চার্লি চ্যাপলিন – বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কৌতুক অভিনেতা। নির্বাক চলচ্চিত্র যুগে কেবল ইশারা আর অঙ্গভঙ্গি দিয়েই তিনি চলচ্চিত্র জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিলেন, পেয়েছিলেন বিপুল জনপ্রিয়তা।
চার্লি চ্যাপলিন মানেই চোখে ভেসে ওঠে ছিপছিপে একহারা গড়ন – পড়নে ঢলঢলে প্যান্ট, আটসাঁট কোট, মাথায় বড় কালো টুপি, পায়ে ঢিলে ডার্বি জুতো, ছোট গোঁফ আর হাতে একখানা ছড়ি – সব মিলিয়ে খেয়ালি, ভবঘুরে এক চরিত্র ‘ট্র্যাাস্প’। এই ট্র্যাম্প হয়ে ওঠার পেছনের ইতিহাস একটু অন্যরকম। চার্লির জন্ম ১৮৮৯ সালের ১৬ই এপ্রিল লন্ডনে। দারিদ্র্য ছিল পরিবারের নিত্যসঙ্গি। তাই অর্থ উপার্জনের জন্য চার্লি অভিনয়ের সাথে যুক্ত হন আট বছর বয়সে। তাঁর বয়স যখন সতেরো, তখন আমেরিকার ‘কি স্টোন মুভিজ’-এর পরিচালক ম্যাক সেনেট চ্যাপলিনকে আমেরিকায় নিয়ে আসেন। সেনেটের পরিচালনায় কৌতুক চরিত্র ‘দ্য লিটল ট্র্যাম্প’ হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন চ্যাপলিন। সেনেট চ্যাপলিনের কাজে এতই সন্তুষ্টি আর নির্ভরতা খুঁজে পান যে, তাঁর পরবর্তী ছবিগুলোর প্রযোজনা ও পরিচালনার ভার নিশ্চিন্তে চ্যাপলিনের ওপর ছেড়ে দেন। হাসির গল্পের মধ্যেও কিছু একটা অর্থ ফুটিয়ে তুলতে সচেষ্ট হন স্বাধীন চ্যাপলিন, যেন বলতে চান পেছনে ফেলে আসা জীবনের কষ্টের কথা। সমগ্র জীবনে তিনি আশিটিরও বেশি ছবির সাথে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সিটি লাইটস’, ‘মডার্ন টাইমস’, ‘দ্য ব্যাংক’, ‘পুলিশ’, ‘উওম্যান’, ‘দ্য ভ্যাগাবন্ড’, ‘দ্য গোল্ড রাশ’ ইত্যাদি। চ্যাপলিনের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র একটি রাজনৈতিক ব্যাঙ্গাত্মক ছবি – ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’। একাধারে কাহিনি রচনা, পরিচালনা, অভিনয় – চলচ্চিত্র জগতে এই ত্রয়ী রূপ চ্যাপলিনের মধ্যেই প্রথম দেখা যায়। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন বামপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। আর এ কারণে ১৯৫২ সালে চ্যাপলিনকে আমেরিকা ছাড়তে হয়েছিল। এরপর সুইজারল্যান্ডে তিনি স্থায়ী হন। অবশ্য ১৯৭২ সালে আরেকবার তিনি আমেরিকায় এসেছিলেন বিশেষ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের জন্য।
ব্রিটেনে তাঁকে ‘নাইট’ উপাধি দেওয়া হয়। এছাড়া ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে সংবর্ধনা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি তাঁর কর্মকৃতীর স্বীকৃতি। ১৯৭৭ সালের ২৫শে ডিসেম্বর চার্লি চ্যাপলিন প্রয়াত হন।