জলাবদ্ধতা নিরসনে সর্বাধিক গুরুত্ব রেজাউলের

বিশ্বমানের ও নান্দনিক শহর গড়ায় ৩৭ প্রতিশ্রুতি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা নিরসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাসোপযোগী, বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। এজন্য তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে দিয়েছেন নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট নিরসন, সড়কে শৃঙ্ক্ষলা ফিরিয়ে আনা, নালা-খাল-নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ মোট ৩৭ দফা উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি। গতকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। নগর উন্নয়ন ও পরিচালনায় ৩৭ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে গুরুত্ব দিয়েছেন মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচিকে। অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় নগরবাসীর এই মুহূর্তের সবচেয়ে দৃশ্যমান বড় সমস্যা মশার উৎপাত নিরসনের কথা না থাকায় সাংবাদিকরা এই ব্যাপারে তাঁকে প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, মশার অত্যাচারের কথাটা সত্য। সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই সমস্যার সমাধান করা হবে। এই শহর যেমন মেয়রের, তেমন একজন সাংবাদিকেরও। এটুকু বলতে পারি, কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।
১৯৯৪ সালে চসিকের প্রথম নির্বাচনে ২৮ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটের মাঠে লড়ে বিজয়ী হয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১১ বছর পর ২০১৫ সালে ৩৫ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। মহিউদ্দিন-নাছিরের উত্তরসূরী রেজাউল এবার দিয়েছেন ৩৭ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যে প্রথম ৮টিকে তিনি রেখেছেন অগ্রাধিকার তালিকায়।
ইশতেহার ঘোষণাকালে তিনি বলেন, অঙ্গীকারের স্বপ্ন কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, নগরের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সবার সহযোগিতা পেলে যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতব বলে বিশ্বাস করি।
‘রূপসী চট্টগ্রাম আমার আপনার অহংকার, অঙ্গীকার-সবার যোগে সাজবে নগর’ স্লোগানে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। পাহাড়, নদী, সাগর, হ্রদ, ঝিলের সমন্বয়ে প্রকৃতি নিজের হাতে সাজিয়েছে চট্টগ্রামকে। এমন উপহার পৃথিবীতে খুব কমই আছে। দেশের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। জাতীয় অর্থনীতি চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। জাতীয় আমদানি-রপ্তানির ৮৫% চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। স্বাভাবিক কারণে চট্টগ্রাম দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১২ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বমানের গতিশীল আন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো সুবিধা ধাপে ধাপে যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার স্বর্ণদ্বার খুলতে এগিয়েছে অনেক দূর। প্রতিবেশী ভারতের ভূমিবেষ্টিত সেভেন সিস্টার, চীনের কুনমিংসহ নেপাল, ভূটানেরও আমদানি-রপ্তানির ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার হবে চট্টগ্রাম। এতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিশাল উৎসমুখ খুলে যাবে শিগগিরই। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম পর্যটন তীর্থ হিসেবে গড়ে উঠবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম। সমুদ্র অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনা বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বিশ্ব অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (হাব) আসন দখল করবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামকে এই অবস্থানে তুলে আনতে বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
চট্টগ্রামকে নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জাতির বিপুল সম্ভাবনা হাজার বছর পিছিয়ে দেয় ঘাতক চক্রের সহযোগী সরকারগুলো। নানা অব্যবস্থাপনা ও দখল, লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে পরনির্ভর ও পঙ্গু করে দেয়া হয়। ফলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং নান্দনিক মহানগরের উন্নয়নও থমকে যায়। জননেত্রী শেখ হাসিনা ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে তুলে বিশ্ব দরবারে অনন্য মর্যাদা এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বৈশ্বিক রোল মডেল। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে করোনা সংকটেও তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সর্বকালের রেকর্ড ৪৩ বিলিয়ন ডলারের উপরে। করোনা সংকট মোকাবেলায়ও বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর প্রশংসা কুড়িয়েছে।
রেজাউল বলেন, পরম সৌভাগ্যবান হয়েও আমরা প্রকৃতির চমৎকার উপহার চট্টগ্রামকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছি না। এর জন্য শুধু দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ নয়, চট্টগ্রামের গর্বিত নাগরিক হিসাবে সবাই সমান দায়ী। একটি জনপদ বা নগর তখনই নান্দনিক, পরিচ্ছন্ন, পরিবেশবান্ধব ও বাসোপযোগী হয়, যখন সব নাগরিক নিজের বাসগৃহের মতো এটার যত্ন নেয়। আমরা পারিনি, কারণ অধিকার বা দাবি-সচেতন হলেও আমাদের মাঝে নাগরিক দায়িত্ব পালনের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আমি নিজেও এই দায় এড়াতে পারি না। আপনাদের মিলিত প্রচেষ্টায় অতীতের সব ভুল ছুড়ে ফেলে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাসোপযোগী, চট্টগ্রাম বন্দরকে সর্বোচ্চ গতিশীল রেখে সাজাতে হবে এই নগরীকে। নগরবাসীর সেবক হিসেবে ২৭ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আপনাদের রায় ও দোয়া চাই। আমার উন্নয়নসূচির মূল অঙ্গীকারগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
৩৭ দফা প্রতিশ্রুতিতে আরও আছে যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃক্সখলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা ও খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটন রাজধানী হিসেব চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়নেই সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়ার কথা বলেন রেজাউল। নগরীর দখল হয়ে যাওয়া নালা, খাল ও নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলেও জানান তিনি।
ইশতেহার পাঠ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন রেজাউল করিম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, চবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাবেক সাংসদ চেমন আরা তৈয়ব, শাহজাদা মহিউদ্দীন, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, মো. হোসেন, খোরশেদ আলম, বেদারুল আলম চৌধুরী, কমান্ডার মোজাফ্‌ফর আহমদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল হক রাসেল, মহানগর কার্যনির্বাহী সদস্য বখতেয়ার উদ্দীন খান, সাইফুদ্দীন খালেদ বাহার, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, মাহাবুবুল হক সুমন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্য, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর প্রমুখ।
রেজাউলের ৩৭ দফা
১. জলাবদ্ধতা নিরসন : নগরীর সবচেয়ে পুরনো ও বড় সংকট জলাবদ্ধতা তথা জলজট। জলাবদ্ধতা ও জোয়ার জলের স্ফীতি রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। সিডিএ, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ কিছু সেবা সংস্থা এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ওয়াসায় যুক্ত হয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্পে। এসব মহাপ্রকল্প ঠিকভাবে বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকবে।
২. ১০০ দিনের অগ্রাধিকার : জলাবদ্ধতা নির্মূল মহাপরিকল্পনা ও নগর উন্নয়নে ডেল্টা প্ল্যান সঠিকভাবে বাস্তবায়নে যাতে ন্যূনতম বাধা ও দীর্ঘসূত্রতা না হয়, সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সাথে বসে তা তদারকে অগ্রাধিকার দেব। নগরীর দখলকৃত খাল, নালা, নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন উপযোগী করতে নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করব।
৩. যানজট থেকে উত্তরণ : আরেকটি বড় সমস্যা যানজট তথা ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। নগরীতে সড়ক সুবিধার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে আধুনিক সুবিধার পাবলিক যানবাহনের তুলনায় ব্যক্তিগত যান ও রিকশা, ভ্যান, ঠেলার মতো মনুষ্যচালিত যানের সংখ্যা অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে বসে যত দ্রুত সম্ভব এই জটিল সমস্যা দূরীকরণে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেব।
৪. সড়ক শৃক্সখলা ফিরিয়ে আনা : নগরীর সড়ক আছে জনসংখ্যার ঘনত্বের বিপরীতে মাত্র ১৫%। তাছাড়া একটি সড়ক, সেতু বা উড়াল সড়কের নির্দিষ্ট সহনক্ষমতা থাকে। কিন্তু এখানে কোনো নিয়ম চলে না। দৈনিক ৫০ হাজার মেট্টিক টন সহনক্ষমতার একটি সড়কে চলে ১০ লাখ টন ওজনেরও বেশি গাড়ি। এতে দ্রুত সড়ক, সেতু, উড়াল সড়ক সব নষ্ট হয়ে যায়, বাড়ে দুর্ঘটনা যানজট। ট্রাফিক বিভাগ, যানবাহন মালিক, বিআরটিএসহ সড়ক ব্যবহারকারী সবার সাথে বসে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হব। পাশাপাশি ব্যস্ততম পয়েন্টগুলোতে নিরাপদ পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস চালুর উদ্যোগ নেব। পরিবেশ উপযোগী ও উন্নত দেশের আদলে টেকসই সড়ক তৈরি করতে হবে।
৫. নালা নর্দমা, খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ : ফুটপাত থেকে নালা, নর্দমা, খাল, নদী সব দখল হয়ে যাচ্ছে। সবার সমন্বিত উদ্যোগে নাগরিকবান্ধব নগর গড়তে দ্রুত খাল, নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে।
৬. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : প্রায় ৭০ লাখ নাগরিকের মহানগরে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য জমছে। সাবেক মেয়র ঘরে ঘরে বিনামূল্যে বিন বক্স সরবরাহ করে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ কর্মসূচি চালু করেছেন। কর্মসূচি বাস্তবায়নে আরো জোরালো ভূমিকা ও নজরদারি বাড়ানো হবে। বর্জ্য রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট গড়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তৈরি করা হবে। অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের আলাদা ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে রপ্তানি উপযোগী গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরির উদ্যোগ নেয়া হবে।
৭. পর্যটন রাজধানী : চট্টগ্রাম নগরী বিশ্ব পর্যটকদের জন্য চমৎকার এক জনপদ। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে পর্যটন খাত ও সৈকত পর্যটনে আধুনিক সুবিধা যোগ করে এই খাত থেকে নগর উন্নয়নে বাড়তি আয়ের ওপর জোর দেব।
৮. হোল্ডিং ট্যাক্স : ডিজিটাল গৃহশুমারি করে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হন, ওভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে। নাগরিক সেবা চালু রাখতে করদাতাদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতাও পূর্বশর্ত। কর বিভাগে সর্বোচ্চ নজরদারি ও স্বচ্ছতা-দক্ষতা ফিরিয়ে আনা হবে।
৯. চলমান প্রকল্প, মেগা প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নে বন্দরসহ সব সেবাখাতের উন্নয়ন কাজে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে জোরদার ভূমিকা ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন।
১০. বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরিক পরিসেবা কার্যক্রম পুনরায় চালু করা।
১১. পরিবেশ ও ভূ প্রকৃতির ক্ষতি না করে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু রাখা।
১২. ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হব। সুনীল অর্থনীতির সম্পদ আহরণে সরকার যে ২৬টি খাত নির্ধারণ করেছে তার বেশিরভাগই চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। চট্টগ্রামের উদ্যোক্তারা যাতে এই খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন এবং চট্টগ্রামের মানুষের যাতে কর্মসংস্থান হয়, তার পরিবেশ সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেব।
১৩. পাহাড়, হ্রদ, বনানী সংরক্ষণ, সবুজায়ন, বেড়িবাঁধ ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে উপকূলসহ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, প্লাবন থেকে নগর সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হবে।
১৪. কর্ণফুলী ও হালদা নদী দখল, দূষণমুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌ-রুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ-স্টিমার সেবা চালু করে নগর পরিবহনের বাড়তি চাপ কমানো হবে।
১৫. মশকমুক্ত নগর গড়তে কার্যকর ও পরিবেশ উপযোগী কীটনাশক প্রয়োগ ও বদ্ধ ডোবা, জলাশয় নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হবে।
১৬. অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখল নিরুৎসাহিত করা হবে কঠোরভাবে।
১৭. নগরীর ব্যস্ততম সব কেন্দ্রে আধুনিক পাবলিক টয়লেট ও মহিলাদের জন্য নিরাপদ টয়লেট তৈরি করা হবে।
১৮. সব সড়ক ও গলি-উপগলিতে পর্যাপ্ত এলইডি সড়ক বাতি ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। এসব স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণেও সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে।
১৯. শিক্ষাসেবা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে পড়ে না। তবুও স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকবে।
২০. স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে নিচের উদ্যোগগুলো নেয়ার ইচ্ছে রাখি।
ক. নগরীর মানবতাবাদী ধনাঢ্য ব্যক্তি ও কর্পোরেট গ্রুপকে এখাতে যুক্ত করার চেষ্টা করব। খ. স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনব। নিরাপদ খাদ্য, পানীয়জল ও পুষ্টির উপর সর্বোচ্চ নজরদারি থাকবে। শিশু অপুষ্টি নির্মূলে স্কুল ফিডিং ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকায় মুখরোচক দূষিত ও ভেজাল খাদ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হবে। খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। গ. চলমান হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহিঃসেবা কার্যক্রম উন্নত ও নতুন বহিঃবিভাগ চালু। ঘ. মেমন হাসপাতালসহ সব চালু হাসপাতালে চিকিৎসা ও প্রসূতি সেবা উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা। বন্ধ থাকা হাসপাতাল ও মাতৃসেবা কেন্দ্রগুলো পুনঃচালু। পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ ও মেমন-২ হাসপাতালকে ১০০ বেডে উন্নীতকরণ। ঙ. কর্পোরেশনের আওতাধীন মিডওয়াইফারি, আইএইচটি ও ম্যাটসের আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন। চ. কর্পোরেট ও ধনাঢ্যদের সহযোগিতা পেলে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীতে পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ বেডের হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে। এতে করোনা ও ক্যান্সার চিকিৎসায় আলাদা পূর্ণাঙ্গ ইউনিট থাকবে। ছ. নগরের প্রতি ওয়ার্ডে একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যাতে অসচ্ছল নাগরিকরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পায় এবং বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট গঠন করা হবে।
২১. রাজস্বসহ সব সেবাখাতের নিজস্ব পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করে সব সেবাকে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা হবে। এতে নাগরিকদের অভিযোগ ও তাৎক্ষণিক সেবা নিশ্চিতকরণ হবে।
২২. সংশ্লিষ্ট সব সেবা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে নগরীর সব উন্নয়ন ও সেবাখাত এক ছাতার নিচে আনার ব্যবস্থা।
২৩. আইন-শৃক্সখলা পরিস্থিতি ও নাগরিক নিরাপত্তা জোরদারে সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সির সহযোগিতায় প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিক সমন্বয়ে অপরাধ নির্মূল কমিটি গঠন।
২৪. সাইবার দূষণ ও আসক্তি নির্মূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রাখার উপর জোর দেয়া হবে।
২৫. মেয়েদের নিজস্ব নিরাপত্তা সুরক্ষায় কিশোরীদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হবে এবং মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টি করে প্রতি ওয়ার্ডে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
২৬. মেয়েদের জন্য আলাদা পরিবহন সেবাসহ নগরীতে যাত্রীসেবা উন্নত ও আধুনিকায়ন করতে পর্যাপ্ত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালুর উদ্যোগ।
২৭. দুস্থ ও বিশেষ চাহিদার নাগরিক ও শিশুদের বাড়তি যত্ন ও সেবার পাশাপাশি তাদের মেধা বিকাশে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া হবে।
২৮. প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কারিগরি ও আত্মকর্মসংস্থান উপযোগী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইন্টারনেট শিক্ষাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ।
২৯. নগরীর উন্মুক্ত স্থান বা সরকারি জমি লিজ নিয়ে আধুনিক ইকোপার্ক, থিমপার্ক, শিশুপার্ক গড়ে তুলে সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করে নাগরিক এবং শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ।
৩০. রাস্তার যত্রতত্র অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, হাইড্রোলিক হর্ন, মাইক বিশেষ করে রাত দশটার পর মাইক ব্যবহার ও শব্দ দূষণ বন্ধ করার উদ্যোগ নেব।
৩১. ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সৃজনশীল সব কাজে উৎসাহ ও বইপড়া কর্মসূচি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করা হবে।
৩২. সাধ্য ও সহযোগিতার মেলবন্ধনে বহুমুখী সাংস্কৃতিক ও ডিজিটাল পাঠাগার কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও অনুশীলনকে সর্বাধিক উৎসাহিত করা হবে।
৩৩. নগরীর বিউটি স্পটে পাহাড় কাটা বন্ধ, জলাধার, পুকুর, দিঘি ভরাট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
৩৪. মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণ, বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ ও সুরক্ষায় মনোযোগ দেয়া হবে। নগরীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধ লাঞ্চিতা মা-বোনদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হবে।
৩৫. কিশোর অপরাধী গ্যাং, মাদক ও অপরাধের আখড়া গুঁড়িয়ে দিয়ে নাগরিক স্বস্তি নিশ্চিত করা হবে।
৩৬. নাগরিক তথ্যসেবাসহ সব সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে।
৩৭. নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলাসহ সমষ্টিগত স্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধ নাগরিক গড়ে তুলতে প্রতি ওয়ার্ডে (পরবর্তীতে মহল্লাও) নাগরিক উদ্ধুদ্ধকরণ পর্ষদ গঠন করা হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে সমন্বয়ক করে সর্বস্তরের বিশিষ্ট নাগরিক সমন্বয়ে এই পর্ষদ গঠিত হবে। প্রতি মাসে তারা বৈঠক করে সচেতনতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিরাপদ আধুনিক নগর গড়ার প্রত্যয় শাহাদাতের
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে কোটি টাকা মূল্যের বনভূমি উদ্ধার