পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা সীমাহীন। মানুষের মন নৃত্য নতুন প্রাপ্তির দিকে ধেয়ে চলে। আমাদের চাওয়া–পাওয়ার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। অপরিসীম চাওয়ার মাঝে আমরা যা পায় তাতে আমরা তৃপ্ত হই না বরং সাধ জাগে আরও নতুন কিছুর বাসনা। তাই আমরা মানুষ জাতি সৃষ্টির প্রথম থেকেই অতৃপ্ত। ফলে আমরা যা পায় তার মোহ কেটে গেলেই নতুন আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে ওঠে। আমরা যখন যা চায় তা পাওয়ার পর মনে হয় এটি ভুল করে চেয়েছিলাম। হয়তোবা এটিই প্রত্যেক মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মনে হয় এর চেয়েও ভালো কিছু হতে পারত, পাওয়া যেত। এ অতৃপ্ত মন নিয়েই পৃথিবীতে আমরা মানুষরা দুঃখ ও হাহাকারের মধ্যে চলেছি। আমাদের জীবনে চলার পথে অসংখ্য চাওয়া–পাওয়া এসে ভিড় করে। এ চাওয়া–পাওয়ার মাঝে যেগুলো চাওয়ার সাথে মেলে না, সেগুলো মনে অতৃপ্তি সৃষ্টি করে। আমরা অল্পে তুষ্ট হতে পারি না বলেই আরো পাওয়ার আধিক্য আমাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে।
আরও চাই, আরও চাই–এ মনোভাব পরিহার করা উচিত। সত্যিকার অর্থে জীবনে প্রকৃত সুখ লাভ করতে হলে মনে অতৃপ্তি বা অধিক প্রাপ্তির লোভ ত্যাগ করে যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীতে ভালোমন্দ, সুখ–দুঃখ আলো–আঁধার জন্ম–মৃত্যু এ সমস্তই পরস্পর বিপরীতধর্মী হলেও এগুলো একে অপরের পরিপূরক। জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত বলেই জীবন যেন অমূল্য রত্ন। পৃথিবীতে মৃত্যুর উপস্থিতি না থাকলে জীবন হতো মূল্যহীন। নিরবচ্ছিন্ন সমস্ত কিছুর অস্তিত্বই মূল্যহীন। ধ্বংসের ভয় আছে বলেই আমরা সৃষ্টিকে আখড়াই, ভালোবাসি। আমাদের জীবনে সুখের অস্তিত্ব আছে বলেই আমরা দুঃখকে হাসিমুখে বরণ করে নিই। আর দুঃখের অস্তিত্ব আছে বলেই সুখের বৃন্তে বসবাস করার অনন্ত প্রচেষ্টা আমাদের। পৃথিবীতে অন্ধকার আছে বলেই আলোর অস্তিত্ব এতটা গৌরবদীপ্ত। আমাদের জীবনে চাওয়া–পাওয়ার পূর্ণতা–অপূর্ণতায় চলার পথকে করে তোলে বৈচিত্র্যময়। আমাদের চাওয়া–পাওয়ার দ্বন্দ্ব অবসান করতে পারলেই আমরা খুঁজে পাবো জীবনের প্রকৃত সুখ, অনাবিল শান্তি।