জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তিন উপদেষ্টার কমিটি

ডিসি নিয়োগে আর্থিক লেনদেন

| শুক্রবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৪ at ৪:০৫ পূর্বাহ্ণ

জেলাপ্রশাসক বদলাতে গিয়ে বিপুল অংকের আর্থিক লেনদেনের যে অভিযোগ জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধে উঠেছে, সে বিষয়ে তদন্ত করতে অন্তর্র্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্র্বতী প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, কমিটি করা হয়েছে, এটা তলিয়ে দেখার, তদন্ত করার জন্য কমিটি করা হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কমিটিতে থাকবেন। সাথে অন্য কাউকে নিতে পারবেন। ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ নিয়ে দৈনিক কালবেলা পরপর দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রতিবেদনে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা আদানপ্রদানের কিছু ক্রিনশট প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ওই আলাপচারিতা একজন যুগ্ম সচিবের সঙ্গে জনপ্রশাসন সচিবের। ডিসি নিয়োগে ‘৫ থেকে ১০ কোটি টাকা’ লেনদেনের কথা হয়েছে সেখানে।

ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, এই অভিযোগকে আমি মূল্যহীন মনে করি। ইটস আ ফেইক নিউজ।

পরে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটি হওয়ার কথা জানান উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে শারমীন মুরশিদ বলেন, দেখুন, যে ক্লিপটা সোশ্যাল মিডিয়াতে বহুল প্রচারিত হয়ে গেল, সেটা কতখানি এআই প্রডিউসড আর কতখানি রিয়েল, কতখানি ফেইকএটা সাধারণ মানুষ বলতে পারে না। তাৎক্ষণিক যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে, সেটা হল এটার টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রিটি কী। এটা জানার জন্য ইতোমধ্যে আমাদের কেবিনেটে কথা হয়ে গেছে। এটা তদন্ত করে দেখতে হবে। আমাদের প্রশাসনে বা আমাদের অত্যন্ত দায়িত্বশীল অধিষ্ঠিত কর্মকর্তাদের কোনো রকমের দায়িত্বহীনতা মেনে নেওয়া যাবে না। সেটাও আমাদের অনুশাসনের অধীনে আনব আমরা এবং আনতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে কী বলেছেন জানতে চাইলে সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টাদের এটা নিয়ে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কমিটি করে তারা এটা দেখবে। প্রধান উপদেষ্টা অবশ্যই কনসার্ন, কেন হবে না? একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে নিয়ে এরকম একটা কথা কেন উঠল, এটার উৎস কী? এটা তলিয়ে দেখতে হবে। আমরা তো আর সেই আগের অ্যানালগ যুগে নেই। সে কারণে আমাদের বাড়তি কষ্ট হচ্ছে। যেটা সোশাল মিডিয়াতে আসছে লাফ দিয়ে ধরে নিতে পারছি না, যে এটাই সবশেষ সত্যি। আমাদের এটাকে যাচাই করতে হয়। প্রধান উপদেষ্টা কী নির্দেশে দিয়েছেন জানতে চাইলে শারমীন মুরশিদ বলেন, উনিইতো বলেছেন, উনিই বলেছেন কমিটি করে তদন্ত করতে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনে অন্তর্র্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৫৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে দিনভর হট্টগোল করেন আগের সরকারের আমলে বঞ্চিত উপসচিবরা; শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন। নতুন দায়িত্ব পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে পরদিনই প্রত্যাহার করে নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চার জনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। আর একজন উপসচিবকে করা হয় ওএসডি। হট্টগোলের ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় কমিটি। এর মধ্যে এক যুগ্ম সচিবের কক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি চেক এবং ডিসি নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু চিরকুট উদ্ধারের খবর দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ঢাকার একটি দৈনিক। সেই প্রতিবেদন নিয়ে তোলপাড় তৈরি হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদিনভর বিক্ষোভে অচল সিভাসু নিজ ক্যাম্পাস থেকে উপাচার্য দাবি দাবি আদায়ে ৪ দিনের আল্টিমেটাম
পরবর্তী নিবন্ধজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ সমন্বয়ক-সহসমন্বয়কের পদত্যাগ