চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় জলাশয়ে ১০ মিটারের কম গভীরে ক্ষতিকর জালের ব্যবহার বাড়ছে দিন দিন। ক্ষতিকর জালগুলোর মধ্যে বেহুন্দি, পেকুয়া, কারেন্ট, মশারি, চট, পাই জাল, টং, খুঁটি, বাঁধা এবং ভাসান জাল উল্লেখযোগ্য। অবৈধ এসব জালের কারণে জাটকাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতির মাছের ডিম, লার্ভী ও পোনা ধ্বংস হচ্ছে। সরকারের নানা উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এসব জাল ব্যবহারকারীদের।
এ অবস্থায় মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্র্মূলে ‘বিশেষ কম্বিং অপারেশন’ শুরু করছে মৎস্য বিভাগ। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের ১৭টি উপকূলীয় জেলায় আজ রোববার থেকে এ অভিযান শুরু হবে। দুই ধাপে ১৫ দিন এ অভিযান চলবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১০ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৫ জানুযারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হবে। এদিকে কম্বিং অপারেশন পরিচালনায় চট্টগ্রামে ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মিসরাই ও সন্দ্বীপে একটি করে পাঁচটি, এবং চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে দুইটি টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করে দেয়া আরেকটি টিমও কম্বিং অপারেশনের পাশাপাশি সার্বিক বিষয়ে মনিটরিং করবে। নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, কোস্ট গার্ড, নৌ-পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে টিমগুলো গঠন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, কম্বিং অপারেশন পরিচালনায় সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। জেলেদের মাঝে সচেতনতায় সভা করেছি। মাইকিং ও লিপলেট বিতরণ করেছি। তিনি বলেন, মশারি দিয়ে চিংড়ি পোনা ধরা হয়। অথচ একটি চিংড়ি পোনা আহরণের সময় ৯০টি মাছ ধ্বংস করা হয়।
মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার মাধ্যমে মা ইলিশের যে পোনা উৎপাদন হয়, জানুয়ারি মাসে ইলিশের পোনা ২-৩ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে জাটকায় পরিণত হয়। বিগত কয়েক বছরে অনেক জেলায় নির্বিচারে জাটকাসহ অন্যান্য মাছের পোনা ব্যাপকভাবে চরঘেরা ও বেহুন্দী জাল দিয়ে শিকার করে এবং তা চাপিল মাছ বলে বিক্রি করে ফেলে। তাই ইলিশসহ অন্যান্য মাছ রক্ষায় পরিচালনা করা হবে কম্বিং অপারেশন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব রইউছ আলম মন্ডল বলেন, বিগত কয়েক বছরে অভিযান সফলভাবে বস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তাই এ বছরও কর্মসূচি বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে কম্বিং অপারেশন পরিচালনার উদ্যোগ নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় চলতি মাসে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে ৩টি, ২০১৭ সালে ৫টি, ২০১৮ সালে ১০টি, ২০১৯ সালে ১১টি এবং ২০২০ সালে ১৭টি জেলায় অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। চলতি বছরও ১৭ জেরায় পরিচালিত হবে। জেলাগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখারী, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি পিরোজপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ও মুন্সিগঞ্জ।
প্রস্তুতি সভা :
গতকাল নগরের উত্তর কাট্টলী ও আকমল আলী ঘাটে প্রস্তুতি সভা করেছে মৎস্য বিভাগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী। বক্তব্য রাখেন মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সৈয়দ হুমায়ূন মোরশেদ, মো. মাহবুবুর রহমান, কোস্ট গার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এম.এস. আলম সাইফুল, নির্মল জলদাশ।