বৃক্ষ নয়, ফলেই পরিচয়। আর এই বৃক্ষেরই মতন মানুষের জীবন। চামড়ার সৌন্দর্য নয়, মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্যক্তিত্ব বা তার গুণ। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিত্ববান মানুষ সকলের কাছে শ্রদ্ধার পাত্রও বটে। তবে, ব্যক্তিত্ব গঠন সহজ বিষয় নয়। আবেগ এবং চিন্তা সামঞ্জস্যতার মাধ্যমে এই পরশ পাথর অর্জন করতে হয়। এর জন্য দরকার পড়ে কিছু কৌশলের, যার বদৌলতে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রস্ফুটিত হবে অনেক বেশি। সঠিক পোশাক নির্বাচন করুন ব্যক্তিত্ব অনেকাংশেই পোশাকের ওপরই নির্ভর করে। আজেবাজে পোশাক পরিধানে একদিকে যেমন আপনাকে দৃষ্টিকটু দেখায় অন্যদিকে আপনার ব্যক্তিত্বও ক্ষুণ্ন হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব দেহের গড়ন ও বয়সের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরিধান করবেন। এক্ষেত্রে অফিস থেকে শুরু করে বিয়েবাড়ি পর্যন্ত কোনও জায়গায় গেলে কী ধরনের পোশাক পরিধান করা উচিত তা অবশ্যই আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। আর মানানসই শালীন পোশাকে আপনার রুচিবোধের পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে সবচেয়ে বেশি। সামাজিকতা বাড়িয়ে তুলুন, সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলুন। ইতিবাচক চিন্তা–ভাবনা করুন যে কোনও কঠিন কিংবা দুঃসাধ্য কাজেও সফলতা আনে এই ইতিবাচক চিন্তাভাবনা। মানুষের জীবনে তাই সফল হতে এটি বেশি দরকারি। কেননা তা ব্যক্তিত্বকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলে। অন্যদিকে নেতিবাচক চিন্তার মানুষ সারাক্ষণই হতাশা, দুঃখ ও বিষণ্নতায় ভোগে যা ব্যক্তিত্বকে বেশি মাত্রায় ক্ষুণ্ন করে। তাই ব্যক্তিত্ববান হতে চাইলে সকল পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক চিন্তা করুন। সুন্দর বাচনভঙ্গিতে কথা বলুন সুন্দর বাচনভঙ্গির মাধ্যমেই আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে সবচেয়ে বেশি। আমরা কোনও কিছু করার আগে নিজেদের মনে মনে একটা ছক এঁকে নেই। কী করব? কীভাবে করব? কোথায় করব? কবে করব? এসব ভেবে নিয়েই কিন্তু একটা কাজ শুরু করি। একটা কাজ সুন্দরভাবে শুরু করে শেষ করবো এই বিশ্বাসটা আমাদের মনের মধ্যে থাকে বলেই আমরা কাজটা শুরু ও শেষ করতে পারি। আমাদের নিজেদের প্রতি এই বিশ্বাসের নামই হলো আত্মবিশ্বাস। ‘আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সবার আগে নিজেকে বিশ্বাস করতে হবে। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মুখস্থ বিদ্যায় নয়, নিজের ক্রিয়েটিভিটি বাড়াতে হবে। বাধা অতিক্রম করতে মনোবল শক্ত রাখতে হবে। তবেই সফলতা আসবে। সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’ কবিতার শেষ ছত্রে -‘বিশ্ব–জোড়া পাঠশালা মোর,/সবার আমি ছাত্র,/নানান ভাবে নতুন জিনিস, /শিখছি দিবারাত্র;/এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়/পাঠ্য যে–সব পাতায় পাতায়,/শিখছি সে–সব কৌতূহলে/সন্দেহ নাই মাত্র।’ আত্মবিশ্বাসের চাবিকাঠি হচ্ছে প্রস্তুতি। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি নিলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ও বড়ো পর্যায়ের সফলতা অর্জন করতে হলে, বড়ো কাজকে বড়ো পরিকল্পনাকে ভেঙে ছোট ছোট করতে হবে। তারপর ছোট ছোট কাজে সাফল্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। ছোট কাজে সফল হওয়া সহজ। এভাবে ছোট ছোট সফলতা মিলে বড়ো সফলতা তৈরি করে।
আত্মবিশ্বাস ও সাফল্য এই দুইটি একে অপরেরে সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ব্যাক্তি জীবনে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে সেখানে ব্যর্থতা, হতাশা, না পাওয়ার বেদনা ফুটে ওঠে। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষের কাছে স্বপ্ন, সাফল্য ও উন্নতি এসব যেন সোনার হরিণ। নিজের উপর বিশ্বাস থেকেই আত্মবিশ্বাসের জন্ম হয়। আত্মবিশ্বাস মানুষকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তোলে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে সাহায্য করে।আর একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষই পারেন তার কর্মের মাধ্যমে নিজেকে সফলতার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যেতে। জীবনে সফল হতে চাইলে পরিশ্রম মেধার সাথে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করা মানেই হলো অর্ধেক কাজ শেষ করে ফেলা। আত্মবিশ্বাস মানে নিজেকে চেনা।
নিজের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা রাখা। হীনম্মন্যতা দূর করা। দৈনন্দিন ও প্রত্যাহিক জীবনে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে নিজেকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আত্মবিশ্বাস বাড়ান মানুষের জীবনে সফলতার চাবিকাঠিই হলো আত্মবিশ্বাস।
লেখক : কবি–গল্পকার