১৯৭১ সালের দুঃসহ সেই দিনগুলি। বর্বর পাকিস্তানি বাহিনি বাঙালি জাতির ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর গণহত্যা চালায়। নির্মম-নির্দয় সেই হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল বিশ্ববিবেক। দেশের আপামর জনতার পাশাপাশি এগিয়ে এসেছিলেন পৃথিবীর মুক্তিকামী, মানবতাবাদী অনেক মানুষ। হয়েছিলেন ভিনদেশী সহযোদ্ধা। তেমনি একজন মার্কিন সংগীত শিল্পী জর্জ হ্যারিসন। আজ মানবতাবাদী এই মহান শিল্পীর সপ্তদশ মৃত্যুবার্ষিকী।
জর্জ হ্যারিসনের জন্ম ১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি ছিলেন গায়ক ও গিটার বাদক এবং বিশ্বের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল বিটল্সের সদস্য। গীতিকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের খ্যাতিমান সেতার বাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের আহ্বানে জর্জ হ্যারিসন নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন প্রাঙ্গনে এক অবিস্মরণীয় কনসার্টের আয়োজন করেন। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলা এবং শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান। অসাধারণ এই কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট। রবি শঙ্করের সেতারের মূর্ছনা, হ্যারিসনের কণ্ঠে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদাত্ত আহ্বানের পাশাপাশি অবিস্মরণীয় এই কনসার্টে আরো অংশ নিয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, রিঙ্গো স্টার, লিওন রাসেল, ওস্তাদ আলী আকবর ও ওস্তাদ আল্লা রাখা। এই কনসার্টে কাজ করতে গিয়েই বাংলাদেশের সাথে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল হ্যারিসনের। রবি শঙ্করের মতো বাংলাদেশে নির্বিচার গণহত্যা আর মানুষের দুঃখ-দুর্দশা গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল তাঁকে। সেই থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল তাঁর অটুট বন্ধন। বিটল্সের প্রতিটি অ্যালবামেই হ্যারিসনের নিজের লেখা ও সুর করা কিছু গান থাকতো। বিটল্স ভেঙে যাবার পর এককভাবে গান গাইতেন হ্যারিসন। তাঁর গাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে : ‘মাই সুইট লর্ড’, ‘গিভ মি পিস অন আর্থ’, ‘অল দোজ ইয়ার্স এগো’, ‘গট মাই মাইন্ড সেট অন ইউ’, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর প্রয়াত হন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জর্জ হ্যারিসন।