চাটগাঁর মুখপত্র দৈনিক আজাদীর সাথে আমার সম্পর্ক আত্মীক

ফারুক-ই-আজম, বীরপ্রতীক | বৃহস্পতিবার , ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১১:২০ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী ১৯৬০ সাল থেকে চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের কথা বলে আসছে। চট্টগ্রামের কথা বলার জন্যই মূলতঃ চট্টগ্রামের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সাহেব পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে শাসকদের নানা শোষণবঞ্চনা, বিমাতাসুলভ আচরণ তথা চট্টগ্রামের প্রতি বৈষম্যের ঘোর বিরোধিতা করতো দৈনিক আজাদী। শাসকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চট্টগ্রামের অভাব অভিযোগ তুলে ধরার ক্ষেত্রেও পত্রিকাটি চট্টগ্রামের অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করেছিল।

আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক খালেদের কথা। একই সাথে সাবেক বার্তা সম্পাদক সাধন কুমার ধর, সাবেক চিফ রিপোর্টার ওবায়দুল হক, সাবেক শিফট ইনচার্জ বিমলেন্দু বড়ুয়া, মাহাবুব ভাইসহ অনেকের কথা আমার মনে পড়ছে। বহু নিষ্ঠাবান ও বরেণ্য সাংবাদিক দৈনিক আজাদীর মাধ্যমে সমাজে আলো ছড়িয়েছেন, মানুষের জন্য কাজ করেছেন। যাঁদেরকে আজো সাংবাদিকতার প্রতিকৃতরূপে মানুষ শ্রদ্ধা জানায়। তাদের মেধা মনন এবং কলম দিয়ে যেভাবে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য সেবা দিয়েছেন তা অতুলনীয়। দৈনিক আজাদীর দুর্দান্ত সব কলাম লেখকের কথাও আমার মনে পড়ছে। কী অসাধারণ জ্ঞানগর্ভ সব কলাম দৈনিক আজাদী দিনের পর দিন ছাপিয়ে চলেছে।

শুধু চট্টগ্রামের একজন বাসিন্দা বা পাঠক হিসেবই নয়, দৈনিক আজাদীর সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কটাও অনেক মধুর। আমার অতি আপনজন ‘মালেক ভাই’ (এম এ মালেক) এই পত্রিকার সম্পাদক। একজন নিখাদ ভদ্রলোক এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ হিসেবে তিনি নিজের একটি আলাদা ইমেজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। দেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের সামাজিক ব্যবসা ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রেও দৈনিক আজাদী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। এম এ মালেক নিজেই আমাদের সামাজিক ব্যবসা আন্দোলনের একজন প্রথম সারির সৈনিক। আমাদের বহু কার্যক্রমে তিনি সামনের কাতারে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। সামাজিক ব্যবসা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘মালেক ভাই’র সাথে আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরেছি। দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার, আমার ছোটভাই তুল্য সাংবাদিক হাসান আকবরও আমাদের সাথে পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরেছেন। আমাদের সামাজিক ব্যবসা সম্মেলনসহ নানা বিষয়ের সংবাদ দৈনিক আজাদীতে গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করা হতো। লেখা হয়েছে অসংখ্য প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি। দৈনিক আজাদী আমার ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন সাংগঠনিক খবরগুলো যেভাবে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছে তা ভুলবার নয়।

দৈনিক আজাদী গত ৬৪ বছর ধরে মানুষের অন্তরে বসবাস করছে। মফস্বল শহর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের এতো দীর্ঘসময় এমন জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে থাকা সত্যিকার অর্থে বিস্ময়। আজো চট্টগ্রামের মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা দখল করে রয়েছে দৈনিক আজাদী। আর এটুকু সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সৎ সাংবাদিকতার কারণে। যদি সাংবাদিকতার নীতিনৈতিকতা এবং আদর্শ যথাযথভাবে অনুসরণ না করতো তাহলে আরো অনেক পত্রিকার মতো দৈনিক আজাদীও কালের গহ্‌বরে হারিয়ে যেতো। আমি চট্টগ্রামের আরো লাখো মানুষের মতো দৈনিক আজাদীর এই জয়যাত্রার একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত।

দৈনিক আজাদী আজ ৬৫ বছরে পদার্পণ করছে। এটি বিশ্বের যে কোনো পত্রিকার জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। দেশের প্রাচীনতম একটি সংবাদপত্র হলেও দৈনিক আজাদী সবসময়ই আধুনিক সাংবাদিকতায় বিশ্বাসী। আধুনিকতার ধারক এবং বাহক। পাঠকের প্রয়োজনে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারায় দৈনিক আজাদী সব সময়ের পাঠকদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিতে পেরেছে। আমার বাবা যেমন এই পত্রিকা পড়তেন, আমিও পড়ি একই সাথে আমার সন্তানেরাও এই পত্রিকা পড়ে। এভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে নিজেদের সরব অস্থিত্ব ধরে রাখা আসলেই একটি কঠিন ব্যাপার। আর এই কঠিন কাজটিই দৈনিক আজাদী দক্ষতার সাথে করে চলেছে। দৈনিক আজাদীর এই জয়যাত্রা যুগের পর যুগ যাতে অব্যাহত থাকে আজকের এই শুভদিনে আমি অন্তর থেকে সেই প্রার্থনাই করছি।

লেখক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদৈনিক আজাদী : নিরন্তর ভোরের প্রত্যাশায় অবিচল
পরবর্তী নিবন্ধদৈনিক আজাদী ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস