চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়লেও আছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট

বিশ্ব ব্লাড ক্যান্সার দিবস আজ

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ২৮ মে, ২০২৪ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসার সক্ষমতা আগের তুলনায় বাড়লেও এখনো রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট। এছাড়া রোগ নির্ণয়ের কিছু বিশেষায়িত পরীক্ষার জন্য ঢাকা কিংবা প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। ফলে অনেক সময় রোগ নির্ণয় করে রোগীদের চিকিৎসা দিবে বিলম্ব হচ্ছে। তবে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দ্রুত ব্লাড ক্যান্সারের রোগ নির্ণয় করে ওয়ার্ডে নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ১০ জন ব্লাড ক্যান্সারের রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে চমেক হাসপাতালের শিশু ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। গত এক মাস ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে শিশু ব্লাড ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা। তবে অন্যদিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু ক্যান্সার হাসপাতালের বেড়েছে ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের চিকিৎসার সক্ষমতা। এমন পরিস্থিতিতে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব ব্লাড ক্যান্সার দিবস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যত ধরনের ক্যান্সার রয়েছে তার মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হচ্ছে ব্লাড ক্যান্সার। ব্লাড ক্যান্সার কোনো বংশগত বা ছোঁয়াচে রোগ নয়। ব্লাড ক্যান্সারের সঠিক কারণও এখনো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি। তবে রেডিয়েশন, কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক, ভেজাল খাবার, খাদ্যে রাসায়নিকের ব্যবহার এবং কিছু প্রসাধনীর ব্যবহারের কারণে ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ সহজে ধরা পড়ে না। তাই শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনো চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। তবে বাস্তবতা হচ্ছেক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তবে এটি ঠিক, প্রাথমিক অবস্থায় ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়লে এই রোগের সঠিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব। সাধারণত দুর্বলতা, খাবারে অরুচি, বুক ধড়ফড় করা, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন সংক্রমণ বা জ্বর, গায়ে কালো কালো দাগ ও রক্তক্ষরণ, গায়ে ব্যথা, লিম্ফ গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, লিভার বড় হওয়া ইত্যাদি ব্লাড ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে।

জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. গোলাম রাব্বানি দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে আমরা ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে সক্ষম। তবে কিছু বিশেষায়িত পরীক্ষা আমরা ঢাকা কিংবা ভারত থেকে করিয়ে থাকি। আমাদের হেমাটোলজি ওয়ার্ডে দক্ষ চিকিৎসকও রয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছেপুরো চট্টগ্রামে ব্লাড ক্যান্সারের রোগীর তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। অপ্রতুল চিকিৎসকের কারণে সামর্থ্যবান রোগীরা ঢাকা কিংবা দেশের বাইরে যেতে বাধ্য হন। তবে সমস্যা হচ্ছে, গরীব রোগীরা চাইলেও আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন না। তাই ব্লাড ক্যান্সারের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য যদি সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করা যায়, তবে রোগীরা উপকৃত হবে। বিশেষ করে, সব সরকারি হাসপাতালে রোগীর আনুপাতিক হারে যদি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদায়ন করা হয়, তবে রোগীরাও আরো উন্নত সেবা পাবেন। একই সাথে উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজন করে সব পরীক্ষা নিরীক্ষার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ ব্লাড ক্যান্সারের রোগীদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা দিতে হয়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ বলেন, আমাদের ক্যান্সার হাসপাতালে সব ধরণের ক্যান্সারের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে উন্নতমানের রেডিওথেরাপি মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি এনেছি। বিত্তবানদের অনুদানের টাকায় গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘ইতেও আনারস, ইতেরে মার’
পরবর্তী নিবন্ধপ্রচারণা শেষ, ভোটের অপেক্ষা