চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত : বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা

| রবিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:৪২ পূর্বাহ্ণ

চালের দাম বেড়েই চলেছে। দেশের বাজারে সীমাহীন ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। এ পরিস্থিতিতে মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি তুলে নিয়েছে সরকার। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কাস্টমস আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ৫৭ নং আইন) এর ধারা ২৫ এর উপধারা () এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শক্রমে জনস্বার্থে ওই আইনের প্রথম তপশিলভুক্ত পণ্যগুলোর মধ্যে সিদ্ধ চাল ও সিদ্ধ ছাড়া আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে আরোপণীয় সমুদয় কাস্টমস শুল্ক ও রেগুলেটরি শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে। এনবিআর আরও জানায়, এই প্রজ্ঞাপনের আওতায় রেয়াতি হারে চাল আমদানির আগে প্রত্যেক চালানের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে মনোনীত অন্যূন যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। এর আগে গত ২০ অক্টোবর চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, বিদ্যমান রেগুলেটরি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছিল এনবিআর। তবে গত ২৯ অক্টোবর বন্যায় চাল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে চাল আমদানিতে বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ককর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সুপারিশ করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার কবলে চালের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হওয়ার ফলে আসন্ন উৎপাদন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দেশে চাল সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে স্থানীয় উৎপাদক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। কেননা, গরিব মানুষের মোট আয়ের শতকরা ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় চাল কিনতে। চালের দাম কমলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে যাবে। এ কথা সত্যি, দারিদ্র্যসীমার বিষয়টি কোনো সময়েই স্থিতিশীল নয়। নানা কারণে এ সীমার হ্রাসবৃদ্ধি হয়। যেখানে চাল দৈনন্দিন খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে প্রধান উপাদান, সেখানে এর মূল্য বৃদ্ধি হওয়া মানেই দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, যা আশঙ্কাজনক। বাংলাদেশ এক জনবহুল দেশ। জনসংখ্যার দিক থেকে বলা হয় সমস্যাসঙ্কুল দেশ। আর মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম অবলম্বন খাদ্য। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বাধীনতাউত্তর ৫৩ বছরে যে হারে মানুষ বেড়েছে, সে হারে খাদ্য উৎপাদনও বেড়েছে। তা না হলে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের মুখের আহার যোগান দেওয়া সম্ভব হতো না। এর পরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমনঅতিবৃষ্টি, আগাম বন্যার কারণে ফলন বিপর্যয় হলে খাদ্য ঘাটতি হয়ে থাকে। আর খাদ্য ঘাটতি হলে বিদেশ থেকে সরকারিবেসরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানি করে তা সামাল দেওয়া হয়।

গবেষকদের মতে, চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানির প্রয়োজন হলে আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। না হয়, খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধানচাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। খোলাবাজারে কম দামে পর্যাপ্ত চাল বিক্রিও পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

চাল আমদানিতে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), তাতে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, এ সিদ্ধান্তে আমদানি বাড়বে। তাতে বাজারেও চালের দামের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর তাঁরা গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি বাজার তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে