ভাইকে মারধরের খবর পেয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সোহাগ। এরপর পাশের একটি টং দোকান থেকে ছুরি এনে তা দিয়ে এলোপাতাড়ি তিনজনকে আঘাত করেন। এর মধ্যে একজনের পেটে, একজনের ঘাড়ে এবং আরেকজনের বুকে লাগে ছুরি। এদের মধ্যে হাশেম নামে একজনের মৃত্যু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে ফৌজধারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন আগ্রাবাদে মোটরসাইকেল র্যালিতে উচ্চস্বরে সাউন্ডবঙ বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার সোহাগ (২২)।
জবানবন্দিতে সোহাগ বলেন, খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখি ভাইকে (মহসীন) মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে। একপর্যায়ে আমি রেগে গিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসের সামনে ফুটপাতের উপর থাকা একটি টং দোকান থেকে কনডেন্সড মিল্ক কাটার ছোরা নিই। সেই ছোরা দিয়ে ভাইকে যারা মারধর করছে তাদের উপর এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকি। এতে তিনজন ছুরিকাহত হন। এরপর আমি পালিয়ে সিএন্ডবি কলোনিতে চলে যাই।
সোহাগের জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) শাহাবুদ্দিন আহমদ আজাদীকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আগ্রাবাদের ওই ঘটনায় ডবলমুরিং থানা পুলিশ মোট ১০ জনকে আদালতে উপস্থাপন করেছে। এর মধ্যে প্রধান আসামি সোহাগ দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে আরও বিষদ জানতে বাকিদের মধ্য থেকে ৫ জনের ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।
এর আগে এই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বুধবার রাতে নিহত সাউন্ড সিস্টেম মেকানিক হাশেম খানের স্ত্রী জরিনা বেগম এবং মহসীন নামে অপর এক যুবকের মা মাফিয়া বেগম বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
হাশেমকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী জরিনা বেগমের দায়ের করা হত্যা মামলায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে পাঁচ থেকে ছয়জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। তাছাড়া যাকে মারধরের মাধ্যমে সংঘর্ষের সূত্রপাত, সেই মহসীনের মা মাফিয়া বেগমের দায়ের করা মারধরের মামলায় ২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, পৃথক দুটি মামলায় এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতক সোহাগসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হাশেম খানের স্ত্রীর দায়ের করা হত্যা মামলায় ৮ জন এবং অপর মামলায় আরো ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মাসুদ (৪১), সোহাগ (২৮), মহসীন (৩০), সাহাব উদ্দিন (২৬), আলী আকবর (৬০), মাসুদ রানা (২৮), মো. হেমায়েত ওরফে অপু (২৫) ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। অপর মামলায় গ্রেপ্তার হন ফরিদ উদ্দিন সুমন (৩২) ও শামসুল হক (৩২)।
ওসি মহসীন আজাদীকে জানান, তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ২৪ জনকে আটক করা হয়েছিল। পরে ওই এলাকার আশেপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মো. সোহাগকে এবং বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাসুদ নামে আরো একজনসহ দুই মামলায় মোট ১০জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।