চির অম্লান থাকুক তাঁর হাসিমাখা মুখ

শাহীন আনোয়ার | সোমবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

একুশে পদকপ্রাপ্ত, খ্যাতিমান কবি আসাদ চৌধুরীএকজন মাটির মানুষ, সোনায় গড়া ছিল যাঁর মন, চলে গেলেন চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে কোনও এক অচিনপুরে। ৫ই অক্টোবর ২০২৩, কানাডা টরনটোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কবি আপনার কথাই বলছি, শুরুতেই অকপটে বলি আপনি না হলে আমার কাব্যগ্রন্থ (মেঘের পালক) আদৌ প্রকাশ হতো কি না সন্দেহ। কবি সেই আপনিই তো জোরপূর্বক, বলা যায় একপ্রকার বকাঝকা দিয়ে আমাকে এই কাজটি করিয়ে নিয়ে ছিলেন। আপনার প্রশংসা এবং উৎসাহ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল, মনে সাহস এনে দিল। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে পত্র পত্রিকায় কবিতা প্রকাশিত হতো। অনেকেই কবিতার বই বের করার কথা বলতেন, তন্মধ্যে কবি ময়ুখ চৌধুরী এবং কবি মোহীত উল আলম প্রমুখ উল্লেখ্য। কিন্তু বিষয়টিকে আমি ওভাবে কখনও ভেবে দেখি নি। আমার স্বভাব সুলভ উদাসীনতা হয়তো ছিল এর কারণ। আসাদ ভাই জানতে চাইলেন বইটি ঢাকা থেকে প্রকাশ করব কি না। যেহেতু আমি চাটগাঁর মেয়ে এবং এটি আমার প্রথম কাজ, চট্টগ্রাম থেকেই বইটি প্রকাশ করব বলেছিলাম। যাহোক প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। কবিতা নির্বাচনে আমার ক’জন সুহৃদ কবিবন্ধু সহযোগিতা করলেন। শিশুসাহিত্যিক সাংবাদিক রাশেদ রউফএর তত্ত্বাবধানে শৈলী প্রকাশন হতে বইটি প্রকাশিত হলো। প্রচ্ছদের কাজ করেছিলেন অসাধারণ গুণী প্রয়াত কবি খালিদ আহসান। বইটিতে কবি পরিচিতি তুলে ধরেছিলেন আমার গুরু সমতুল্য শ্রদ্ধাভাজন প্রয়াত কবিসাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত। কবি আসাদ চৌধুরী তাঁর স্বাক্ষর সহ, বইটির জন্য আমাকে নিয়ে কিছু কথা লিখে দিলেন।

কবি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, আপনার সংস্পর্শে কাটানো মধুর স্মৃতিগুলো আমাকে পীড়া দেয় আসাদ ভাই। আপনার প্রাণ খোলা সেই অট্টহাসি, সহজ সরল অভিব্যক্তি মনে পড়ে। খুব অল্প সময়ে আপনি যেন আমার পরিবারের একজন সদস্য হয়ে গেলেন। আমার মেয়ে ফারাহ্‌ নওশীন (জাতীয়আন্তর্জাতিক) পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী, তার আঁকা পেইন্টিংস, পদক ও সনদপত্রগুলো দেখে আসাদ ভাই ভীষণ অভিভূত হয়েছিলেন। ২০০৪ সাল, আমার গ্রন্থ প্রকাশ কাল। ২১এর বই মেলায় ঢাকা গিয়েছিলাম। আমার স্বামী সহ আমাকে, আপনি আপনার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালেন। ছিমছাম পরিপাটি ফ্ল্যাট, লিভিং রুম সংলগ্ন ব্যালকনি, টবে লাগানো কতরকম চারাগাছ দোলনাচমৎকার এক শৈল্পিক পরিবেশ। আপনার অসুস্থ শয্যাশায়ী আম্মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিলেন। আর ভাবির কথা বলে তো শেষ করা যাবে না।

হাসিমাখা মিষ্টি মুখ, আন্তরিক ব্যবহার, আতিথেয়তা ও আপ্যায়ন ছিল তাঁর সত্যি প্রশংসনীয়। মেয়েদের সাথে করে কেন নিয়ে যাইনি অভিযোগ করলেন। অবশেষে এক বুক ভালোবাসা নিয়ে ফিরে এলাম। আপনার স্নেহ ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলাম আমি। আদিখ্যেতার বালাই নেই, অনাড়ম্বর, অকৃত্রিম স্বভাবজাত এক কিংবদন্তীএমনই ছিলেন আমাদের কবি, যাঁর অন্তরে ছিল আগুন আর সেই আগুনেরই স্ফুলিঙ্গ তাঁর এক একটি কবিতা। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করছি তাঁকে। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুন, দোয়া করি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন কবি!

লেখক: কবি ও গীতিকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধবই হোক কোমলমতি শিশুদের নিত্যদিনের সঙ্গী
পরবর্তী নিবন্ধমাদকাসক্তি নির্মূলে আমাদের করণীয়