৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গত ২০ সেপ্টেম্বর সিএমপি চান্দগাঁও থানায় দায়ের করা হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩) হত্যা মামলায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল আরমান (২৮) কে সন্দিগ্ধ গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। যার চান্দগাঁও থানা মামলা নং-২৬।
২৯ অক্টোবর (মঙ্গলবার) তাকে আদালতে হাজির করা হলে চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, (মহানগর আদালত) এ আদেশ দেন। যে মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান আসামি, সে মামলায় কর্ণফুলীর সোহেল কারাগারে!
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার এসআই মো. আজহারুল ইসলাম।
সন্দিগ্ধ মো. সোহেল আরমান কে গতরাত ১০ টার দিকে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটার খোয়াজনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার আরমান কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটার খোয়াজনগর (৫ নম্বর ওয়ার্ড) কবির মেম্বার বাড়ির আব্দুল মোনাফের ছেলে।
এ খবর শোনে খোয়াজনগর এলাকার লোকজন জানান, সোহেল আরমান চান্দগাঁও হত্যা মামলার সাথে জড়িত ছিলেন না। কিভাবে তাকে কর্ণফুলী থেকে ধরে চান্দগাঁও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হলো। তাও তাদের বোধগম্য নয়। তবে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিতে গণমাধ্যমকর্মীরা অবিরাম চেষ্টা করছেন। যদিও এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না।
চান্দগাঁও থানার মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুনের পর সরকারী চাকুরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা আরোপ নিয়ে সারা দেশের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু করলে এই মামলার ১নং আসামি আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৪ই জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে রাজাকারের বাচ্চা সম্বোধন করলে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেয়।
বিগত ১৫ জুলাই ২নং আসামী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রদের দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট মর্মে উষ্কানী দেয়। তারই ধারাবাহিকতার এজাহার নামীয় ৩-৪০ নং আসামীগণ সহ অন্যান্য আসামীরা স্ব স্ব অবস্থানে থেকে আন্দোলনরত নিরীহ ছাত্রদের নিধনের উদ্দেশ্যে উস্কানীমূলক বক্তব্যসহ নির্দেশনা প্রদান করে এবং অর্থায়ন করে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ সহ সন্ত্রাসী বাহিনীকে উস্কে দিলে তারা বিভিন্ন প্রাণঘাতী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যৌথভাবে গত ১৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার গেইটের সামনে মেইন রোডের উপর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত হামলা করে গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ সহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।
এতে মামলার বাদী আজিজুল হকের ছোট ভাইয়ের বন্ধু হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩) সহ অনেক শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা গুরুতর জখম হয়। পরবর্তীতে ভিকটিম হৃদয় চন্দ্ৰ তরুয়া (২৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় মৃত্যুবরণ করেন। এই মামলায় সন্দিগ্ধ হিসেবে আরমান কে কর্ণফুলী থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেন।
এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ রেহেনা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক চসিক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী, সাবেক এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ ২০৬ জন।
এ বিষয়ে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘কর্ণফুলী পুলিশ গ্রেপ্তার করে যে সোহেল কে আনা হয়েছে তাকে সকালেই হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩) হত্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন কে একাধিকবার ফোন করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।