জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনসংক্রান্ত সুস্পষ্ট চিত্র প্রকাশ

| বুধবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন জাতীয় নির্বাচন হতে পারে আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষের দিকে। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করতে হয় তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। গত আগস্ট মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতীয় উদ্দেশে এটি তার তৃতীয় ভাষণ।

প্রধান রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি “যদি”, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।’

ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের কথা আমি একটু আলাদাভাবে বলতে চাই, কেননা এই দুটি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভর করছে আমাদের আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি ও তারিখ।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে বড় খবর হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে। কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এখন থেকে তাদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হলো ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। তাদের হাতে অনেক কাজ।’

. ইউনূস বলেন, ‘প্রথমে সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরও কঠিন হলো এজন্য যে গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদেরকে সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।’

জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সংস্কার কতটুকু করা হবে, এর ওপরই নির্বাচন কবে হবে তা নির্ভর করছে। নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান, দুর্নীতি দমনসহ ১০টি বিষয়ে সংস্কারের জন্য সরকার কমিশন গঠন করেছে। বেশির ভাগ কমিশন চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের সুপারিশ দিতে পারে। আর সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে সরকার। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কোন কোন খাতে কী কী সংস্কার করা হবে, তা ঠিক করা হবে। সংস্কারের জন্য কত সময় লাগবে, সেই সময়সীমারও ধারণা পাওয়া যাবে। তখনই আসলে নির্বাচন কবে সম্ভব এর একটা প্রকৃত সময় জানা যাবে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকারউজজামান পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ধারণার কথা জানান। সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

সেনাপ্রধান আঠারো মাসের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা মনে করেন নির্বাচন যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই হওয়া উচিত। নির্বাচন যত দ্রুত হবে ততই জাতির জন্য মঙ্গল হবে। এদিকে, খুব দ্রুত নির্বাচন না হলে, নির্বাচনে না গেলে দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘দ্রুত নির্বাচন না হলে শেখ হাসিনার প্রতি যত বিক্ষুব্ধ হয়েছে মানুষ, তার চেয়েও হয়তো বেশি হবে। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করলে আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি রোষানলে পড়বে অন্তর্বর্তী সরকার।’

আমরা মনে করি, মানুষের মনের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। কেননা রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারের বৈধতা ও সক্ষমতা দুটোই আছে। এরপরও এমন সব পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যা নির্বাচিত সরকার ছাড়া মোকাবিলা করা কঠিন। ফলে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার গুরুত্বপূর্ণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে