জনগণের সমর্থন নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই : তারেক

চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য । আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন হবে, জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করেন, আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমরা যাদের ভাবতাম তারা মাঠে নেই বা মাঠে দুর্বল, আল্লাহর ওয়াস্তে একথা মন থেকে সরিয়ে দিন। আগামী নির্বাচন অনেক কঠিন হবে। যদি আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে থাকত বা থাকতে পারতো, সেক্ষেত্রে নির্বাচন যতটা কঠিন হতো তার চেয়েও আগামী নির্বাচন আরও কঠিন হবে। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, অনেক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে।

তিনি গতকাল বুধবার নগরের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রকাঠমো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ে দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এসময় বিএনপি ক্ষমতায় নয়, জনসমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে চান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমরা অর্থাৎ বিএনপি দেশ পরিচালনা করতে চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে। আমরা অতীতে শুনেছিলাম, একটি দলের একজন নেতা ভারত থেকে এসে বলেছিল ‘আমরা তাদের (ভারতকে) রিকুয়েস্ট করে এসেছি যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় রাখতে হবে’। আমরা বিএনপি, আমরা এসব বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণের সমর্থন নিয়েই আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই। আমরা জনগণের কাছে যেতে চাই, জনগণের দুয়ারে যেতে চাই, জনগণকে বলতে চাইদয়া করে আমাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দিন।

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ, . মওদুদ আলমগীর পাবেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এবি এম মোশররফ, হারুনুর রশীদ, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, রেহেনা আক্তার রানু, অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী, তালুকদার খোখন, ডা. মাহাদী আমিন, ব্যারিস্টার আবু সাইম, মাহমুদা হাবিবা, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমীন পুতুল, ইসরাফিল খসরু ও আতিকুর রহমান রুমন। উপস্থিত ছিলেন গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, আবুল হাশেম বক্কর, এরশাদ উল্লাহ, নাজিমুর রহমান।

তারেক রহমান যা বলললেন :

সমাপনী বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, আমরা কেউ ক্ষমতায় যাব না, আপনারা কেউ কিন্তু ক্ষমতায় যাবেন না, আপনারা মানুষের সমর্থন পেলে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতা দেবে না, মানুষ আপনাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে। পার্থক্যটা বুঝতে হবে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ক্ষমতা ছাড়া কিছু বুঝত না বলেই দেশের মানুষের জন্য তারা কাজ করেনি। তাদের বিরুদ্ধে আজ বিভিন্ন অভিযোগ করছেন? এই কারণে করছেন তারা জনসমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়নি। ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় ছিল। আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাই জনগণের সমর্থন নিয়ে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ৫ আগস্টের পর কিছু কিছু সহকর্মীর মনে অদ্ভূত একটি অনুভব এসেছে, আমরা বোধ হয় সরকার গঠন করে ফেলেছি। আমরা সরকার গঠন করিনি, আমরা সরকারি দলে বা সরকারে নেই। এখনো বিরোধী দলেই আছি। যে সকল সহকর্মী ভুল উপলব্ধি করছেন, তাদের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আচরণের জন্য দল এবং দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে কিছু ঘটনা ঘটেছে।

এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রায় বলেন বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা আছে। এইা আস্থাটা ধরে রাখতে হবে। ধরে না রাখলে তো ভোট পাবেন না। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব জনগণের না, আপনার (দলীয় কর্মী)। আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখি। জনগণের আস্থা ধরে রাখে যায় সেরকম কাজ করব।

তিনি বলেন, আজ যারা উপস্থিত আছেন তারা একেকজন বিএনপির প্রতিনিধি। আপনি যেখানে থাকেন, যতটুকু জায়গা নিয়ে আপনার পরিচিতি সেখানে আপনাকে প্রত্যেকটা মানুষ আপনাকে বিএনপির নেতা বা কর্মী হিসেবে চিনে। আপনি কেন এমন কিছু করবেন, যে কথা ও আচরণ দ্বারা দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার এলাকার মানুষ তো আপনার স্বজন। যখন ভোট হবে তখন কোন মুখে আপনি তাদের কাছে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইবেন। যদি আপনি বিতর্কিত কিছু করে থাকেন তখন সে আপনাকে অপমান করবে।

তিনি বলেন, আমরা ডামি ও নিশিরাতের নির্বাচন বিশ্বাস করি না। লাইনে দাঁড়িয়ে, নিরাপত্তার সাথে স্বচ্ছভাবে, ভয়হীনভাবে মানুষ ভোট দিবে, আমরা সেটাই বিশ্বাস করি। সেটা অর্জন করতে হলে আপনাদের মধ্যে অনেক কিছুর পরিবর্তন করতে হবে। জনগণকে সাথে রাখুন এবং জনগণকে পাশে রাখুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, আপনি যেহেতু এ দলের প্রতিনিধি, আপনার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, একটু ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন। আপনি ছাত্রদল, যুবদল, মহিলাদল কিংবা স্বেচ্ছাসেবক দল, যাই হোন না কেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এটা একটু চিন্তা করুন বহু ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রকে যদি উপড়ে ফেলতে হয়, এ ষড়যন্ত্রকে যদি উপড়ে আসতে হয়, আমাদের ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের ধৈর্য্যশীল হতে হবে, আচরণ সেরকম হতে হবে।

৩১ দফার গুরুত্ব তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, এই সেই চট্টগ্রাম যেখান থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। সেই চট্টগ্রামের মাটি থেকে আজ আমরা আপনাদের সামনে ৩১ দফা তুলে ধরছি। এটা প্রথমে ২৭ দফা ছিল। পরবর্তীতে পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত যতগুলো দল ছিল সকল দলের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা দিয়েছি। কাজেই বলতে পারি, এই ৩১ দফা পুরো বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক দলগুলোর পক্ষে উপস্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে আগামী দিনের দেশ নিয়ে পরিকল্পনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সবকিছুই কমবেশি আছে। তবে এটি কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় যে, এখানে চেঞ্জ করা যাবে না। অবশ্যই চেঞ্জ করা যাবে। কারও যদি কোনো প্রস্তাব থাকে, আমাদের পাঠালে, সেখানে যদি ভালো কিছু থাকে, তাহলে আমরা গ্রহণ করব।

তিনি বলেন, ৩১ দফা আমরা যদি শুধুমাত্র এখানে উপস্থিত ৮৫৯ জনের মধ্যে রেখে দিই, তাহলে কিন্তু আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সাধন হবে না। আমরা দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে চাই, এই কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

প্রশ্নোত্তর পর্ব :

প্রশিক্ষণ কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ১০ সাংগঠনিক জেলা থেকে ৮৫৯ জন উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত তারেক রহমানকে তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তিনি সেগুলোর জবাব দেন। ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শুধু ফেনী নয়, সারা দেশেই মনুষ্য সৃষ্ট বা প্রকৃতি সৃষ্ট যে কারণেই হোক না কেন প্রায় বন্যা হয়। বন্যা হওয়ার অন্যতম মূল কারণ হচ্ছেবর্ষার সময় ভারত তাদের পানিগুলো ছেড়ে দেয়। অন্য সময় আমাদের ন্যায্য হিস্যা থেকে তারা পানি নিয়ে নিচ্ছে, দিচ্ছে না। এ বিষয়টি আমরা জাতিসংঘ বলেন, আন্তর্জাতিক আদালত বলেন, যত ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম আছে, সুযোগ পেলে আমরা বিষয়গুলো অবশ্যই সেখানে তুলব। এ সময় দেশের ভেতরের বিভিন্ন খাল ভরাট হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, খালনদী খনন করতে হবে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে বলেন, আর্ন্তজাতিক কিছু ফোরাম আছে, জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ আরও কিছু ফোরাম আছে। অবশ্যই তাদের সহায়তা আমরা নেব। বাইরের যেসব আরও সংস্থা আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলব। আমার দেশের সম্পদ, দেশের মানুষের সম্পদ যে বা যারা এনে দিতে পারবে, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব।

জ্বালানি খাত নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচাররা আমাদের এনার্জি সেক্টরকে জাস্ট লুটপাটের উদ্দেশে ব্যবহার করেছে। এ সেক্টরটাকে এমন একটা অবস্থায় নিয়ে গেছে যে, এর খেসারত এদেশের প্রত্যেক মানুষকে দিতে হচ্ছে। জ্বালানি শক্তি এমন একটা শক্তি, এটা খুবই মূল্যবান। এটা ব্যবহার করে ফেললে আর রিটার্ন পাচ্ছেন না। আমাদের দেশে এখনো প্রচুর গ্যাসের খনি আছে। সেখান থেকে গ্যাস বের করব। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের জন্য বাপেক্সকে কোনো সুযোগ দেওয়া হতো না। এর পরিবর্তে বিদেশ থেকে দুইগুণতিনগুণ দামে এলএনজি গ্যাস কিনে আনা হয়েছে, কয়লা কিনে আনা হয়েছে।

প্রশ্নকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেননগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, তরুণ রাজনীতিবিদ সাঈদ আল নোমান, জাসাস চট্টগ্রাম বিভাগের সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম, নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হায়দার, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব পার্থ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান, নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির আহমেদ।

অন্যান্য : মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, জনগণের ভোটাধিকার যতদিন প্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন আমরা রাজপথে থাকব।

সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ৩১ দফা একদিনে প্রস্তুত হওয়া কোনো ড্রাফট বা দলির না। এটা প্রস্তুত করতে গিয়ে বিএনপি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছে এবং সেখানে বিভিন্ন পেশাজীবী এবং শ্রমজীবী মানুষের সাথে আলাপআলোচনা করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে আলাপআলোচনা করে সৃষ্টি করেছেন। এই দলিলটি তারেক রহমানের অনন্য অবদান হিসেবে বাংলাদেশে লিপিবদ্ধ থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতের উচিত বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা : উপদেষ্টা মাহফুজ
পরবর্তী নিবন্ধহাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে