পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেন, ঈদের সময় মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ ও পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো একযোগে দায়িত্ব পালন করবে। আসন্ন ঈদুল আজহা নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তরিকভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার সকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। ঈদকে কেন্দ্র করে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য অনুষ্ঠিত সভায় দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপাররা যুক্ত ছিলেন।
এ সময় তিনি কোরবানির পশু নির্বিঘ্নে পরিবহন, এক হাটের পশু জোর করে অন্য হাটে নিয়ে যাওয়া বন্ধ, হাইওয়ের পাশে পশুর হাট না বসানো, জাল টাকা লেনদেন প্রতিরোধ, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি রোধ, শপিং মল ও মার্কেটে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।
অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, পুলিশের সদস্যদের অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করেছে। মাঠপর্যায়ে পুলিশের কার্যক্রম যেন ঝুঁকিমুক্ত থাকে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। টহল কার্যক্রম, সশস্ত্র অপরাধী বা চরমপন্থী দমনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রয়োজনে পুলিশ অস্ত্র বহন করবে।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট উত্তর নতুন বাংলাদেশে পুলিশের অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি শুধু জনশৃঙ্খলা, বিশেষ করে মিছিল ও সমাবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আলোচনায় এসেছে। এক্ষেত্রে জীবনবিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আপাতত সেটা নিয়েই এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা। টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও জননিরাপত্তার বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সন্দেহ নেই, উন্নয়ন–অগ্রগতির পথে আমরা হাঁটছি। কিন্তু জননিরাপত্তা–সামাজিক শৃঙ্খলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক–অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নিয়মনীতির যথাযথ প্রতিপালন ইত্যাদি জরুরি বিষয় এখনও অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। অপরাধ সমাজের অন্যতম গুরুতর ব্যাধি এবং এই ব্যাধি উন্নয়ন–অগ্রগতির অন্যতম প্রতিবন্ধক। স্বাধীনতার পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে এ রকম তিক্ত অভিজ্ঞতা ইতঃপূর্বে আমাদের সঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজে অপরাধ বৃদ্ধির মতো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির উদ্ভব কিংবা জিইয়ে থাকা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত।
তাঁরা বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, অপরাধ বেড়েই চলেছে। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, চলন্ত বাসে ছিনতাই, ধর্ষণ, রাহাজানি প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। বলা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি খোদ রাজধানীতে আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, খুন, ডাকাতি, মব–সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাহাজানিসহ ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, অপারেশন ডেভিল হান্টে এই অপরাধীদের সবাইকে একে একে ধরা হবে। কিন্তু কোথাও অঘটন না ঘটা পর্যন্ত কেউ ধরা পড়ে না। বিশ্লেষকরা বলেন, বাস্তবতা পর্যালোচনায় বলা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দেশবাসীর জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশবাসী রাস্তায় চলার সময় দিন, দুপুর, রাত্তেকখনোই নিরাপদবোধ করছে না। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অরাজকতা দেখতে হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা। ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ হচ্ছে। এছাড়া প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনা, গণপিটুনিতে হত্যা, বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করারও ঘটনা রয়েছে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ কেউ কেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছেন। আমরা চাই সরকার জননিরাপত্তা নিশ্চিতে যা যা করা প্রয়োজন সেইসব পদক্ষেপ আগে নেবে। কারণ দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অবশ্যই সরকারের দায়িত্ব।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের অপরাধ পরিস্থিতি, সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের সক্ষমতা এবং পুলিশের কার্যকর মোকাবেলার সক্ষমতা গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের উদ্বেগকে উপেক্ষা করা উচিত হবে না। একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছতে হলে সরকার, পুলিশ প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে একটি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। জনবান্ধব একটি পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তোলাই দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশকেই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।