চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি মোড় দিয়ে গণেশ পূজার প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় ‘প্রতিমা’ লক্ষ্য করে উপর থেকে দুর্বৃত্তদের ছুঁড়া গরম পানি কাণ্ড নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিবাদে উত্তাল চেরাগী মোড়। মুহুর্তেই নেমে এসেছে হাজার হাজার ভক্তের ঢল।
চরম উত্তেজনাকর পরিবেশে স্লোগানে উত্তাল পুরো চেরাগী মোড়ের সড়ক। আশেপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একাধিক টিম।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে এখনো পর্যন্ত নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন মোমিন রোডের
চেরাগী পাহাড় মোড়ে হাজার হাজার জনতার উপস্থিতিতে প্রতিবাদ মুখর দৃশ্য ধরা পড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক। তিনি জানান, এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। পরবর্তী আপডেট জানাতে পারব।
বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ও রাজিব দত্তের ভিডিও সূত্রে জানা যায়, নগরীর ব্যাটারগলি ধোয়াপাড়া সার্বজনিন পূজা উদযাপন কমিটির লোকজন রাতের দিকে হাজারগলির উত্তম পালের কারখানা থেকে প্রতিমা নিয়ে যাচ্ছিলেন।
হঠাৎ চেরাগি মোড় পার হয়ে কদম মোবারক তোরণ গেইটের সামনে যেতেই উপর থেকে কে বা কারা গরম পানি ছুঁড়ে প্রতিমা লক্ষ্য করে। আকস্মিক এটা দেখে ভ্যান গাড়ি প্রতিমাসহ দাঁড়িয়ে যান।
পরে যখন এটির প্রতিবাদ করতে প্রতিমা বহনকারী কয়েকজন কদম মোবারক মসজিদের এতিমখানার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে, তখন তাঁদের তিন জনকে আটকে রেখে ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারধর করে।
পরে খবর দিয়ে ব্যাটারগলির ধোয়াপাড়া সার্বজনিন পূজা উদযাপন কমিটির নেতাকর্মীরা সবাই ঘটনাস্থলে হাজির হয়।
এর মধ্যের চারপাশে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে আসতে থাকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেখান থেকে পানি ছুঁড়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই কদম মোবারকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রুমে রুমে তল্লাশি চালান।
এখনো আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থলে রয়েছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
জানা যায়, এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ ও যুগ্ম–সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এছাড়াও ব্যাটারি গলি এলাকার গণেশ পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্যই এভাবে অন্য ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানা হয়। আমাদের সমাজে কিছু লোক মনে করেন, এভাবে গোপনে প্রতিমাতে পানি মেরে বিশৃঙ্খলা করতে চান। এদের বিরুদ্ধে সকলের প্রতিবাদ করতে হবে।
গণেশ পূজা উদযাপন কমিটির নেতাকর্মীরা জানান, শাস্ত্র অনুসারে ভাদ্র মাসের শুক্ল পক্ষের চতুর্থী তিথিতে সুখ-সমৃদ্ধির দেবতা বিঘ্নহর্তা গণেশের জন্ম হয়। তাই প্রতি বছর এই তিথিতে পালিত হয় গণেশ জয়ন্তী । চতুর্থী তিথি থেকে শুরু করে অনন্ত চতুর্দশী পর্যন্ত দশ দিন ধরে গণেশ উৎসব পালিত হয়। গৃহস্থ বাড়ির পাশাপাশি সার্বজনীন ভাবেও গণেশ পুজো করা হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক বলেন,’ঘটনাস্থলে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী। যারাই পানি ছুড়ুক। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তল্লাশি করা হচ্ছে। কারা এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন।’