হঠাৎ করেই বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে সয়াবিন তেল। সীমাহীন সংকট তৈরি হয়েছে খোলা বাজারে। অনেকের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো কারসাজি করে এমনটি করেছে। তবে তার সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি। ঢাকা–চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তি দামেও সয়াবিন তেল পাননি অনেক ক্রেতা। পবিত্র রোজা সামনে রেখে এখন থেকেই সংকট তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাধিক কাঁচাবাজারের বিভিন্ন মুদি দোকান ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল নেই। এক–দুই বা তিন লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও পাঁচ লিটারের তেল খুবই সীমিত। অনেক দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। সংকট দেখিয়ে ভোক্তার কাছে অতিরিক্ত দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে খোলা বা লুজ তেল বিক্রি করছেন অনেক দোকানি। সয়াবিনের সংকটে অন্য তেলের চাহিদা বেড়েছে।
বাজারে খুচরা বিক্রেতারা জানান, সংকট দেখিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬০–১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০–১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দু–একটি দোকানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিললেও বিক্রি হচ্ছে ১৬৭–১৭০ টাকায়। এছাড়া দু–এক জায়গায় এই একই তেল ১৭৫–১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেলের এই সংকটে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা–বিক্রেতা উভয়েই। বাজার করতে আসা অনেক ক্রেতা তেল কিনতে এসে খালি হাতেই ফিরছেন। কেউ কেউ সয়াবিন তেল না পেয়ে কিনে নিচ্ছেন রাইস ব্র্যান তেল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই পুরোনো চেনাজানা সিন্ডিকেট বাজার থেকে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে কারসাজি শুরু করেছে। মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ডিলারের কাছে সরবরাহ কমিয়েছে। এতে ডিলার থেকে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমেছে। তাই বাড়তি দামেও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। এতে বাজার থেকে এক প্রকার উধাওই হয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। তেল না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোজ্যতেল নিয়ে একটি চক্র সিন্ডিকেট করে বাজারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। তারা বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারে ভোজ্যতেলের তীব্র সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দামও হু হু করে বাড়ছে। সরকার দুই দফায় শুল্ক–কর কমিয়েও সুফল মিলছে না। বরং দাম আরও বেড়েছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি গোলাম রহমানের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। তিনি বলেন, রোজা ঘিরে কয়েক বছর ধরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট একটি পন্থা অবলম্বন করছে। রোজায় দাম না বাড়িয়ে রোজা শুরুর ৩ থেকে ৪ মাস আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে রাখছে। এতে রোজায় ক্রেতারা বাড়তি দরেই পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আর অতি মুনাফা লুফে নিচ্ছে সেই চিরচেনা সিন্ডিকেট। এখন থেকেই কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।
যদিও বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল সরবরাহ কমেছে বলে দাবি তেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারের হিসাবে লিটারে ১০–১৩ টাকা বেড়েছে। এ জন্য চাহিদার তুলনায় আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের মতো। তাই রিফাইনিং করে তেল বাজারে সরবরাহ কম করে দিতে হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, মূলত দেশের অসৎ ও অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নানা সময়ে নানা অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ে। বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সামনে রেখে বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়, তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসে। এর প্রভাব পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। নিত্যপণ্যের দাম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। ভোজ্যতেলসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাঁরা বলেন, বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না ঘটবে ততদিন নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির থাকবেই এবং দেশের জনগণও তাদের কাছে জিম্মি থাকবে। মৌসুমভিত্তিক নয়, সারা বছর বাজার মনিটরিং করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কার্যকর কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে জনগণকে হয়রানি ও দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে এবং এর কোনো বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির আবদার বা পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।