রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিন শুনানির জন্য থাকা নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনতে দ্বিতীয় দফায় আবেদন করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা থেকে আসা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের দ্বিতীয় দফার এই আবেদন মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম নথিভুক্ত করেছেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন। জেলা আইনজীবী সমিতিও আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষকে সহযোগিতা করেন। যদিও আগের দিন বুধবার একই বিষয়ে আবেদন জমা দিলেও তার সাথে চট্টগ্রাম বারের কারো ওকালতনামা না থাকায় আদালত সেটি নাকচ করে দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি মফিজুল হক ভূঁইয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, বুধবারের ন্যায় আজকেও (গতকাল) সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ সুপ্রীম কোর্টের একটি ওকালতনামা দিয়ে চিন্ময় দাশের জামিন শুনানির জন্য থাকা নির্ধারিত তারিখ এগিয়ে আনতে দ্বিতীয় দফায় একটি আবেদন করেন। আজকেও (গতকাল) তার সাথে চট্টগ্রাম বারের কোন আইনজীবীর ওকালতনামা ছিল না। শুনানির অনুমতি দিয়ে আদালত তার কাছে কোন ওকালতনামা আছে কি না জানতে চান। তিনি তখন সুমিত আচার্য্য নামের একজন আইনজীবীর কথা বলেন। কিন্তু তখন সুমতি আচার্য্য আদালতে হাজির ছিলেন না। আদালত তখন শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে আদালত আবার বসেন। তখনও ওই আইনজীবী হাজির না থাকায় আদালত ফের শুনানি মূলতবি করেন এবং বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে আদালত আবারও বসলে আইনজীবী সুমতি আচার্য্য হাজির হন। সুমিত আচার্য্য আদালতকে বলেন, তিনি মামলাটিতে মুভ করতে পারবেন না। একপর্যায়ে আদালত আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষের আবেদনটি নথিভুক্ত করেন। আগামী ২ জানুয়ারি রবীন্দ্র ঘোষের আবেদন বিষয়ে শুনানি হবে উল্লেখ করে মহানগর পিপি বলেন, যদি সেদিনও তার সাথে চট্টগ্রাম বারের কোন আইনজীবী যুক্ত না হন তাহলে তিনি শুনানি করতে পারবেন না। এ বিষয়ে ঢাকা থেকে আসা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ আদালত প্রাঙ্গনে বলেন, আজকে মুভ করেছিলাম। আদালত আমাকে শুনেছেন। আমার আবেদন নথিভুক্ত করেছেন। ২ জানুয়ারি এ বিষয়ে শুনানি হবে। সেদিন যদি এটি রিজেক্ট হয় উচ্চ আদালতে যাব। আগের দিন ফিজিক্যালি ও মানসিক হেনস্তার কথা বলেছিলেন। আজকে (গতকাল) কী বলবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগের দিন বুধবার ফিজিক্যালি নয়, মানসিক হেনস্তার শিকার হয়েছিলাম। আজকে (গতকাল) কোন সমস্যা হয়নি।
সার্বিক বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী হলেও সরাসরি মুভ করতে পারেন না। লোকাল বারের আইনজীবী যদি ওনাকে এনগেজড (যুক্ত) করেন সে ক্ষেত্রে অ্যাসিস্ট (সাহায্য) করতে পারেন। এটা চট্টগ্রাম বারের না শুধু, সারা দেশের নিয়ম। উনি এটা ফলো না করে মামলা মুভ করতে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, গত বুধবার ফিজিক্যাল হেনস্তার যে অভিযোগ তিনি করেছেন তা সত্য নয়। আজকে (গতকাল) আবার বলছেন ফিজিক্যাল নয়, মানসিক হেস্তার শিকার হয়েছিলেন। আদালতে তর্কতর্কি হয় সেটাই প্রেকটিস। আমরা যখন আদালতে মুভ করি, দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কথাবার্তা বলার সময় তর্কাতর্কি হয়ে থাকে। এটাকে যদি মানসিক চাপ বলে থাকেন, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। কারণ, এটা দেশের প্রত্যেক কোর্টে হয়ে থাকে।
আদালতসূত্র জানায়, মেট্রো আদালতে চিন্ময় দাশের জামিন না–মঞ্জুর হওয়ার পর তার আইনজীবীরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে একটি মিস মামলা দায়ের করেন। সেটির উপর ৩ ডিসেম্বর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন ওই বিষয়ে শুনানি না করে আগামী ২ জানুয়ারি নতুন দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ২৫ আগস্ট ঢাকা থেকে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তথা ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে সেদিন একটি আবেদন করেন। শুনানি শেষে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম জামিন না–মঞ্জুর করে চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পুলিশ যখন চিন্ময়কে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাবে তখন আগে থেকে জড়ো হওয়া তার অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানের গতিরোধ করেন এবং প্রিজন ভ্যানের সামনে পিছে শুয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা পর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানকে কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত পাড়ায় ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর করে। শুরু হয় সংঘাত। এক পর্যায়ে আদালতের প্রবেশ গেটের অদূরে খুন হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে কোতোয়ালী থানায় ৬ টি ও আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। পুলিশ জানায়, কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৭৯ জনের নামে তিনটি, আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নামে একটি (হত্যা মামলা) ও তার ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নামে একটি ও মোহাম্মদ উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী ২৯ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া সর্বশেষ মো. এনামুল হক নামের একজন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নামে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত সেটি কোতোয়ালী থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।