ইসলামী ছাত্রশিবির সাধারণ ছাত্রদের কষ্টের কারণ হতে চায় না বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর (উত্তর) সভাপতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওপেন যেটি আগে ছাত্রলীগ করে আসছে বা রাজনৈতিকভাবে করে আসছে সেটা আমরা করতে চাচ্ছি না। যতদিন না সাধারণ ছাত্রদের ভেতরে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে; ততদিন এ কার্যক্রমগুলো সাধারণ ছাত্রদেরকে অনেক বেশি কষ্ট দিবে। আমরা চাই না সাধারণ ছাত্রদের কোনো কষ্টের কারণ ছাত্রশিবির হোক। সেজন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা আমাদের একই নীতি অবলম্বন করছি।
গতকাল শনিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সাথে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর–এর মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। নগরের চকবাজার ডিসি রোড আর–ইসরা ভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তানজীর হোসেন জুয়েল, অর্থ সম্পাদক মুমিনুল হক, অফিস সম্পাদক খুররম মুরাদ ও প্রকাশনা সম্পাদক আবরার হাসান রিয়াদ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, আমরা অবশ্যই ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নয়। তবে আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা চাই এদেশে নতুন কোনো আধিপত্যবাদ ছাত্র রাজনীতি ও নতুন কোনো আধিপত্যবাদ যেন গ্রাস না করে। যে গ্রাস থেকে অনেক কষ্টের বিনিময়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রায় ২ হাজার শহীদদের রক্তের বিনিময় ফ্যাসিবাদকে দূর করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চাই না নতুন কোনো ফ্যাসিবাদ, নতুন কোনো আধিপত্যবাদ, নতুন কোনো ফ্যাসিজম আমাদের ওপর এসে পড়ুক।
এসময় নগরের বিভিন্ন কলেজের প্রসঙ্গে বলেন, সাধারণ ছাত্ররাই ক্যাম্পাসগুলো পরিচালনা করছে। সাধারণ ছাত্রদের ভেতর অবশ্যই শিবির আছে, ছাত্রদল আছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আছে। এককভাবে যে শিবির আধিপত্যবাদী সেটা বিশ্বাস করে না।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করতে পতিত পতিত স্বৈরচার নানা ষড়যন্ত্রের পায়তারা করে আসছে। চট্টগ্রামেও ইতিমধ্যে কয়েক দফা ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো পতিত স্বৈরচারের দোসরদের তৎপর পরিলক্ষিত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে।
এ সময় ছাত্র শিবির গঠনমূলক সমালোচনা ও সংশোধনীকে স্বাগত জানান উল্লেখ করে বলেন, এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্মানিত সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজকে আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করি। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের গঠনমূলক সমালোচনা আমাদের অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে আরো বেশি গতিশীল করবে।
সম্প্রতি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পলিটেকনিক্যাল ইস্যুতে অনেক গণমাধ্যম ছাত্রশিবিরকে দোষারোপ করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমাদের অনুরাধ থাকবে আপনারা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। শিবিরের কোনো ভূমিকা সেখানে ছিল না। সাধারণ ছাত্রদের ভূমিকায় যেভাবে চেয়েছিল ছাত্রশিবিরও চেয়েছিল সেভাবেই হোক। মূলত ওইখানে হল খোলা নিয়ে গণ্ডগোল। আপনারা আরেকটু তদন্ত করলে আরো ভালো করে বিষয়গুলো তুলে আনতে পারবেন। তিনি বলেন, সাধারণ ছাত্ররাই ক্যাম্পাসগুলো পরিচালনা করছে। সাধারণ ছাত্রদের ভেতর অবশ্যই শিবির আছে, ছাত্রদল আছে; বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আছে। এককভাবে যে শিবির আধিপত্যবাদী সেটা বিশ্বাস করে না।
ইসলামী ছাত্র শিবির সাধারণ ছাত্রদের ভেতর থেকে ছাত্র রাজনীতির ভয় দূর করতে চায় উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, বিগত ১৬ বছর ছাত্রলীগ যেভাবে ছাত্রদের মাঝে রাজনৈতিক নামে দমন পীড়ন থেকে শুরু করে স্বৈরাচারী চিন্তাচেতনা–মনোভাব ঢুকিয়ে দিয়েছে আমরা চাই, সে ধরনের কোনো আধিপত্যবাদী না হোক, ওই ধরনের ছাত্র রাজনীতি যাতে না থাকে। সকলেই যাতে ছাত্র রাজনীতির প্রতি আন্তরিক হয়। এজন্য ছাত্রশিবির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে কখনো কোনো কার্যক্রম রাখে নাই।
অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে শিবির সম্পর্কে জানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো যেখানে গ্রুপিং, অন্তঃকোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল বাণিজ্যসহ নানান অপরাধমূলক কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত সেখানে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিগত স্বৈর শাসনামলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও দেশবাসীর মনে আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিতে কিছু চিহ্নিত তথ্য সন্ত্রাসী মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার প্রপাগাণ্ডা চালালেও সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে তাদের সেই চক্রান্ত অনেকাংশে বুমেরাং হয়। তারপরেও ক্রমাগত অপপ্রচারের ফলে অনেকের মনে কিছু নেতিবাচক ধারণা জন্মানো অস্বাভাবিক নয়।