চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির চ্যাম্পিয়ন ভারত

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১০ মার্চ, ২০২৫ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

থামানো গেল না ভারতের জয়রথ। অনেকেই শঙ্কায় ছিলেন ২০২৩ বিশ্বকাপের মত সব ম্যাচ জিতে ফাইনালে এসে ভরাডুবি হয় কিনা। সে শঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে রোহিতের দল। বলা যায় রোহিত শর্মার ব্যাটেই যেন সব শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে তৃতীয় বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতল ভারত। যদিও ২০০২ সালে শ্রীলংকার সাথে যৌথভাবে এই ট্রফি জিতেছিল ভারত। গতকাল দুবাইতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে অপরাজিত থেকে শিরোপা জিতে নেয় তারা।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের কাছে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। তাই ফাইনাল ম্যাচটি ছিল তাদের জন্য প্রতিশোধেরও। কিন্তু সে প্রতিশোধ আর নেওয়া হল না কিউইদের। উল্টো হেরে ফাইনাল মঞ্চ থেকে হতাশা নিয়ে বিদায় নিতে হলো উইলিয়ামসনদের। শুরুর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভারত শেষটাও রাঙাল দুর্দান্তভাবে। বোলাররা দারুণভাবে ম্যাচে রেখেছিল ভারতকে। এই বোলারদের গড়ে দেওয়া মঞ্চে ব্যাটাররা দেখালেন তাদের দায়িত্বশীলতা। বিশেষ করে যে রোহিত শর্মার ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন সুনিল গাভাস্কার কদিন আগে, সেই রোহিত শর্মাই ভারতের ট্রফি জয়ে রাখলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে যেমন দৈন্যতা দেখাল তেমনি বোলিং এবং ফিল্ডিংয়েও ছিল না ক্ষিপ্রতা। আর ভারত দেখাল তাদের চরম পেশাদারিত্ব। যার ফলশ্রুতিতে জিতল আরো একটি আইসিসি ট্রফি। আর কিউইদের ফিরতে হলো হতাশা নিয়ে। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল টস জিতে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের শুরুটা ছিল উজ্জ্বল। উদ্বোধনী উইকেটে ৫৭ রান তুলেছিলেন দুই ওপেনার উইল ইয়াং ও রাচিন রবিন্দ্র। ২৩ বলে ১৫ রান করে ইয়াং ভারতীয় স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীর শিকার হলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। এরপর ৬ রানের ব্যবধানে দলটির দুই ব্যাটিং স্তম্ভ রাচিন রবিন্দ্র ও কেন উইলিয়ামসনও সাজঘরে ফিরলে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৭৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় নিউজিল্যান্ড। রবিন্দ্রার উড়ন্ত সূচনা থামে ২৯ বলে ৩৭ রানে। উইলিয়ামসন করেন মাত্র ১৪ বলে ১১ রান। দুজনই কুলদীপ যাদবের শিকার হয়ে ফিরেন। চতুর্থ উইকেটে হাল ধরার চেষ্টা করেন টম লাথাম ও ড্যারিল মিচেল। তাদের ধীরগতির ৬৬ বলে ৩৩ রানের জুটি ভাঙে লাথাম আউট হলে। ৩০ বলে ১৪ রান করে এলবিডব্লিউ হন লাথাম। পঞ্চম উইকেটে গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে ৫৭ রানের জুটি করেন মিচেল। ৫২ বলে ৩৪ রান করা ফিলিপসকে আউট করে এ জুটি ভাঙেন বরুণ। ষষ্ঠ উইকেটে মাইকেল ব্রাসওয়েলকে নিয়ে ৪৬ রানের আরও একটি জুটি করেন মিচেল। এরপর থেমে যায় মিচেলের লড়াকু ১০১ বলে ৬৩ রানের ইনিংসটিও। মোহাম্মদ শামির বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ হন মিচেল। শেষ দিকে নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে কিছু রান জমা হয় ব্রাসওয়েলের হার না মানা ফিফটিতে। ৩ চার ২ ছক্কায় ৪০ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আর তাতেই ২৫১ রান জড়ো করে নিউজিল্যান্ড। ভারতের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন কুলদীপ যাদব ও বরুণ চক্রবর্তী। একটি করে উইকেট নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা ও মোহাম্মদ শামি।

২৫২ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণ সূচনা করেন দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল। ১৮.৫ ওভারে ১০৫ রান যোগ করেন দুজন। গিলকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙেন মিচেল শান্টনার। ৫০ বলে ৩১ রান করা গিল ক্যাচ দেন ফিলিপসের হাতে। অপর প্রান্তে রোহিতের ব্যাট চলছিল দ্রুতগতিতে। কিন্তু পরের ওভারে ফিরেন বিরাট কোহলি। ব্রেসওয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে কোহলি ফিরেন ১ রান করে। রোহিত যখন এগুচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে, ঠিক তখনই তাকে থামান রাচিন রবীন্দ্র। ৮৩ বলে ৭টি চার এবং ৩টি ছক্কায় ৭৬ রান করা রোহিত থামেন রাচিনের বলে স্টাম্পড হয়ে। এরপর শ্রেয়াস আইয়ার এবং অক্সার প্যাটেল মিলে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। দুজন যখন ব্যাট করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল সহজ জয় পেয়ে যাবে ভারত। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৬ রানের মাথায় জীবন পাওয়া শ্রেয়াস আইয়ার পারেননি নিজের হাফ সেঞ্চুরি করতে। ফিরেছেন ৪৮ রান করে স্যান্টনারের বলে রাচিনের ক্যাচ হয়ে। সে সাথে ভাঙে ৬১ রানের জুটি। সঙ্গীকে হারানোর পর ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিলেন অক্সার প্যাটেল। কিন্তু তাকে থামান ব্রেসওয়েল। অক্সার ফিরেন ৪০ বলে ২৯ রান করে। কে এল রাহুলের সাথে যোগ দিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাচ্ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু দলের জয় যখন মাত্র ১১ রান দূরে তখন জেমিসনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফিরেন হার্দিক পান্ডিয়া। ১৮ বলে ১৮ রান করেন তিনি একটি চার আর একটি ছক্কায়। কিন্তু আর ভুল করেননি রাহুল। দলকে শিরোপা জিতিয়ে উৎসব করতে করতে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৬ বল বাকি থাকতে শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতে ভারত। ৩৩ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন কে এল রাহুল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে কাভার্ডভ্যান চাপায় নৈশ প্রহরী নিহত
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র সর্বোচ্চ শক্তির পরিশোধিত স্টিল AKS TMT B700C-R