নগরীর খুলশীর একটি ফ্ল্যাটে ৫৯০ কোটি টাকা রয়েছে–এমন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পরিচয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার ১২ জনের মধ্যে চারজনের ফের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তারা হলো মো. ওয়াজেদ রাকিব, মো. হোসেন, মো. রোকন ও মহিউদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে তিন দিনের রিমান্ড শেষে এ চারজনসহ ১২ আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ।
আদালতের প্রসিকিউশন শাখা জানায়, তিন দিনের রিমান্ড শেষে ১২ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর মধ্য থেকে চারজনের ফের ৫ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত দুদিন করে চারজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি ৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ আটজন হলেন মো. ওসমান, আব্দুল সবুর, মো. রুবেল হোসেন, মো. ইয়াকুব আলী, মোজাহের আলম, মো. হারুন অর রশিদ, আবদুল মান্নান ও শওকত আকবর ইমন।
আদালত সূত্র জানায়, চারজন আসামির ফের রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনে বলা হয়, আসামিরা সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য। তাদের স্থায়ী ঠিকানা বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায়। নগরীতে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করে বিভিন্নজন বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত থাকলেও ডাকাতি করা তাদের নেশা। তারা দিনের বেলায় যে যার কাজকর্ম শেষে রাতের বেলায় মোবাইলে যোগাযোগ করে বিভিন্ন তারিখ ও সময় নগরীর বিভিন্ন নির্জন স্থানে একত্রিত হয় এবং তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করে ডাকাতি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জানুয়ারি খুলশীর ৩ নং রোডের সানমার রয়েল রিজ নামে একটি ভবনে থাকা যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর ফ্ল্যাটে ডাকাতি করতে যায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের সাথে আরো ছিল মানিক, ওয়াসিম, আলম ও সোর্স হোসেনসহ আটজন। তারা পলাতক রয়েছে। আবেদনে আরো বলা হয়, ঘটনার আগে সেনাবাহিনীর জনৈক সার্জেন্ট শওকত ও সেনা সদস্য আজমান এবং পলাতক আসামি আলম অন্য আসামিদের উক্ত ফ্ল্যাটে ডাকাতির পরিকল্পনা ও কর্মকৌশলসহ দিকনির্দেশনা প্রদান করে। পলাতক আসামি সার্জেন্ট শওকতের সাথে গ্রেপ্তার আসামি ওয়াজেদ রাকিব ও মো. রোকনের হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি ঘটনায় জব্দ করা ডিজিএফআইয়ের আইডি কার্ডের অনুরূপ ৬টি কার্ডের ছবি সার্জেন্ট শওকত গ্রেপ্তার ওয়াজেদ রাকিবের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে, যা আসামিদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে দৃশ্যমান হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের ভুয়া কার্ড প্রদান এবং কয়েকজনকে খেলনার পিস্তল দিয়ে অফিসার সাজানো হয়েছে। ঘটনার পূর্বে পলাতক এজাজারনামীয় আসামি আলম গ্রেপ্তার আসামিদের জব্দকৃত কভারসহ খেলনা পিস্তল, ডিজিএফআইয়ের ভুয়া আইডি কার্ড, ওয়াকিটকি ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম গ্রেপ্তার আসামিসহ পলাতক আসামিদের সরবরাহ করে। আসামিদের কাছে তথ্য ছিল, খুলশীর উক্ত ফ্ল্যাটে নগদ ৫৯০ কোটি অবৈধ আয়ের টাকা রয়েছে। মূলত এরই ভিত্তিতে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, খুলশীর ৩ নং রোডের উক্ত ভবনে থাকা যমুনা অয়েল কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারীর ফ্ল্যাটে মোট ২০ জন ডাকাতি করতে গিয়েছিল। খবর পেয়ে খুলশী থানা পুলিশ সেখানে হানা দেন এবং ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন আনসারী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।