কি শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে? দিন রাত, সকাল বিকাল খালি ধর্ষণ আর ধর্ষণ আর ধর্ষিতার গগণবিদারী চিৎকার আর আহাজারী। ধর্ষণ আর লাজ সম্ভ্রমহানি করেই ক্ষান্ত না, নারীকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে সেই নারীর ভিডিও ধারণ করে ছেড়ে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রশ্ন জাগে, এই জন্যই কি ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো, এই আধুনিক প্রযুক্তি কি নারীর এমন চরম অপমান আর লজ্জা হরণের জন্যই হয়েছিল? দেশে আধুনিক প্রযুক্তি বা ডিজিটাল সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল, দেশের মানুষ যাতে সহজেই বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করে নিজের জীবনধারা, ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস আদালত তথা যাবতীয় কার্যক্রম অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজভাবে পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু এই গ্লোবাল সুবিধাটাকে যদি নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তো, এর সুফলটাই গেলো চরম বিফলে! বিশেষত নারীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করে নানা অপবাদ দেয়া, যে কোনো ঘটনা তা সত্য মিথ্যা যাচাই না করে সাথে সাথে ভাইরাল করে দেয়া! এই প্রযুক্তিকে আমাদের দেশের মানুষ অনেক অনেক বেশী নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করছে। তার ধরণ ও বিচিত্র এবং নানামুখী। আমি কেবল আজ নারীর ধর্ষণ আর নারীকে বিবস্ত্র করে এই দৃশ্য ভিডিও ধারণের ঘটনা নিয়েই লিখবো। প্রথমে সমপ্রতি ঘটে যাওয়া দেশব্যাপী আলোচিত মুরাদ নগরের ঘটনায় আসি। একটি সাধারণ দরিদ্র এবং সনাতনী নারীকে ধর্ষণ করলো নরপশু ফজর আলী। আবার সেই দৃশ্য ভিডিও করলো আরো আরো জঘন্য এবং ঘৃণিত একদল মানুষরূপী পশু। ভিডিও করে তারা আবার সেটি ভাইরাল করে ছেড়ে দিল। এটা কি কোনো সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে? এরপর কি হলো মিডিয়া এই ঘটনা লুফে নিল, নিউজ করলো, রিপোর্ট ছাপালো। এরই মাঝে তৎপর হলো প্রশাসন। গ্রেফতার হলো আসামীরা। ব্যাস শেষ! শুরু হলো সেই মান্ধাতার আমলের বিচার প্রক্রিয়া। কিন্তু যে নারী ভিকটিম তাকে নিয়ে শুরু হলো আরেক নাটক। তার সাক্ষাৎকার নেয়া,তার কাছে মাইক্রোফোন ধরিয়ে দিয়ে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা শোনা, আরো কত কি! আমরা সব সময় দেখি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে অহরহ। পুলিশ কেইস হয় আসামীর বিরুদ্ধে, আসামী ধরাও পড়ে কিন্তু আইনগুলো বেশ কঠোর না, সেই পুরানো আইন, আবার তার সঠিক প্রয়োগ ও নেই। জামিনে আসামী মুক্ত হয়ে যায়। সে আবার লিপ্ত হয়ে পড়ে সেই একই অপরাধে। এমনকি ভিকটিমও সেই আসামীর হুমকির মুখে।
মুরাদনগরের ঘটনার পর পরই নগরীর আকবর শাহ এলাকার পাহাড়ি কলোনিতে ধর্ষণের শিকার হয় ১৩/১৪ বছরের বালিকা। অভিযুক্ত ধর্ষক তাকে গলায় ছুরি ধরে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটির আর্তচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয় চিকিৎসার জন্য। আর ধর্ষককে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। নিউজে দেখেছি, এই নরপশুকে মেরে রাস্তায় শুইয়ে রেখেছে। আর সেই ধর্ষকের মায়ের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে সাংবাদিকেরা। আর মা নিজেই কান্না করে করে বলছেন, আমি এই ছেলে চাই না। ওকে মেরে ফেলুন। কি দুঃখের বিলাপ মায়ের। ছেলের জঘন্য অপরাধে দরিদ্র এই মা কি পরিমাণ লজ্জিত হলেন। আর এলাকাবাসী বলছিলেন কিছুদিন আগেও একটি ধর্ষণের ঘটনায় এই আসামী গ্রেফতার হয়ে জেলে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর সে জামিনে বেরিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে। তার অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। আমরা দুএকটি ঘটনা শুনি বা খবর পাই। তবে সারা দেশে প্রতিনিয়তই ঘটছে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা। একটা ঘটতে না ঘটতেই এর চেয়ে জঘন্য ও আরো নির্মম হয়ে ঘটে যায় আরো একটি ঘটনা। এই অবস্থায় জনরোষ আর ক্ষোভ আগেরটার থেকে সরে এসে যুক্ত হয় নতুনটায়। ফলে অবস্থার কোনো উন্নতি তো হচ্ছেই না বরং ভয়াবহ অবনতি আমরা দেখছি। এখন তাই সময় এসেছে যে–যে অবস্থানেই থাকুক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ কি হওয়া উচিৎ, সেটা নিয়ে চিন্তা করা। নারীনেত্রীরা জোর গলায় প্রতিবাদ করে, প্রশাসনও সুর মেলায়। কিন্তু বিচারের বেলায় নেই কঠোরতা। এখানে বিচারের বাণী কেঁদে মরে নীরবে নিভৃতে। আর অনেকেই জ্বলে পুড়ে খান খান হচ্ছে, আত্মহননের পথেও যায় অনেকেই। কাজেই এখন আর চুপ করে বসে থাকলে হবে না। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও নিরাপদ করতে আবাল বৃদ্ধ বণিতা এমন কি শিশুদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। সকল শ্রেণির নারীদের সাথে নিয়ে আসুন আমরা রাস্তায় নামি। ধর্ষকের কঠিন ও কঠোর শাস্তি দাবি করি।