জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণ, প্রতিবাদে প্রতিনিধিদের ওয়াকআউট

| শনিবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০ তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার ভাষণের শুরুতেই প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন কয়েক ডজন দেশের প্রতিনিধি। হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন নেতানিয়াহুর ভাষণে হাততালি দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের অধিভুক্ত করতে না দেওয়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর নেতানিয়াহু জাতিসংঘে এই ভাষণ দিলেন।

গাজায় যুদ্ধ এবং পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব শেষ করার জন্য ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে রয়েছে। তার ওপর ট্রাম্পের ওই হুঁশিয়ারির পর নেতানিয়াহু জাতিসংঘের ভাষণে কয়েকটি যুক্তিতে এর জবাব দিয়েছেন। প্রথমে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের অবশিষ্ট নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা অস্ত্র নামিয়ে রাখুন। জিম্মিদের মুক্তি দিন। এটি করলে আপনারা বাঁচতে পারবেন। আর না করলে ইসরায়েল আপনাদের খুঁজে বের করবে। এরপর তিনি কয়েকটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘পপ কুইজের’ মতো সেগুলো পড়ে শুনিয়ে বলেন, আমেরিকা নিপাত যাক বলে চেঁচায় কারা? প্ল্যাকার্ডে লেখা জবাব পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, . ইরান, . হামাস, . হিজবুল্লাহ, . হুতি ৫. সবগুলোই।

এ সময় অধিবেশনকক্ষ জুড়ে হৈ হল্লা শোনা যায়। নেতানিয়াহু তখন ৫ নং পয়েন্ট সবগুলোতে টিক দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি (ট্রাম্প) অন্য যে কোনো নেতার চেয়ে ভালো করে জানেন যে, আমেরিকা এবং ইসরায়েল একই হুমকির মুখে রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের যোদ্ধাদের হামলার পর অনেক নেতাই ইসরায়েলকে সমর্থন করেছিলেন জানিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, কিন্তু এরপর থেকে সেই সমর্থন উবে গেছে। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের শত্রু সবসময়ই ছিল। কিন্তু এখন মিত্ররাও ইসরায়েলের সমালোনা করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেকেই এখন ইসরায়েলকে একঘরে রাষ্ট্র হিসাবে দেখছে। খবর বিডিনিউজের।

এ সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১০টি দেশ ইসরায়েলের আপত্তির মুখেও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে দশকের পর দশক ধরে জিইয়ে থাকা সংঘাতের দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে যুক্তি দিয়েছে দেশগুলো। ইইউ ইসরায়েলের ওপর ট্যারিফ এবং শুল্ক আরোপের চিন্তাভাবনা করছে। জার্মানি ইসরায়েলকে অস্ত্র রপ্তানি করা বন্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামপ্রতিক দিনগুলোর জরিপে ইসরায়েল নিয়ে জনমত অনেক বেশি নেতিবাচকই দেখা যাচ্ছে। এমনকি, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদেও নেতানিয়াহুর ভাষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দানা বাঁধার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নেতানিয়াহুর ভাষণে ফিলিস্তিনি এবং আরব প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বাধা আসতে পারে বলে জানিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার ভাষণে হাততালি পাওয়ার জন্য ইহুদি নেতাদের পাশাপাশি তার সমর্থকদেরও আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু তার ভাষণ শুরু হতেই জাতিসংঘের কয়েক ডজন দেশের প্রতিনিধি দুয়ো দিয়ে অধিবেশনকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান। হাততালি দেওয়ার জন্য রয়ে যান মুষ্টিমেয় কয়েকজন। তবে নেতানিয়াহু বক্তৃতার মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার সময় দেখা যায় বিপরীত দৃশ্য। অধিবেশন হলের নিচের খালি আসনগুলোর ওপরতলার ব্যালকনি থেকে পর্যবেক্ষকরা তাকে দাঁড়িয়ে সংবর্ধনা দেন।

নেতানিয়াহুর ভাষণ লাউডস্পিকারে করে গাজায় সমপ্রচার করেছে ইসরায়েল। ভাষণে নেতানিয়াহু বিভিন্ন দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়াকে ‘নিছক পাগলামি’ বলে অভিহিত করেছেন। কয়েকটি দেশের দেওয়া এই স্বীকৃতিকে ‘মর্যাদাহানিকর’ বলেছেন তিনি। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হতে না দেওয়ার অঙ্গীকারও ফের ব্যক্ত করেছেন নেতানিয়াহু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক বছরে ৩১ ট্রান্সফরমার চুরি, আতঙ্কে গ্রাহক
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে ভোটের প্রস্তুতি