সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ এবং অবসরের বয়স ৬৫ বছর করতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠনটি আগেই সরকারের কাছে এই দাবি বা প্রস্তাব রেখেছিল, যেটি এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হল। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বুধবার যুগ্ম সচিব মো. সাজজাদুল হাসানের সই করা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখা থেকে চিঠিটি পাঠানোর তথ্য জানা গেছে। চাকরিতে প্রবেশের ন্যূনতম বয়স ৩৫ বছর করার দাবি আওয়ামী লীগ সরকার নাকচ করে দিলেও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষিত তরুণ–তরুণীদের এই বিষয়টি নিয়ে এবার প্রশাসনে সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ভাষ্য–এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি; যে প্রস্তাবটি জমা পড়েছিল, সেটি শুধু জনপ্রশাসনে পাঠানো হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর এবং অবসরের সীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে পাওয়া চিঠি (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে) পাঠানো হল। বর্ণিত বিষয়ের সঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিধির সম্পৃক্ততা থাকায় সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাধারণ অধিশাখার যুগ্মসচিব মো. সাজজাদুল হাসান বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার কাজটি আমাদের না, এটা মূলত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আমরা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্টেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাওয়া চিঠি জনপ্রশাসনে পাঠিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত নিবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২০১২ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন চলে আসছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদও এই দাবি তুলে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে অনেকবার। তবে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের সময়ে এই দাবি মানেনি। গত মে মাসে এই দাবি নিয়ে শিক্ষিত তরুণরা আবার রাস্তায় নামলে বিষয়টি নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে প্রতিক্রিয়া আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা হলে ‘বিপর্যয় ঘটে যাবে’ বলে সতর্ক করে ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই বয়সে চাকরি পেলে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে যোগ দিতেই তাদের ৩৭ বছর পার হয়ে যাবে। এই যুক্তিতে আন্দোলনকারীদের দাবি নাকচ করেছিলেন শেখ হাসিনা। ৫ অগাস্ট প্রবল গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ক্ষমতায় বসে অন্তর্বর্তী সরকার। ‘বৈষম্যের দিন বদলের ডাক’ ওঠায় আনন্দোলনকারীরা আবার রাস্তায় নামে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার প্রস্তাবের চিঠি জনপ্রশাসনে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বর্তমানে কোটা ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর এবং অবসরের ৫৯ বছর। অবশ্য কোটা ব্যবস্থায় বয়সের হেরফের রয়েছে। কোটার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে কোটার বয়স নিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসে কিনা, তা নিয়ে এখনও কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি।