২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষে ৩৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চার বছর মেয়াদী মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট স্কুল (ম্যাটস) কার্যক্রম বা কোর্স চালু করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত (চসিক) প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এন্ড ম্যাটস’। কোর্স শেষ করে এসব শিক্ষার্থী ৯মাস চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করে। এরপর তাদের আরো তিন মাসের ইন্টার্নশিপ করার জন্য বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ইন্টার্নশিপ শেষ পর্যায়ে হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল এ শিক্ষার্থীরা। কারণ, ম্যাটস কোর্স সম্পন্নকারীদের সংশ্লিষ্ট পেশা শুরু করার জন্য বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে প্রয়োজন হয় বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর স্বীকৃতি। যা ছিল না চসিকের প্রতিষ্ঠানটিতে। অবশেষে ম্যাটস কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তার অবসান হচ্ছে। বিএমডিসি স্বীকৃতি দিয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এন্ড ম্যাটস’কে। গতকাল রোববার প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের কাছে স্বীকৃতি জানিয়ে পত্র দিয়েছেন বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)। ম্যাটস কোর্স চালুর পরের শিক্ষাবর্ষ (২০১৬-২০১৭) থেকে এ পর্যন্ত প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। স্বীকৃতি পাওয়ার ফলে প্রতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দূর হলো। প্রসঙ্গত, চসিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলার কোথাও ম্যাটস কোর্স চালু নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ম্যাটস কোর্স সম্পন্নকারীরা সরকারিভাবে ‘সাব অ্যাসিসটেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ (স্যাকমো) পদে চাকুরির সুযোগ পান। পাশাপাশি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রাইভেট চেম্বারও করতে পারেন। দিতে পারেন ব্যবস্থাপত্রও। এছাড়া সরকার নীতিগতভাবে দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বহু আগেই। বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৮৬১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। ২০২২ সালের মধ্যে এর সংখ্যা ১৭ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে সরকারের। বিদ্যমান কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রশিক্ষিত জনবল না থাকায় নিয়োগ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। তাছাড়া চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচালিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও বহু মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টের পদ খালি রয়েছে। তাই চসিক থেকে চার বছর মেয়াদী ম্যাটস কোর্স সম্পন্নকারীদের সংশ্লিষ্ট খাতে দক্ষ জনবল হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এন্ড ম্যাটস’ এর অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিএমডিসি’র স্বীকৃতি আমাদের জন্য বিশাল পাওয়া। স্বীকৃতিপত্রে প্রতিষ্ঠানের নিচে বিদ্যমান কাঁচা বাজার সরিয়ে নেয়ার শর্ত দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, রোগ নিরুপণের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠিকে ন্যূনতম প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি ক্লিনিকে অনেক মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টের চাহিদা রয়েছে। এই সকল শূন্যপদ পূরণ করে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে দক্ষ জনবল সৃষ্টির জন্য আমরা ম্যাটস কোর্স চালু করেছিলাম। প্রথম বছর ৩৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করাই। এরপর প্রতি শিক্ষাবর্ষে সবকটি আসন পূরণ হয়েছে। চারবছরের কোর্স শেষে একবছরের ইর্ন্টানশিপ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। এর মধ্য দিয়ে তারা আরো বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরীর আলকরণ ওয়ার্ডস্থ ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায় চসিকের নিজস্ব শূন্য দশমিক ৬৭৮৪ একর ভূমিতে ২০০২ সালে গড়ে তোলা হয় ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এন্ড ম্যাটস’। ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ম্যাটস কোর্স চালুর জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল পাঠান এর অধ্যক্ষ। এতে ১০০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির প্রয়োজনীয় অনুমোদন চাওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুযারি কোর্স চালুর অনুমোদন পায়। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ম্যাটস ছাড়াও হেলথ টেকনোলজি সংক্রান্ত তিনটি ডিপ্লোমা কোর্স চালু আছে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে চার বছর মেয়াদী ‘বিএসসি ইন হেলথ টেকনোলজির অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে এটি বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হলো যেখানে একসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবগুলো র্কোস চালু আছে।