আজ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি। চুক্তির পর পাহাড়ে উন্নয়নের ধারা বয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরেনি। হানাহানি আর রক্তক্ষয়ী সংঘাতে এখনো অশান্ত পার্বত্যাঞ্চল। ২৫ বছর পরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ পাহাড়িদের। এদিকে সংবিধানের সাথে বৈষম্যমূলক কতিপয় ধারা সংশোধন করে পার্বত্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলেছে স্থানীয় বাঙালিরা।
সরকারের আন্তরিকার অভাবে ২৫ বছরেও পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দল জেএসএস–এর। এ বিষয়ে
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সহ–সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, সরকারের একটা অংশ চুক্তির বিরোধিতার কারণে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণে এবং আমাদের পক্ষ থেকেও সদিচ্ছা থাকার ফলে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এখনো চুক্তি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে অধিকাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে দাবি করে সরকারপক্ষ বলছে পাহাড়ের মানুষ চুক্তির সুফল পেতে শুরু করেছে। এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেন, ২৫ বছরে কি আওয়ামী লীগ শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করেছে। তিনি বলেন, জননত্রেী শেখ হাসিনা শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্য রাস্তা–ঘাট, কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়, থেকে শুরু করে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। দীপংকর তালুকদার বলেন, বাংলাদেশের সমতল এলাকার মানুষের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষেরও ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে উভয়পক্ষকে একসাথে বসে সমঝোতা করতে হবে। কিছু ছাড় দিতে হবে আবার কিছু পেতে হবে।
এদিকে, পার্বত্য চুক্তিতে সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে অভিযোগ স্থানীয় বাঙালিদের। চুক্তি সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, অস্ত্র সমর্পন করে চুক্তি সম্পাদন করা হলেও পাহাড়ে এখনো অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিচরণ করছে পাহাড়িদের অন্তত পাঁচটি গ্রুপ। চুক্তি হওয়ার ফলে গত ২৫ বছরে এখানে শুধু একটা পক্ষ লাভবান হয়েছে। অবৈধ অস্ত্র জমা হয়নি। বরঞ্চ অত্যাধুনিক অস্ত্র আমদানি বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কতিপয় ধারা সংশোধন করে পার্বত্য চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার ও জনসংহতি সমিতি দু’পক্ষই আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা পাহাড়ের শান্তি প্রিয় মানুষের।
ধারা সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধন :
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক ধারাগুলো সংশোধন করে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদ রাঙামাটি জেলা কমিটি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দ চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য ২৬টি জাতীয় আইন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট ১২টি আইনসহ মোট ৩৮টি আইন সংশোধন করার দাবি জানান। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি মোঃ হাবীব আজম। বক্তব্য রাখেন কাজী মোঃ জালোয়া, আমীর মোঃ সাবের, আবু বক্কর সিদ্দিকী, কবির আহম্মেদ, মোরশেদা আক্তার, তাজুল ইসলাম, মামুনুর রশীদ মামুন, মোঃ মঈনুদ্দীন।