নানা ভোগান্তির পর স্বস্তি! জন্মনিবন্ধন করতে এখন থেকে আর মা-বাবার জন্মসনদ লাগবে না।
গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে মা-বাবার জন্মসনদ বাধ্যতামূলক ছিল। এই নিয়মে শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে শুরুতে মা বাবার জন্মনিবন্ধন করতে হতো। শিশুর নিবন্ধনের জন্য মা-বাবারসহ মোট তিনটি নিবন্ধন করতে গিয়ে সার্ভারে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টির ফলে প্রয়োজন হতো বেশি সময়ের। এতে কাউন্সিলর এবং ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে লেগে থাকত মানুষের দীর্ঘ লাইন। এখন থেকে আগের নিয়ম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র হাসপাতালের বার্থ সার্টিফিকেট কিংবা টিকা সনদ দেখালেই শিশুদের জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন হবে। নতুন এই নিয়মের ফলে পথ শিশুসহ বহু শিশুর জন্মনিবন্ধনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা একটি সংকটের সুরাহা হলো বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
সূত্র বলেছে, শুরুতে জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারটি খুব সহজ থাকলেও ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি নতুন একটি নিয়ম চালু করা হয়। ওই সময় আগের নিয়ম পরিবর্তন করে ২০০১ সালের পর জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন করতে হলে তার বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন সনদ অবশ্যই প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ ২০০১ সালের পরে জন্ম নেয়া সকল মানুষের জন্মনিবন্ধন করতে গেলে শুরুতে ওই শিশুর মা বাবার জন্মনিবন্ধন করতে হচ্ছিল। এই নিয়ে ভয়াবহ রকমের এক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছিল দেশে। প্রতিদিনই বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ এবং ওয়ার্ড কাউন্সিললের কার্যালয়ে শত শত মানুষের লাইন তৈরি হচ্ছিল। একজন মাত্র কম্পিউটার অপারেটরের পক্ষে তিনজনের জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করে একটি জন্মনিবন্ধন তৈরি করা কঠিন হয়ে উঠে। মানুষের ভোগান্তি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি হয়। প্রশ্ন তোলা হয় যে মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও সন্তানের জন্মনিবন্ধন করার জন্য মা-বাবাকে কেন জন্মনিবন্ধন করতে হবে? কিন্তু এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে ছিল না।
জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়া বহু মানুষের কাছ থেকে বাড়তি টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন ঝুলে ছিল। যাদের মা বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে কিংবা বাবা মায়ের একজনের সাথে অপরের যোগাযোগ নেই এই ধরনের শিশুদের পাশাপাশি পথশিশুদের জন্মনিবন্ধন পুরোপুরি ঝুলে গিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও নানাভাবে অভিযোগ পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। অবশেষে গত ২৭ জুলাই থেকে ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন’ আবেদন করতে সফটওয়্যারে মা-বাবার জন্মসনদ চাওয়া হচ্ছে না।
রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন থেকে হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পর দেওয়া ছাড়পত্র বা টিকার কাগজ যেকোনো একটি প্রমাণ দেখিয়ে শিশুর জন্মনিবন্ধন করা যাবে। এর ফলে পথশিশুসহ অনেক শিশুদের জন্মনিবন্ধন করার ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল তা কেটে যাবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রামের একাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নতুনভাবে জন্মনিবন্ধন করা সম্ভব হচ্ছে বলে উল্লেখ করে জানান, এখন বিষয়টি অনেক সহজ হয়ে গেছে। এতে মানুষের ভোগান্তি কমে যাবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।