‘আপনার বর্তমান পোস্টপেইড মিটারটি অত্র বিল প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে প্রিপেইড মিটার দ্বারা পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ করা হইল।’ গ্রাহকদের দেওয়া বিদ্যুৎ বিলে এই লেখাটি সিল মেরে পোস্টপেইড (বিলিং মিটার) মিটার পরিবর্তন করে প্রিপেইড করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। আর এসব প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের কিনতে হবে খোলা বাজার থেকে। বিলের সাথে নোটিশ দেয়ার পর পিডিবির ওই বিভাগের লাইনম্যানরাও মিটার পরিবর্তনের জন্য চুক্তি করছেন গ্রাহকদের সাথে। নোটিশটি ওই এলাকার অসংখ্য গ্রাহকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে ষোলশহর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএফএম নুরুদ্দীন বলেন, এটা তো ডিজিটাল যুগ। এনালগগুলো বাদ দিচ্ছি আমরা। এখন পিডিবির প্রকল্পে কোনো মিটার কেনা হচ্ছে না। আমরা দিলেও গ্রাহককে টাকা দিয়ে কিনে নিতে হবে। বাজার থেকে হলেও কিনে নিতে হবে।
১০ দিনের সময় বেঁধে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বলছি আর কী? না হলে গ্রাহক সময় নেবে। এটা গ্রাহকদের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে। এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর অসংখ্য গ্রাহক ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পত্রিকায় নাম প্রকাশ করা হলে হয়রানি হতে পারে-এমন বক্তব্য জানিয়ে ষোলশহর এলাকার এক গ্রাহক বলেন, আমার বাসায় বিল দেয়ার পর কাইয়ুম নামে এক ব্যক্তি ‘পিডিবির লোক’ পরিচয় দিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় মিটার পরিবর্তন করে দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কিছু গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার সংযোজন করে তাদের কাছ থেকে কিস্তিতে মিটারের মূল্য আদায় করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মহানগরীর অর্ধেক গ্রাহক প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন। আমাদের মতো আরো অর্ধেক গ্রাহক রয়েছেন তাদের এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
নগরীর আরো কয়েকটি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীদের সাথে কথা হয়। পিডিবির সরবরাহকৃত মিটারের চেয়ে বাজার থেকে সংগৃহীত মিটারের মূল্য নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পিডিবি থেকে টাইম ফ্রেম বেঁধে দিয়ে প্রিপেইড মিটার পরিবর্তন করার বিষয়ে পিডিবির কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ‘কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক সেবার লক্ষ্যে বর্তমান মিটারটি পরিবর্তন করে
প্রিপেইড মিটার স্থাপনের অনুরোধ করা হইল’ লিখে সিল দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাজারে পাঁচ হাজার ৩শ টাকা থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় মিটার পাওয়া যাচ্ছে। পিডিবির সরবরাহকৃত মিটারের দামও পাঁচ হাজার তিনশ টাকার মতো। আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, পিডিবির সরবরাহকৃত মিটারের দাম আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।
জানা যায়, সারা দেশে চুরিসহ বিদ্যুৎ ব্যবহারে নানা অনিয়ম চলে আসছিল। ভুতুড়ে বিল দেওয়া, মিটার রিডিং ছাড়াই বিল দেয়া, মিটার ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ চুরি, বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পিডিবির অসৎ কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে কমিয়ে বিল পরিশোধের কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হত। এসব অনিয়ম ঠেকাতে প্রি-পেমেন্ট মিটার সংযোজনের প্রকল্প নেয় সরকার। বর্তমানে মহানগরীতে পিডিবির প্রায় ৮ লাখ ৩১ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ লাখ প্রিপেইড মিটার সংযোজন করা হয়। গত দুই বছর ধরে প্রিপেইড মিটারের জন্য অবশিষ্ট ৪ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার পাওয়া নিয়ে হাহাকার চলছে।
পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু আজাদীকে বলেন, আমরা পোস্টপেইড থেকে গ্রাহকদের মিটারগুলো প্রিপেইডে রূপান্তর করছি। তবে সময় বেঁধে দিয়ে মিটার লাগানোর বিষয়ে পিডিবির পক্ষ থেকে গ্রাহকদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা আমাদের মিটারগুলো (প্রিপেইড) দিচ্ছি। গ্রাহকরাও বাজার থেকে সংগ্রহ করে লাগাচ্ছেন। এতে পিডিবির সিস্টেম লস কমে আসছে। গ্রাহকরাও সুবিধা পাচ্ছেন।