আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে হয়েছে। কোথাও জনগণের রায় গেছে ডেমোক্রেটিক পার্টির গাধা প্রতীকে, আবার কোথাও গেছে রিপাবলিকানের হাতিতে। ভোট গ্রহণ শেষে এখন চলছে গণনা। ফলাফলে হাতি-গাধার লড়াই চলছে হাড্ডাহাড্ডি। এনিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট শিবিরে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। তবে এখনও ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত হয়নি কোনো প্রার্থীর। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জো বাইডেন ২৪৮টি ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত করে এগিয়ে আছেন। পক্ষান্তরে, ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪ ইলেক্টোরাল ভোট। কিন্তু ব্যাটল গ্রাউন্ড খ্যাত ছয় অঙ্গরাজ্যে ঝুলছে ভাগ্য। যেগুলোর ফলাফলই নির্ধারণ করবে পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। জানা যায়, মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট ৫৩৮টি। এখনও বাকি রয়েছে আরও ৭৬ ইলেক্টোরাল ভোট। এ থেকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের দরকার ২২ ইলেক্টোরাল ভোট, রিপাবলিকান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দরকার ৫৬ ইলেক্টোরাল ভোট। ওয়াশিংটন ডিসির ৩ জনসহ ৪৩৮ জন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ (নিম্নকক্ষ) এবং ১০০ জন সিনেটর (উচ্চকক্ষ) মিলে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট গণনা করা হয়। ইলেক্টোরালের সঙ্গে সঙ্গে পপুলার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। ফঙ নিউজের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে, মোট পপুলার ভোটের ৫০ শতাংশ পেয়েছেন জো বাইডেন। অপরদিকে, ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পেয়েছে ট্রাম্প।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, অঙ্গরাজ্যগুলোর সব ভোট গণনা সম্পন্ন করা প্রয়োজন। আর বৈধ ব্যালটের গণনা শেষ করতে অনেক অঙ্গরাজ্যেই নিয়মিতভাবে কয়েক দিন লেগে যেতে দেখা যায়। আর এ বছর ভোট প্রদানের হার অতীতের যেকোনো নির্বাচনকে ছাপিয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ডাকযোগে ও ৩ নভেম্বরের আগেই বহু ভোটার ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দিয়েছেন।
যে অঙ্গরাজ্যগুলোর ফল বাকি : (১) আলাস্কা- এ রাজ্যে ঐতিহ্যগতভাবেই এগিয়ে থাকেন রিপাবলিকান প্রার্থীরা। এবারও এ পর্যন্ত পাওয়া ভোটের হিসাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। তবে চূড়ান্ত ফলাফল এখনও আসেনি। এ অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ৩টি ইলেক্টোরাল ভোট। (২) জর্জিয়া- এ অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোট। রাজ্যটিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে কিছুটা এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। (৩) মিশিগান- এ অঙ্গরাজ্যের এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ভোটে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে দুই প্রার্থীর ব্যবধান এতই কম যে যেকোনো সময় পাল্টে যেতে পারে অবস্থান। এখানে এখনও চূড়ান্ত ফল ঘোষণা হয়নি। এ অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ১৬টি ইলেক্টোরাল ভোট। (৪) নেভাদা- অঙ্গরাজ্যটিতে বরাবরই ভালো করেন ডেমোক্রেটরা। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী সামান্য ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন জো বাইডেন। ৬টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে রাজ্যটিতে। (৫) নর্থ ক্যারোলিনা- নর্থ ক্যারোলিনায় এখন পর্যন্ত ভোট অনুযায়ী এগিয়ে আছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ রাজ্যে রয়েছে ১৫টি ইলেক্টোরাল ভোট। (৬) পেনসিলভ্যানিয়া- ২০টি ইলেক্টোরাল ভোটের এ রাজ্য ব্যাটেলগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এবার এ রাজ্যে এগিয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে রাজ্যটির মেইল ইন ব্যালট এখনও গণনা হয়নি।
এগিয়ে বাইডেন : ইলেক্টোরাল ভোটে এগিয়ে থাকা ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন তাঁর সমর্থকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ট্রাম্প বা আমি নিজেকে জয়ী ঘোষণার কেউ নই। এটা আমেরিকার জনগণের সিদ্ধান্ত।’ নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার দাবির প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেছেন, ‘এই নির্বাচনে কে জিতেছেন আমি বা ট্রাম্প তা ঘোষণা দেওয়ার কেউ নই। এটি মার্কিন জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়।’ তিনি তাঁর সমর্থকদের শান্ত থাকারও আহ্বান জানান। বাইডেনের শীর্ষ উপদেষ্টা দাবি করেছেন, আজ আমরা জয়ী হতে চলেছি। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘সব কিছু শেষ হওয়ার পথে’। আর তা আমাদের পক্ষেই হচ্ছে।
নিজের জয় দাবি ট্রাম্পের : ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই নিজের জয় দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট গণনার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে মার্কিন গণমাধ্যমগুলো ভোট গণনা নিয়ে ট্রাম্পের তোলা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, ভোট গণনা চলার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজের জয় দাবি করেছেন। হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুম থেকে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচনে জয়ী হয়েছি। এটা (ভোট গণনা) মার্কিন জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।’ তিনি ভোট গণনার অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ারও ঘোষণা দেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমে দৃশ্যত ট্রাম্প এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি ডাকযোগে গ্রহণ করা ব্যালটের গণনা বন্ধ করতে চান।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভোটের ফলাফল ঘোষণার আগে হোয়াইট হাউস থেকে এভাবে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করাটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য বেপরোয়া হামলার শামিল। আর তা-ও এমন এক সময় করা হলো যখন পুরো দেশ করোনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ ও বিভক্তির মধ্য দিয়ে সময় পার করছে।
এদিকে ট্রাম্পের আদালতে যাওয়ার হুমকির জবাবে বাইডেনের নির্বাচনী শিবির বলেছে, আইনি লড়াই মোকাবিলায় তাঁদের আইনজীবীরাও তৈরি রয়েছেন।