বাংলাদেশে প্রথম সারির চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম শিল্পী আনোয়ারুল হক। এদেশে চিত্রকলার প্রতিষ্ঠা, চর্চা ও বিকাশে তিনি ছিলেন নিরলস ও নিবেদিতপ্রাণ। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, আনোয়ারুল হক প্রমুখ শিল্পীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলেই ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর ঢাকায় শিল্পকলা চর্চার আন্দোলন শুরু হয়। আজ তাঁর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আনোয়ারুল হকের জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই উগান্ডায়। ৮ বছর বয়সে সপরিবারে কলকাতা চলে আসেন এবং শৈশবে ও কৈশোরের সময়গুলো কলকাতাতেই কাটে তাঁর। চিত্রকলায় আনোয়ারুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কলকাতা আর্ট কলেজে। বিশ শতকের শুরুতে তৎকালীন মুসলমান সমাজে ছবি আঁকা ছিল রীতিমতো নিষিদ্ধ। এই প্রথাবিরোধিতায় গিয়ে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর নিবিড় ভালোবাসায় তিনি ছয় বছরের পাঠ শেষ করে কৃতিত্বের সাথে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কর্মজীবনের সূচনা ফরিদপুর জেলা স্কুলে চিত্রকলার শিক্ষক হিসেবে। পরবর্তী সময়ে হাওড়া জেলা স্কুল, কলকাতা আর্ট স্কুল, চট্টগ্রাম নর্মাল স্কুল এবং পূর্ব পাকিস্তান আর্ট ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর আনোয়ারুল হক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। সে সময় সরকারি আর্ট স্কুল (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) প্রতিষ্ঠায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, শফিউদ্দীন আহমেদ, কামরুল হাসান প্রমুখের পাশাপাশি শিল্পী আনোয়ারুল হকের ভূমিকাও ছিল গুরুত্ববহ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। জল রং ও তেল রং – এই দুটো মাধ্যমে আনোয়ারুল ছবি এঁকেছেন। জীবনের বিভিন্ন পর্বে বাস্তবধর্মী, প্রকৃতিনির্ভর ও পরাবাস্তববাদী শিল্প সৃষ্টিতে তাঁর আগ্রহ লক্ষ করা যায়। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হিসেবে আদর্শ ছাত্র তৈরিতে, চারুকলার পাঠ্যসূচি প্রণয়ন এবং নানামুখী উন্নয়নে, শিল্পী হিসেবে শিল্পকর্মে – সব ক্ষেত্রেই আনোয়ারুল হক ছিলেন একজন সফল ব্যক্তিত্ব। ১৯৮১ সালের ১৮ নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন। শিল্পীর বেশ কিছু চিত্রকর্ম সংগৃহীত রয়েছে জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গভবন, দিল্লী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান সহ অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে।