চিনি নিয়ে ছিনিমিনি চলছে বাজারে। হু হু করে বাড়ানো হচ্ছে চিনির দাম। ফলে বাড়তি দামে চিনি কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বাড়ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, প্রায় দুই মাস আগে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ ও প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ওই দামে চিনি বিক্রি করছেন না। খুচরা বাজারে তখন প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয় ১৩৫ ও প্যাকেটজাত চিনি ১৪০ টাকা। তবে ৬ জুন সরকারিভাবে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১৪০ ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৫০ টাকা নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়ে প্রস্তাব পাঠায় সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেওয়া না হলেও ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে চিনির দাম বাড়িয়ে বিক্রি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে চিনির দর পর্যালোচনা করে দেশে খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১৩৫ ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৪০ টাকা নির্ধারণের পরামর্শ দিয়ে সমপ্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে এরই মধ্যে দাম বাড়িয়ে বাজারজাত শুরু করেছে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাজারে চিনির দাম এতো বেশি যে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতাসাধারণ। তাঁরা বলেন, দাম এত বেড়েছে যে চিনি খাওয়া বন্ধই করে দেবো ঠিক করেছি। এমনিই চিনির দাম বাড়ায় গত কয়েক মাসে চিনি ব্যবহার করা অনেক কমিয়ে দিয়েছি।
আবার ভোক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন, যাঁরা দাম বাড়ানোর কারণে পণ্যের ব্যবহার কমান। অর্থাৎ যখন যেই পণ্যের দাম বাড়ে, সেই পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে দেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, সয়াবিন তেলের দাম যখন বাড়লো তখন তেল কম ব্যবহার করারও অভ্যাস করেছি। এ দেশে এভাবে অ্যাডজাস্ট না করলে তো সংসার নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব না। কথাগুলো সুখের নয়, আক্ষেপের এবং ক্ষোভের।
আসলে মানুষ স্বস্তি চায়। কিন্তু স্বস্তি যেন দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মানুষ স্বস্তিতে না থাকার বড় কারণ নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দাম। সচরাচর রমজান মাসকে উপলক্ষ করে শুরু হয় পণ্য মূল্য বাড়ানোর প্রতিযোগিতা। গত কয়েক বছর অতিরিক্ত সমালোচনা এবং সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে এ বছর রমজানে দাম বাড়ানোর প্রবণতা ছিল কম। এমন খবরের পরও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফেরেনি। কারণ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য এখন রমজান লাগে না। যে কোনো সময়ে যে কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। যেমন এখন চিনির মূল্য আকাশ–ছোঁয়া। কয়েক মাস আগে থেকে বাড়া শুরু করেছে, এখনও তা অব্যাহত আছে। ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই এখানে।
সাধারণ ক্রেতারা দোষারোপ করছেন ব্যবসায়ীদের। আর ব্যবসায়ীরা বলেন, সিন্ডিকেট করে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ করছেন আমদানিকারকরা। প্রতি কেজি চিনি ডিলার পয়েন্ট থেকে কিনতে হচ্ছে ১২৮–১৩০ টাকায়। ফলে বেশি দামে চিনি কেনায় বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে চিনি সংকটে ডিলারদের অভিযোগ মিল মালিকদের ওপর। সবমিলিয়ে অস্থিরতা চলছে চিনির বাজারে।
পণ্যের বাজারে চাহিদা–যোগান ও সরবরাহের হেরফেরের এরকম সময়ে সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা বাজারে অসামঞ্জস্য দীর্ঘায়িত করে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলেন, এরকম সময়ে, যখন স্বাভাবিক সরবরাহ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন বড় আমদানিকারকরা বাজারের ওপর প্রভাবটা বাড়িয়ে দেয়। এ রকম সময়ে সরকারের যেই সংস্থাগুলোর তাদের ওপর নজরদারি চালানোর কথা, তারা দুর্বল বা অসহায় ভূমিকা পালন করেন বলে এর আগে দেখেছি আমরা। তবে আমদানিকারকরা কম পরিমাণ আমদানি করার কারণেও বাজারে চিনির সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। অর্থনীতিবিদরা বলেন, এই মুহূর্তে যেহেতু ডলারের একটি টানাপোড়েন আছে, তাই আমদানিকারকরা প্রয়োজনীয় পরিমাণ এলসি খুলতে পারছেন না বলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আমদানি কম হচ্ছে।এই কারণে বাজারে চিনির সরবরাহ কিছুটা কম থাকতে পারে এবং এমন পরিস্থিতিতে বাজারে কিছুটা ঘাটতি থাকা স্বাভাবিক। তবু আমাদের অবাক লাগে চিনির বাজার কেন তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে? এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ থাকা চাই।