চিকিৎসক, ওষুধ ও সরঞ্জাম না থাকায় কল্যাণ হচ্ছে না রোগীদের

ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | শনিবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ছোট কমলদহ বাজারে অবস্থিত ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থা খুবই নাজুক। এখানে আসেন না চিকিৎসক। মাতৃ ও শিশু সেবার জন্য ভিজিটর নিয়োগ থাকলেও নেই ওষুধ এবং সরঞ্জাম। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি থেকে রোগীদের কোনো ধরনের কল্যাণ না হওয়ায় এখানে আর কেউ তেমন আসেন না। তাই মৃতপ্রায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নিয়ে হতাশ এলাকাবাসী। উপজেলার ১৫নং ওয়াহেদপুর ও ১৪নং হাইতকান্দি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার দরিদ্র ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সরকারি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অন্যতম সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহেদপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ডাক্তার এবং লোকবল সংকটের কারণে এই প্রতিষ্ঠানটি এখন মৃতপ্রায়। ২১ আগস্ট সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালে ডাক্তার এবং সহকারীর রুমে তালা। নেই কোনো ফার্মাসিস্ট। রোগী বসার ওয়েটিং রুম ফাঁকা, রোগী শোয়ানোর চৌকি ধুলোবালিতে ভরপুর।

হাসপাতালের বাইরে ঘুরতে থাকা খাজুরিয়া গ্রামের সাবিনা আক্তার ( ৪২), বড় কমলদহের আবুল বাশার ( ৫০), নিজামপুরের গিয়াস উদ্দিন ( ৪২) বলেন, আমরা রোগী নিয়ে অনেকক্ষণ ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে থেকে ডাক্তার আসবেন না জানার পর চলে যাচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, এখানে নিয়মিত কোনো ডাক্তার আসেন না, দূর দুরান্ত থেকে অনেক রোগী এসে হতাশা নিয়ে চলে যান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এখানে একজন ডাক্তার, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন ঝাড়ুদার নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও কাগজেকলমে একজন ডাক্তার ছাড়া আর কোনো জনবল নিয়োগ নেই। নিয়োগপ্রাপ্ত ডাক্তারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়মিত ডিউটি করতে হয়। তারপরও সপ্তাহে ২/১ দিন ডাক্তার গিয়ে উক্ত সাব সেন্টারে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসেন। তিনি আরো জানান, জনবল সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

উক্ত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কিশোর কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং শিশুদের টীকা প্রদানের জন্য পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও এ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো সেবা প্রদানকারী নেই। এখানে সপ্তাহে তিন দিন কমরআলী সাব সেন্টার থেকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সীতা রানী দে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এখানে এসে সেবা প্রদান করে থাকেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমি সপ্তাহে তিনদিন গর্ভকালীন ও পরবর্তী সেবা, কিশোর কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, পরিবার পরিকল্পনার যাবতীয় সেবা এবং শূন্য থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের টীকা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। তবে বাস্তবপক্ষে এই প্রতিবেদক হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ পর্যবেক্ষনকালে কোনো সেবা গ্রহণকারীকে দেখা যায়নি। পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সুপারভাইজার ইয়াসির আকরাম সাকিব বলেন, এখানে নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো ভিজিটর এই সাব সেন্টারে নেই। কমরআলী সাব সেন্টার থেকে এসে সপ্তাহে তিন দিন এখানে ডিউটি করে থাকেন। তিনি আরো জানান, ১৩টি সাব সেন্টারের মধ্যে নিয়মিত নিয়োগপ্রাপ্ত ভিজিটর আছেন মাত্র ৬জন। আবার পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জামাদি নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। তবে নতুন অর্থ বছরে এ সংকট কাটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ : প্রতিক্রিয়াশীলতার নিরন্তর পালাবদল
পরবর্তী নিবন্ধব্লগার অভিজিৎ হত্যায় যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ফারাবী জামিনে মুক্ত