই উনার এই ঘোষণা আমি মহাসচিব হিসেবে নলেজে নিচ্ছি না। এটার কোনো ভিত্তি নাই। এটা অগঠনতান্ত্রিক, এ ধরনের কোনো ক্ষমতা উনার নাই। এই বিষয়টা আইনের ভাষায় যেটা বলে আমরা এটা আমলে নিচ্ছি না।

চুন্নু বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নাই। তাই বিষয়টি আমরা আমলে নিচ্ছি না। বেগম রওশন এরশাদ আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের স্ত্রী। উনাকে শ্রদ্ধা করি, সেই শ্রদ্ধার কারণেই উনাকে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়। প্রধান পৃষ্ঠপোষকের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো রকম ক্ষমতা নাই, কোনো রকম সুযোগ নাই। আলংকারিক পদ। কাজেই আলংকারিক পদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাক্টর কেড়ে নিল ছাত্রলীগ নেতার প্রাণ
পরবর্তী নিবন্ধজিএম কাদের বিরোধী দলীয় নেতা, ব্যারিস্টার আনিস উপনেতা