ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিখ্যাত সেই স্লোগান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ অনুসারে ক্রেমলিন কি এবারও চেষ্টা করবে আমেরিকাকে একটি অসাধারণ রাষ্ট্র হিসেবে ধরে রাখতে? বেইজিং কি চায় যে এবারের নির্বাচনে জো বাইডেন জয়ী হোক?
যুক্তরাষ্ট্রে তেসরা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা, দুই প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মাথায়।
শীর্ষস্থানীয় একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে রাশিয়া, চীন এবং ইরান এই তিনটি দেশ ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এমনকী গোপনেও তৎপরতা চালাবে। তবে তারা এই তিনটি দেশের ইচ্ছা ও ক্ষমতাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেছেন, এসব দেশের নিজস্ব উদ্দেশ্য ও সক্ষমতা রয়েছে। গোয়েন্দাদের এসব সন্দেহ ও পর্যালোচনা এখনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা অবশ্য সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন : নির্বাচনে রাশিয়ার দিক থেকে যেসব ঝুঁকি রয়েছে সেগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছে। নির্বাচনের আর তিন সপ্তাহের মতো বাকি। এখনও পর্যন্ত এবিষয়ে রাশিয়া ও চীনের ভূমিকা সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে? খবর বিবিসি বাংলার।
রাশিয়া
গোয়েন্দারা কী বলছেন : ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ও পরে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর কথাবার্তা হয়েছে। এনিয়ে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে অভিযোগও উঠেছে বিস্তর। মার্কিন গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন গত নির্বাচনে ভোটারদেরকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়েছে রাশিয়া। এর প্রমাণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্পের নির্বাচনী টিমের সাথে রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক, হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচনী প্রচারণায় সাইবার হামলা, বিভিন্ন রাজ্যের ভোটারদের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ এবং অনলাইনে এমন সব ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেওয়ার কথা যেগুলো নাকি শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে গেছে। এবছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেনেটে রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেলও এমন মতামত দিয়েছে। রাশিয়া যে গতবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিল তাদের মতামত এই ধারণাকেই আরো বেশি সমর্থন দিয়েছে। এই প্যানেল বলেছে, ট্রাম্পের প্রচারণায় বিদেশিদের হস্তক্ষেপ খুব সহজ ছিল। তবে এই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় তারা কোন অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র দেখতে পাননি। এবার ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের জায়গায় জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের (এনসিএসসি) পরিচালক উইলিয়াম ইভানিনা তার পর্যালোচনায় বলেছেন, প্রাথমিকভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মানহানি করার জন্য রাশিয়া নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
চীন
মার্কিন গোয়েন্দারা কী বলছেন : ট্রাম্প প্রশাসনের প্রখ্যাত ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে রাশিয়া নয় বরং চীনই হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আসল হুমকি। আমি গোয়েন্দা তথ্য দেখেছি। এটাই আমার উপসংহার, বলেন এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভে ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রধান ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক অ্যাডাম শিফ অবশ্য এটা মানতে রাজি নন। মি. বারের বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা বলার অভিযোগ এনেছেন। মি. ইভানিনা তার পর্যালোচনায় বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন যে চীন চায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যাতে পুনরায় নির্বাচিত না হন। কারণ বেইজিং-এর কাছে মি. ট্রাম্প নির্ভরযোগ্য নন। যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ব্যাপারে চীন তার প্রভাব আরো বিস্তৃত করছে। বেইজিং যাদেরকে চীনা স্বার্থ-বিরোধী বলে মনে করে তাদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে, একই সাথে চীনের সমালোচনারও জবাব দিচ্ছে, বলেন তিনি।