কোরবানির ঈদের ছুটির পর থেকে বাড়ছে চালের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরণের চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চার কারণে চালের বাজার বর্তমানে চড়া। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা সরকারকে চাল দেয়ার কারণে চালের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। আবার ধানের দামের বাড়ার অজুহাত এবং বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানি ধান–চাল মজুদ করার কারণেও দাম বাড়ছে। তবে বর্তমানে দেশে ধান–চালের কোনো সংকট নেই।
ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের মাঝামাঝি সময় পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বৃদ্ধি করেন। বিশেষ করে তখন তারা ধানের দাম বৃদ্ধিকে সহজ অজুহাত হিসেবে দাঁড় করান। এর পেছনে অন্যতম কারণে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিস্ক্রিয়তা। চালের মোকাম এবং পাইকারী বাজারে কোনো অভিযান চালানো হয় না। এ কারণে বাজারও লাগামহীন হয়ে উঠে। নগরীর চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে বিশেষ করে নাজিরশাইল সিদ্ধ, জিরাশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট আতপ, মিনিকেট আতপ, কাটারীভোগ আতপ চালের দাম বস্তাপ্রতি সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের আড়তদাররা জানান, বর্তমানে জিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় ৩৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭৫০ টাকায়। এছাড়া মিনিকেট সিদ্ধ ২৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯৫০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯৫০ টাকা, কাটারিভোগ সিদ্ধ ৩০০ টাকা বেড়ে গিয়ে ৪ হাজার ২০০ টাকা, কাটারিভোগ আতপ বস্তাপ্রতি ৪০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ৪০০ টাকা বেড়ে ৪ হাজার ১০০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ ২৫০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকা, বেতী আতপ ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা এবং মোটা সিদ্ধ ২০০ বস্তায় বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকায়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ধানের দাম বাড়ার কারণে মূলত চালের দাম বাড়ছে। অনেক কৃষক ধান মজুদ করে এই সময়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। এর ফলে দাম বাড়ছে। এমনিতে চালের দাম বাড়লে তখন সিন্ডিকেটের বিষয়ে নানা কথা উঠে আসে। আসলে আমাদের চাক্তাইয়ে কোনো সিন্ডিকেট নাই। এখানে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নাই। কারণ এখানে সবাই বাইরে থেকে চাল এনে বিক্রি করে।
জানতে চাইলে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, দেশের ধান চালের সংকট না থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে চালের বাজার উর্ধ্বমুখী রয়েছে। চালের মিল মালিকরা আমাদের জানিয়েছেন–ধানের দাম বেড়েছে, এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। তবে বর্তমানে চালের দাম বাড়ার কথা না। আসলে উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকদের শক্ত একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা প্রতি বছর এই সময়টাতে ধানের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বৃদ্ধি করেন। প্রশাসনেরও দৃশ্যমান কোনো অভিযান থাকে না। আমাদের চট্টগ্রামের পুরো চালের বাজার উত্তরাঞ্চলের চালের মোকামগুলোর উপর নির্ভরশীল।