আসছে বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে বরাবরের মতোই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। বর্ষায় নদী-খাল পানিতে টইটম্বুর থাকে। তার সাথে যুক্ত হয় জোয়ারের পানি। দেখা যায়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল। তবে গত প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণাধীন জোয়ারের পানি প্রতিরোধক স্লুইচগেটের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় দোকান-গুদামের প্রবেশমুখও উঁচু করেন। কিন্তু প্রতি বছরই বাড়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা। তবে শেষ পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হয়নি। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চাক্তাই ও রাজখালী খালে জোয়ারের পানি প্রতিরোধে স্লুইচগেট নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করে। উদ্বোধনের প্রায় তিন বছরেও কাজের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। উল্টো স্লুইচগেট নির্মাণের জন্য কর্ণফুলীর মোহনায় চাক্তাই খাল ও রাজাখালী খালের একাংশ ভরাট করা হয়েছে। আগামী বর্ষার আগে ভরাট করা অংশ কেটে দেওয়া না হলে চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে-এমন আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এক সময় চাক্তাই খাল দিয়ে নৌপথে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কালের পরিক্রমায় সেই চাক্তাই খাল চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদীর মতো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। এছাড়া খালের দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পলি জমে খাল ভরাট হয়ে যাওয়া এবং তলা পাকা করার কারণে স্থায়ীভাবে নাব্যতা হারিয়েছে চাক্তাই খাল। ফলে নৌ-বাণিজ্য বর্তমানে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। অপরদিকে স্লুইচগেট নির্মাণের জন্য খালের একাংশ ভরাট করার কারণে ব্যাহত হচ্ছে নৌ পথে পণ্য পরিবহন। বাধ্য হয়ে চাক্তাই মোহনা পেরিয়ে পণ্য লোড, আনলোড করতে হয়। এতে পণ্য পরিবহনে খরচও বেড়ে গেছে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতা নিয়ে আতঙ্কে থাকে। গত কিছুদিন আগে অল্প বৃষ্টিতে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিচু এলাকাতে পানি উঠে যায়। আমরা জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে অনেক বছর ধরে ভুগছি। গত তিন বছর আগে সিডিএ স্লুইচগেট নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ভেবেছিলাম এবার হয়ত মুক্তি মিলবে। কিন্তু উদ্বোধন করার পর কাজ শুরু করতেই পেরিয়ে যায় এক বছর। বর্তমানে যা কাজ চলছে তাও ধীরগতিতে। অন্যদিকে চাক্তাই খালের দুই পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের মাধ্যমে খাল সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন আজাদীকে বলেন, প্রতি বছরই বাড়ছে জোয়ারের পানির উচ্চতা। জোয়ারের পানি ঠেকাতে ব্যবসায়ীরা দোকান ও গুদামের প্রবেশমুখ ও তলা উঁচু করেন। তারপরও ভারী বৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানির ধাক্কায় দোকান গুদামে পানি প্রবেশ করে ভাসে পেঁয়াজ-রসুনসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। জোয়ারের পানি থেকে মুক্তি পেতে তাই দ্রুত স্লুইচগেটের নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। লকডাউনের কারণে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আপনারা জানেন, গত ২০১৭ সালের জুন-জুলাইয়ে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ব্যবসায়ীরা তিনশত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এখন থেকে সতর্ক না হলে আবারও একই ধরনের ক্ষতির মুখে আশঙ্কা রয়েছে।
চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আহসান খালেদ বলেন, স্লুইচগেটের কাজের জন্য চাক্তাই খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে খালের পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী বর্ষার আগে এসব বাঁধ কেটে না দিলে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতা আরো প্রকট হতে পারে। কারণ নগরীর বিভিন্ন এলাকার পানি নর্দমা পানি বিভিন্নভাবে চাক্তাই খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে।